তানভীর ও জেসমিনসহ ৯ জনের যাবজ্জীবন

রায় শুনে আদালত থেকে পালালেন দণ্ডিত আসামি

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ২০ মার্চ, ২০২৪ at ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ

অস্তিত্বহীন কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তানভীর মাহমুদ এবং তার স্ত্রী ও কোম্পানির চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এক যুগ আগে দুদকের দায়ের করা এ মামলার বাকি আট আসামিকে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড। ঢাকার প্রথম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আবুল কাশেম গতকাল মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের ঘটনায় ২০১২ সালে হলমার্ক গ্রুপের মালিক, কর্মকর্তা এবং সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা হয়। এ মামলা তারই একটি। ২৪৮ পৃষ্ঠার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, মামলাটির ঘটনা ব্যাংকিং ইতিহাসে এক বিস্ময়কর ঘটনা। যে অপরাধীরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলা মনে করে, তাদের মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজা হওয়া উচিত মর্মে আদালত মনে করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন। এমতাবস্থায় অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো। খবর বিডিনিউজের।

রায়ে তানভীর ও জেসমিনকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ৪২০ ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাদের।

তানভীরের ভায়রা হলমার্কের জেনারেল ম্যানেজার তুষার আহমেদ, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক এবং টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসানকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর ৪২০ ও ১০৯ ধারায় তাদের সাত বছর করে কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত।

বাকি আসামিদের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ডিএমডি মাইনুল হক, ডিজিএম মো. সফিজউদ্দিন আহমেদ, সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার বর্তমান জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জিএম মীর মহিদুর রহমান, এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান, জিএম ননী গোপাল নাথ ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবিরকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর ৪২০ ও ১০৯ ধারায় তাদের সাত বছর করে কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এছাড়া সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকারকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ ধারায় ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ৪২০ ও ১০৯ ধারায় তাকে দেওয়া হয়েছে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড।

আসামিদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম, মতিন, হুমায়ুন, ননী গোপাল, তসলিম, সাইফুল হাসান, মেরি ও জাকারিয়া পলাতক। জামাল উদ্দিন ও আলতাফ ছিলেন জামিনে। তানভীর, জেসমিন, তুষারসহ বাকি আটজন কারাগারে ছিলেন।

অস্তিত্বহীন ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের নামে প্রায় ৫২৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে দুদক অভিযোগপত্র দিলে ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত১ এ বদলির আদেশ দেন মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১২ মার্চ আলোচিত এ মামলা রায়ের জন্য ১৯ মার্চ দিন রাখে আদালত।

দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ সালাম জানান, এর আগে ৫ ও ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে হলমার্ক কেলেঙ্কারির কয়েকটি মামলার রায় হয়েছে, তবে সেসব মামলায় তানভীর মাহমুদ বা জেসমিন ইসলাম আসামি ছিলেন না।

রায় শুনে দণ্ডিত আসামির চম্পট : হলমার্ক কেলেঙ্কারির মামলায় সাজার রায় শুনে আদালত থেকে পালিয়ে গেছেন দণ্ডিত এক আসামি। মো. জামাল উদ্দিন সরকার নামে ওই ব্যক্তি সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় দুই ধারায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং সাত লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে রায়ে।

ঢাকার প্রথম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আবুল কাশেম গতকাল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। জামিনে থাকা আসামি মো. জামাল উদ্দিন সরকার এদিন রায় শুনতে আদালতে হাজির হন। ওকালতনামায় স্বাক্ষরও করেন। কিন্তু সাজার রায় শোনার পরে কোনো এক ফাঁকে তিনি আদালত থেকে বেরিয়ে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামাল উদ্দিনের আইনজীবী হারুন অর রশিদ বলেন, রায় ঘোষণার সময়ও তিনি আদালতে ছিলেন। রায় ঘোষণার পর পিছনে তাকিয়ে দেখি তিনি নেই।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী রাজীব ঘোষ বলেন, রায় ঘোষণা শেষে আসামিকে খুঁজতে গিয়ে দেখি, তিনি নেই। পরে আদালত জামাল উদ্দিনের জামিন বাতিল করে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকারে তুলে কিশোরীকে ধর্ষণ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রশাসনিক কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবো