তরুণীদের পছন্দ গাউন ও সারারা গারারা

এবারও বিদেশি পণ্যের ছড়াছড়ি, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনার অভিযোগ

জাহেদুল কবির | বুধবার , ১২ মার্চ, ২০২৫ at ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ

ঈদের বাজারে প্রতি বছরের মতো এবারও রয়েছে বিদেশি পণ্যের ছড়াছড়ি। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে শাড়ি, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, পাঞ্জাবি এবং বিভিন্ন কসমেটিকস জাতীয় পণ্য। বিশেষ করে বাজারে ভারত, পাকিস্তান ও চীনের পোশাকের আধিক্য বেশি। এসব পোশাকের চাকচিক্যের কারণে তরুণীরাও বিভিন্ন শোরুমে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তাই সুযোগ বুঝে বিক্রেতারা পোশাকের দ্বিগুণ তিন গুণ দাম হাঁকেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশি পণ্যের একটি বড় অংশ আসে কর ফাঁকি দিয়ে। বিশেষ করে নগরীর বিভিন্ন মার্কেটে ভারতীয় যে শাড়ি দেখা যায়, তার অধিকাংশই আসে অবৈধ পথে। কম দামে এসব পণ্য কিনে দেশের বাজারে বেশি দামে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। অবৈধ পথে আসার কারণে সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

গতকাল নগরীর টেরীবাজার, রেয়াজুদ্দিন বাজার, আমিন সেন্টার, সেন্ট্রাল প্লাজা, ইউনেস্কো সিটি সেন্টার, শপিং কমপ্লেক্স, আফমি প্লাজা, বালি আর্কেড, মিমি সুপার মার্কেট, ফিনলে স্কয়ার, স্যানমার ওশান সিটি, ফিনলে সাউথ সিটি ও নিউ মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে তরুণীরা সারারা, গারারা, গাউন, লেহেঙ্গা ও জর্জেট থ্রি পিসের জামাগুলো খুঁটিয়ে খুুঁটিয়ে দেখছেন। পছন্দ হলে এসব জামা কিনে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন। অবশ্য মধ্যবয়স্ক নারীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে শাড়ি।

নগরীর ফিনলে স্কয়ারে আসা লালখান বাজার এলাকার বাসিন্দা গৃহিনী তাহমিনা সুরাইয়া বলেন, বাঙালি নারীদের জন্য শাড়ি সব সময় সেরা পোশাক। তবে আমার মতে, ভারতীয় শাড়ির মধ্যে চাকচিক্য বেশি। এছাড়া দামও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে। তাই অনেক নারী ভারতীয় শাড়ি পছন্দ করেন।

বিদেশি পোশাক পছন্দের কারণ জানতে চাইলে বেসরকারি চাকরিজীবী আদিবা সুলতানা বলেন, দেশীয় কাপড়ের গুণগত মান এখনো ভারত ও পাকিস্তানের পোশাকের পর্যায়ে যায়নি। আমরা দেশীয় পোশাক অবশ্যই কিনব; এক্ষেত্রে দেশের ফ্যাশন হাউসের উদ্যোক্তাদের মানুষের চাহিদা বুঝে পোশাক তৈরি করতে হবে। মানুষ দিন দিন আধুনিক হচ্ছে। তারা গর্জিয়াস পোশাক বেশি পছন্দ করছেন। অধিকাংশ ফ্যাশন হাউসের জামাগুলো আবার ইউনিক ডিজাইনের না। তাই ক্রেতারা বিদেশি পোশাক কেনার দিকে ঝুঁকছেন।

দেশীয় উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশের ঈদবাজারে বিদেশি পোশাকের জয়জয়কার। এসব পোশাকের বেশিরভাগ আসে অবৈধ পথে। অর্থাৎ শুল্ক ফাঁকি দিয়ে। তাই একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অপরদিকে মার খাচ্ছে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো। আমরা যারা উদ্যোক্তা, সরকারকে অবশ্যই আমাদের কথা চিন্তা করতে হবে। বিদেশি পোশাকের সহজলভ্যতা দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য অশনিসংকেত।

মার্কেটে আসা কয়েকজন তরুণী জানান, প্রথমে আমাদের দেশের মানুষের মন মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। আমরা যদি বিদেশি পণ্য কম কিনি তাহলে ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য আমদানি করতে উৎসাহিত হবেন না। এসব বিদেশি পণ্যের অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে সরকারকেও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ এভাবে বিদেশি পোশাকের আগ্রাসন চলতে থাকলে দেশীয় উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান আজাদীকে বলেন, আমাদের মার্কেটে ভারত, পাকিস্তান ও চীনের পোশাক রয়েছে। এখানে সব পোশাক বৈধভাবে আমদানি করা।

তামাকুমণ্ডি লেইন বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক আজাদীকে বলেন, ক্রেতাদের রুচি ও চাহিদা বুঝে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে হয়। ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায় দেশীয় পোশাকের বাইরে ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে পোশাক আমদানি করে থাকেন। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে এ বছর পোশাকের দামও তুলনামূলক কিছুটা বেশি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবান্দরবানে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণ, সড়ক নির্মাণ শ্রমিক গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধরাঙামাটিতে প্রসবের সময় মা হাতির মৃত্যু