তদন্ত ছাড়া চিকিৎসক গ্রেপ্তার, বিএমডিসির পদক্ষেপ চায় বিএমএ

| বুধবার , ২১ জুন, ২০২৩ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়া চিকিৎসকদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ মেডিকেল আন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। খবর বিডিনিউজের।

ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে এক প্রসূতির চিকিৎসায় অবহেলার কারণে মৃত্যুর অভিযোগে দুই চিকিৎসক গ্রেপ্তার হওয়ার পরই এমন পেশাজীবী চিকিৎসকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এমন চিঠি এল। অভিযোগের তদন্ত ছাড়া গ্রেপ্তার ও হয়রানিতে চিকিৎসকরা সংক্ষুদ্ধ ও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে বলে এতে বলা হয়েছে। সংগঠনটি কোনো চিকিৎসকের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগেই চিকিৎসকদের হয়রানি না করতে দেশে চিকিৎসক ও চিকিৎসা পেশার তদারকি সংস্থা বিএমডিসিকে পদক্ষেপ নিতে বলেছে।

ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে গত রোববার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কুমিল্লার তরুণী মাহবুবা আক্তার আঁখি। যিনি স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে ৯ জুন ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে এসেছিলেন। এ ঘটনায় করা মামলায় বৃহস্পতিবার ডা. সংযুক্তা সাহার দুই সহযোগী ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহাকে গ্রেপ্তার করে ধানমণ্ডি থানা পুলিশ। ওইদিনই তাদের কারাগারে পাঠায় আদালত। এ ঘটনার পর গত সোমবার বিএমএর সহ সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলমের স্বাক্ষরে বিএমডিসিতে ওই চিঠি পাঠানো হয়। এতে বিনা তদন্তে শুধু রোগীর স্বজনদের অভিযোগ এবং গণমাধ্যমের অপপ্রচারের ভিত্তিতে চিকিৎসকদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, রোগীর স্বজনদের অভিযোগ ও গণমাধ্যমের অপপ্রচারের ভিত্তিতে চিকিৎসকদের প্রায়ই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সম্প্রতি সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুইজন চিকিৎসকসহ সারাদেশে আরও কয়েকজন চিকিৎসককে এভাবে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করেছে প্রশাসন।

চিঠির প্রসঙ্গে ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৮৮ ধারায় চিকিৎসাজনিত দুর্ঘটনায় চিকিৎসকদের দায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তারপরও অবহেলার অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করে চিকিৎসকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কোনো সার্জারি করার সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কোনো চিকিৎসক রোগীকে মেরে ফেলার জন্য চিকিৎসা দেয় না। দেখতে হবে চিকিৎসক যথেষ্ট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল কিনা। এজন্য তদন্ত করতে হবে। কিন্তু তদন্ত করে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত চিকিৎসককে দায়মুক্তি দিতে হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই তাকে গ্রেপ্তার চিকিৎসকের প্রতি অমানবিক আচরণের সামিল। বিএমডিসি যেন সবপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সেজন্য আমরা তাদের চিঠি দিয়েছি।

বিএমডিসির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. লিয়াকত হোসেন বলেন, চিঠিটি এখনও আমি পাইনি। তবে পেশাজীবী সংগঠন হিসেবে বিএমএ চিকিৎসকদের প্রটেকশন নিয়ে কথা বলবেই। এটা স্বাভাবিক।

এদিকে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খান এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী এক বিবৃতিতে ভুল চিকিৎসার অভিযোগে দুই চিকিৎসককে গ্রেফতার করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে দুইজন চিকিৎসককে গ্রেফতার করায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। বিএমএ চট্টগ্রাম শাখা অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত চিকিৎসকদের মুক্তি দাবি করছে।

এছাড়া অবসট্রেটিক্যাল এন্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি প্রফেসর ডা. কামরুন নেসা (রুনা) এবং সদস্য সচিব প্রফেসর ডা. শর্মিলা বড়ুয়া এক বিবৃতিতে প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। সেই সাথে কর্তব্যরত অবস্থায় দুই চিকিৎসককে ভুল চিকিৎসার অভিযোগে গ্রেপ্তার করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হবার পূর্বে এ ধরনের গ্রেপ্তার কাম্য নয়। চিকিৎসকরা কোন দাগী আসামি নয় যে তাদের হাজতে রেখে বিচার কার্য চালাতে হবে। ওজিএসবি চট্টগ্রাম ব্রাঞ্চ অবিলম্বে গ্রেপ্তার দুই চিকিৎসকের মুক্তির দাবি করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশোভনদন্ডী কলেজে মফজল আহমদ চৌধুরী শোকসভা
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের মধ্যে কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর