চট্টগ্রাম কাস্টমসে সিরামিক টাইলসের একটি চালানের কায়িক পরীক্ষার গড়মিল প্রতিবেদন জমা দেন এক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। অভিযোগ তদন্তে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। দুই মাস তদন্ত করে কমিটির সদস্যরা সহকারী রাজস্ব মো. বজলুর রহমানের এক্ষেত্রে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না বলে উল্লেখ করেন। একই সাথে তিনি ‘সরল বিশ্বাসে’ কায়িক পরীক্ষার প্রতিবেদন জমা দেন বলে জানায়। এছাড়া অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়ে সাময়িক বরখাস্তের আদেশও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর হাতিরপুলের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সিরামিক গ্যালারি চীন থেকে ৫ হাজার ৬০৪ প্যাকেজে ১০ হাজার ৫১৩ বর্গমিটার সিরামিক টাইলস আমদানির ঘোষণা দেয়। চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছালে নগরীর শেখ মুজিব রোডের সিএন্ডএফ এজেন্ট আরাগ ট্রেডিং গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। যার নম্বর–সি–১৯৭৭৩৯০। পরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. বজলুর রহমান চালানটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করেন। কায়িক পরীক্ষায় তিনি ১০ হাজার ৬১৭ বর্গমিটার টাইলস পাওয়া যায় বলে প্রতিবেদন দেয়। পরবর্তীতে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা পুনরায় পণ্যের কায়িক পরীক্ষা করেন। কায়িক পরীক্ষায় ৪৮০ দশমিক ৭২ বর্গমিটার ঘোষণা অতিরিক্ত এবং ৪ দশমিক ৫০ বর্গমিটার ঘোষণা বহির্ভূতসহ সর্বমোট ৪৮৫ দশমিক ২২ বর্গমিটার বেশি টাইলস দেখতে পান। তবে কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বজলুর রহমান কায়িক পরীক্ষার ১০৩ দশমিক ৬৮ মিটার বেশি টাইলস পাওয়া যায় বলে প্রতিবেদন দেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি সাময়িক বরখাস্ত করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অভিযোগ তদন্তের জন্য গত ২৯ জানুয়ারি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা দুই মাস তদন্ত করে গত ২ এপ্রিল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায় আলোচন্য পণ্য চালানের কায়িক পরীক্ষার প্রতিবেদন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. বজলুর রহমান সরল বিশ্বাসে প্রদান করেছেন। এক্ষত্রে তার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল মর্মে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ প্রদান করে প্রথমবারের মতো আনীত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা যেতে পারে। পরবর্তীতে কাস্টমস কর্র্র্তৃপক্ষ তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে। গত ২১ মে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ–কমিশনার ইমাম গাজ্জলী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
জানা গেছে, গত বছরের পহেলা অক্টোবর কাস্টমস এঙাইজ ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা (দক্ষিণ) কার্যালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (্এনবিআর) এক বদলি আদেশে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. বজলুর রহমান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে যোগ দেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ–কমিশনার ইমাম গাজ্জলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, তদন্ত কমিটি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাননি, তাই সাময়িক বরখাস্তের আদেশও প্রত্যাহার করেছে। পেশাদার জায়গায় সরল বিশ্বাসে কিছু করা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের নিজস্ব একটি ক্লজ (ধারা) আছে।