ঢালুপথে জিপ আটকিয়ে ট্রাফিক পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ, নিয়ন্ত্রণহীন ট্রাকের চাপা

এক পরিবারের দুই নারীসহ ৩ জনের প্রাণহানি

লামা প্রতিনিধি | সোমবার , ১২ জুলাই, ২০২১ at ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ

লামায় বালু বোঝাই ট্রাক চাপায় একই পরিবারের দুই নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এক শিশুসহ ৪ জন আহত হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের পশ্চিম লাইনঝিরি এলাকায় বালু বোঝাই ট্রাক সড়কের উপর দাঁড়িয়ে থাকা মোটর সাইকেল ও জিপের যাত্রীদের চাপা দিলে দুর্ঘটনায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
লাইনঝিরি মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট যাত্রীবাহী জিপকে (মাহেন্দ্র গাড়ি) ধাওয়া করে পাহাড়ি ঢালু পথে আটকান। এরপর যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় উপর থেকে দ্রুত গতিতে নেমে আসা নিয়ন্ত্রণহীন একটি বালু বোঝাই ট্রাক জিপের যাত্রীদের চাপা দিয়ে উল্টে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতরা জানিয়েছেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের এক পরিবারের ৫ জন একটি জিপযোগে চকরিয়ায় আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। চলমান লকডাউনে জিপটি লাইনঝিরি মোড়ে আসলে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট গাড়িটি থামতে বলেন। চালক গাড়ি না থামিয়ে চলে গেলে ট্রাফিক পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক আরজু এক মোটর সাইকেল আরোহী থেকে মোটর সাইকেল নিয়ে মাহেন্দ্র গাড়িটি ধাওয়া করে সড়কের পশ্চিম লাইনঝিরি পাহাড়ি ঢালু পথে আটকিয়ে গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন। এসময় বিপরীত দিক থেকে আসা বালু বোঝাই ট্রাক (নং- চট্টমেট্রো-ট ১১৮৬৮৯) পাহাড়ি ঢালু পথে দ্রুত নেমে আসলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের উপর থাকা জিপের যাত্রীদের চাপা দিয়ে উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজন নিহত হয়। সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সাভিস ও স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে লামা হাসপাতালে নিলে সেখানে আরো একজনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের সিরাজ কারবারী পাড়ার বাসিন্দা শুভ দাশের স্ত্রী রুপসী দাশ (২০) ও গোবিন্দ দাশের স্ত্রী চিনু দাশ (৩০) ও লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের জিয়াবুল হকের পুত্র মোঃ মোক্তার আহমেদ (৫০)। গুরুতর আহতরা হলেন- নিহত রুপসী মায়া দাশের মেয়ে অংকিতা দাশ (৩) ও তার ননদ রিতা দাশ (২৭), কুমিল্লা জেলা সদরের ১নং ওয়ার্ডের ফিরোজ মিয়ার ছেলে ট্রাক চালক মো. জাহাঙ্গীর (৫০) এবং কক্সবাজারের মহেশখালীর বাসিন্দা শহিদুল্লার ছেলে জিপ চালক মো. সাগর (২৫)। এসময় ট্রাফিক পুলিশের ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি দুমড়ে-মুছড়ে যায়।
দুর্ঘটনায় আহত রিতা দাশ বলেন, চকরিয়ায় যাওয়ার সময় ট্রাফিক পুলিশ আমাদেরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী এক যুবক জানান, চকরিয়াগামী জিপটিকে ট্রাফিক সার্জেন্ট আরজু বিপদজনক পাহাড়ি ঢালুতে গতিরোধ করে যাত্রীদের নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন। এ সময় সড়কে জিপ, ট্রাফিক পুলিশের আনা মোটর সাইকেল ও যাত্রীদের নিয়ে জটলা সৃষ্টি হয়। একই সময়ে বিপরীত দিক থেকে আসা বালু বোঝাই ট্রাকটি পাহাড়ি ঢালু পথে নিয়ন্ত্রণ হারালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে লাইনঝিরিতে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক আরজুর বক্তব্য নিতে তাঁর মুঠোফোনে রিং দেয়া হলে তিনি রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে লাইন কেটে দেন।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তফা জামাল, লামা পৌরসভা মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম, লামা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ রিজওয়ানুল ইসলাম, লামা থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমান দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সার্বিক সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
লামা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমান, দুর্ঘটনায় হতাহতের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ট্রাফিক পুলিশের অদূরদর্শীতার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅক্সিজেন এলাকায় গৃহবধূর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধকরোনাকে জ্বর-সর্দি ভাবছে গ্রামের মানুষ : স্বাস্থ্যমন্ত্রী