প্রস্তুতি চলছিলো ইংরেজি নববর্ষের ২০২৩ এর জানুয়ারি থেকেই। আগেভাগেই চট্টগ্রামের লেখকদের কবি সুজন বড়ুয়ার মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন একজন ছাত্র এবং সুইডেনে আবাসিক লেখক বৃত্তিলাভকারী কবি ও নাট্যকার আনিসুর রহমান।
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান স্টাডি সেন্টার, সুইডেনের উপসালা সাহিত্যকেন্দ্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রের সহযোগিতায় ১২ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠিত প্রথম বাংলা–নর্ডিক সাহিত্য উৎসবে দেশি–বিদেশি কবিদের সঙ্গে এদেশের আদিবাসী ভাষাভাষী কবি ও শিল্পীরা যেমন অংশ নিয়েছেন তেমনি ঢাকার বাইরে থেকে বিশেষ করে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ এবং চট্টগ্রাম থেকেও লেখকরা এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন। চট্টগ্রাম থেকে আমি নজরুল জাহান ছাড়াও আমন্ত্রিত হয়েছিলেন রাশেদ রউফ, অরুণ শীল এবং আয়েশা হক শিমু।
উৎসবের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল বাছির। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান স্টাডি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক সৌরভ সিকদারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী পর্বে উৎসবের উদ্দেশ্যে তুলে ধরে কথা বলেন আনিসুর রহমান। এই আয়োজনে ঢাকাস্থ নরওয়েজিয়ান দূতাবাসের প্রতিনিধি ইউহানে এরিকসেন সালটনেস এবং সুইডিশ দূতাবাসের প্রতিনিধি আনা সভান্তেসনও বক্তব্য রাখেন। অংশগ্রহণকারী অন্যান্য কবিদের মধ্যে ক্রিস্টিয়ান কার্লসন, সোহরাব হাসান, সুজন বড়ুয়া, মথুরা ত্রিপুরা, কাজল বন্দ্যোপাধ্যয়, আসলাম সানী, অদ্বৈত মারুত, সুজন হাজং, মাসুদ রানা, মাহমুদ কামাল, মাসুদুজ্জামান, বায়তুল্লাহ কাদেরী, মালেক মাহমুদ প্রমুখ। উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন চামেলী সিনহা চারু। উৎসবটি উপস্থাপন করেন আবৃত্তিকার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান উপস্থাপক আয়েশা হক শিমু।
উৎসবে প্রদর্শিত হয় আনিসুর রহমান রচিত এপিক মনোলোগ ‘আমাদের বঙ্গমাতা’ নির্দেশনা দিয়েছেন দিব্যেন্দু উদাস, অভিনয় করেছেন ঝুমু খান, শব্দ ও সঙ্গীত পরিকল্পনায় মোশারফ হোসেন টুটুল, আলোক পরিকল্পনায় ঠান্ডু রায়হান। সুইডেনের উপলিট থিয়েটার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রের সহযোগিতায় বাংলাদেশ উত্তরীয় থিয়েটার এই নাটকটি প্রযোজনা করেছে। উৎসবে কবিতা পাঠ, আলোচনা ও সঙ্গীত পর্বের শেষে বিরতির পর ৪০ মিনিটের ব্যপ্তিতে প্রচারিত হলো আমাদের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছার জবানীতে জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের রাজনৈতিক ধারার মহাকাব্য। এ অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আমার পরিচিত মাসরুর ইমতিয়াজকে দেখি অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের সঞ্চালনায়। উদ্বোধন ও দু’চার কথার পরই অনুষ্ঠানের মূল পর্বে দেশি–বিদেশিদের কবিতা পাঠ। কবি সাহিত্যিকরা একে একে তাঁদের কবিতা পাঠ করেন, অনেকেই নিজের কবিতাটি অনুবাদসহ পড়ে শোনান। এটা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিচিতির জন্য। আমাদের চিরকিশোর কবি সুজন বড়ুয়া বাংলা ও ইংরেজীতে তাঁর চিরাচরিত ছন্দের দোলায় উপস্থিতদের দোলায়িত করে মঞ্চ থেকে নামলেন। রাশেদ রউফ তাঁর প্রাণোচ্ছলতার কবিতাটি পাঠ করলেন। দর্শকশ্রোতা এবার উদগ্রীব হয়ে উঠলেন সুইডিশ, নরওয়ে কবিদের কবিতা শোনার জন্য। এই মুহূর্তে পিন পতনের নিস্তবদ্ধতা বিরাজ করছিল পুরো হল জুড়ে। আসলে ক্রিস্টিয়ান কার্লসন তিনি তাঁর গুচ্ছ কবিতা শুনিয়ে ওডিয়েন্সকে মুগ্ধ করে গেলেন। সুইডিশ উপসালায় যে প্রান্তিকেরা গল্প বলে, কবিতা বলে, তাঁদেরই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবন পুঁথির মালায় যে উপসালার আঁধারে কাব্য রচিত হয়ে যায়।











