ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক

| বুধবার , ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়ক এঙপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে সরে এসে প্রশস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, যানবাহনের চাপের ওপর ভিত্তি করে কোথাও ছয় লেন, কোথাও আট লেন হবে। আর এ সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত নকশা ও সমীক্ষার কাজ আগামী মার্চে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেটের দূরত্ব ২৩২ কিলোমিটার। প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৭৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ঋণ চাওয়া হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকার জোগান দেবে।

দৈনিক আজাদীতে গত ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে শুরু হয়ে ২০২৯ সালে সড়ক প্রশস্তের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ)। একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে বৃহত্তর ঢাকা অংশের তিনটি জেলায় (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ)। এ অংশে সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার; যা বাস্তবায়নে খরচ হবে ৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। আরেকটি প্রকল্প হবে বৃহত্তর কুমিল্লা অংশের দুটি জেলায় (কুমিল্লা ও ফেনী)। এ অংশে সড়কের দৈর্ঘ্য ১২৫ কিলোমিটার। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৪৫ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। আরেকটি বাস্তবায়িত হবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অংশে; যেটি হবে মূলত ফেনী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত। এতে খরচ হবে ১৮ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। এই অংশের দৈর্ঘ্য ৬৯ কিলোমিটার। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) জাকির হোসেন বলেন, তিনটি প্রকল্প নেওয়ার কারণ, এত বড় প্রকল্প একসঙ্গে বাস্তবায়ন করা কঠিন। তাছাড়া এত বিপুল পরিমাণ অর্থ একসঙ্গে কেউই দিতে রাজি হবে না। সে কারণে কাজ ভাগ করা হয়েছে।

বলা জরুরি যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। একশ’ বছরের ডেল্টা প্লানকে সামনে রেখে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাসহ দেশের প্রতিটি সেক্টরে হয়েছে অভূতপূর্ব উন্নয়ন। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। সেই ধারাবাহিকতায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, সারাদেশে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতাধীন ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক, ৪ হাজার ৪০৪টি সেতু এবং ১৪ হাজার ৮৯৪টি কালভার্ট রয়েছে। ২০০৯ থেকে জুন ২০১৮ পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক উন্নয়ন খাতের আওতায় ৪ হাজার ৩৩১ কিলোমিটার মহাসড়ক মজবুতিকরণসহ ৫ হাজার ১৭১ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্তকরণ করা হয়েছে। অনুন্নয়ন খাতের আওতায় ৪ হাজার ৮৬৯ কিলোমিটার মহাসড়ক কার্পেটিং ও সীলকোট, ১ হাজার ৮৯২ কিলোমিটার ডিবিএসটি এবং ৮ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার ওভার লে করা হয়েছে। ৪১৭ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চারলেন বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকাচট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ১৯০ কিলোমিটার চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে; ঢাকাময়মনসিংহ মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। নবীনগরচন্দ্রা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন সড়ক চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। চট্টগ্রামহাটহাজারী সড়ক ডিভাইডারসহ চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। কঙবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হলেও তা এখন যথেষ্ট মনে হচ্ছে না। যানবাহনের অত্যধিক চাপ বেড়ে যাওয়ায় যানজটে পড়ে মহাসড়কটিতে প্রায়ই অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। মাইলের পর মাইল যানজট লেগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সময়মতো পণ্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ দেশের প্রধান দুই মহানগরী এবং অর্থনীতির শতকরা ৫০ ভাগ পরিচালনাকারী ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যকার যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ ও দ্রুত করার জন্যই মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হয়। কিন্তু এর সুফল মিলছে না। প্রয়োজনের তুলনায় বিনিয়োগ না হওয়ায় ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্য পরিবহনে সময় ও অর্থ লাগছে বেশি। যানজটের কারণে হচ্ছে যাত্রী দুর্ভোগও।’ তাঁরা বলেন, চট্টগ্রামের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থাটি ছয় বা আট লেনের করা উচিত ছিল। সেটা করা হয়নি, যা প্রধানমন্ত্রীর ভিশনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। সেহিসেবে আট লেন করার সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানাতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে