সার্কিট হাউসে মতবিনিময় সভায় আমিন উল্লাহ নুরী
২০১৩ সালে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক’কে সরকারি–বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে এক্সপ্রেসওয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেও গত বছর প্রকল্পটি বাতিল করে সরকার। তবে দেশের অর্থনীতির ‘লাইফলাইন’ খ্যাত মহাসড়কটিতে ইতোমধ্যে ধারণ ক্ষমতার বেশি যানবাহন চলাচল করছে। ফলে পিপিপি’র মাধ্যমে এক্সপ্রেসওয়ে না করে বিদ্যমান চার লেন বিশিষ্ট মহাসড়কটি আট লেনে প্রশস্তকরণ ও উভয় পাশে সার্ভিস লেন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যার বিস্তারিত নকশা ও সমীক্ষা আগামী মার্চে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে পুরো মহাসড়ক আট লেন হবে না। যানবাহনের চাপের ওপর ভিত্তি করে কোথাও ছয় লেন, কোথাও আট লেন হবে। এর বাহিরে উভয় পাশে দুটি করে সার্ভিস লেন নির্মাণ হবে। খবর বাসসের।
গতকাল রোববার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আয়োজনে প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ডিজাইনের উপর মতবিনিময় সভায় এসব কথা জানান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী। তবে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ২৩২ কিলোমিটার মহাসড়কটি প্রশস্ত করতে কত টাকা খরচ হতে পারে এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানাননি সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী।
সভায় জানানো যায়, নতুন প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের মদনপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট থেকে সিটি গেট পর্যন্ত যেসব স্থানে যানজট তৈরি হতে পারে, সেসব স্থানে ওভারপাস করে দেওয়া হবে। যেসব স্থানে সড়ক বাঁকা, সেগুলো সোজা করা হবে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প। প্রকল্পটিতে অর্থায়নে অনেক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েছে।
তবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ২৩২ কিলোমিটার মহাসড়কটি আট লেনে উন্নীত করতে খরচ হবে ৭৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।আলাদা তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশস্ত করা হবে মহাসড়কটি। একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে বৃহত্তর ঢাকা অংশের তিনটি জেলায় (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ)। এ অংশে সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার; যা বাস্তবায়নে খরচ হবে ৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। আরেকটি প্রকল্প হবে বৃহত্তর কুমিল্লা অংশের দুটি জেলায় (কুমিল্লা ও ফেনী)। এ অংশে সড়কের দৈর্ঘ্য ১২৫ কিলোমিটার। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৪৫ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। আরেকটি বাস্তবায়িত হবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অংশে; যেটি হবে মূলত ফেনী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত। এতে খরচ হবে ১৮ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। এই অংশের দৈর্ঘ্য ৬৯ কিলোমিটার। তিনটি প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৭৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ঋণ চাওয়া হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকার যোগান দেবে। ২০২৪ সালে শুরু হয়ে ২০২৯ সালে সড়ক প্রশস্তের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ)।
মূলত চলমান অর্থনৈতিক সংকটে প্রকল্পের পুরো টাকা সরকারি কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। তাই উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হবে। একইসাথে ২৩২ কিলোমিটারের কাজ একটি প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করলে খরচ পড়বে বেশি। যা একসঙ্গে এত টাকা কোনো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ঋণ দিতে রাজি হবে না। তাই প্রকল্পের জটিলতাও এড়াতে আলাদা তিনটি প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে মতবিনিময় সভায়, অন্যান্য আলোচকরা স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা না করে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করার জন্য অনুরোধ করেন। একই সাথে শুধু ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক নিয়ে পরিকল্পনা না করে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আট লেনে উন্নীত করার জন্য পরামর্শ দেন। মাতারবাড়ি, মীরসরাই ইকোনোমি জোন ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর চালু হলে এই রাস্তা পর্যাপ্ত হবে না। তাই ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে।
সভায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ওমর হাজ্জাজসহ সংশ্লিস্ট দপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।