মশ্করা নয়, পুঁজি পাচারকারীদের নাম-ঠিকানা যোগাড়ে দুদককে সত্যিকার অগ্রাধিকার দিতে হবে
গত ১৮ নভেম্বর ২০২০ তারিখে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন ঢাকার এক সেমিনারে কানাডার টরন্টোর বেগম পাড়া সম্পর্কে জানালেন যে ওখানকার ২৮ জন বাড়ি-মালিকের একটি নমুনার অধিকাংশই সরকারি কর্মকর্তা, চারজন রাজনীতিবিদ এবং কয়েকজন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক ও ব্যবসায়ী। তাঁর বক্তব্য দেশের মিডিয়ায় প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে (সুয়ো মোটো) হাইকোর্টের বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমদ সোহেলের আদালত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং আরো ছয়টি সরকারি সংস্থার ওপর ২২ নভেম্বর ২০২০ তারিখে রুল জারি করেন যে ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে এহেন ‘মানি লন্ডারার’দের তালিকা আদালতে পেশ করা হোক্। বিচারপতিগণ পুঁজি পাচারকারীদেরকে ‘জাতির দুশমন’ অভিহিত করেন। দুদক এবং চারটি সংস্থার পক্ষ থেকে গত ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে তাঁদের আদালতে এক’শ জন পুঁজি-পাচারকারীর নামের তালিকা এবং পাচারকৃত আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি ফর্দ পেশ করা হয়, কিন্তু মাননীয় বিচারপতিগণ এই উপস্থাপনায় চরম অবহেলা রয়েছে উপলব্ধি করে দুদককে ভর্ৎসনা করে রুল জারি করেছেন যে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে পুঁজি-পাচারকারী এবং দ্বৈত-নাগরিকত্ব গ্রহণকারীদের আরো পূর্ণাঙ্গ তালিকা পেশ করা হোক। সামান্য কয়েকজনের নাম-ঠিকানা দিয়ে আদালতকে খুশি করার অপপ্রয়াসে চরম অসন্তোষ জানিয়ে তাঁরা মন্তব্য করেছেন,‘বিচার করতে পারি না পারি নাম-ঠিকানাও কি জানতে পারব না?’ বলা বাহুল্য, ১৭ ডিসেম্বরের উপস্থাপনায় এক’শ জনের যে তালিকা উপস্থাপিত হয়েছে তাতে পুঁজি পাচার সমস্যাটি যে গত দুই দশকে দেশের একটি মহাসংকটে পরিণত হয়েছে সে বাস্তবতার কোন প্রতিফলন ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) বলে চলেছে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৭.৫ বিলিয়ন ডলার (মানে প্রায় চৌষট্টি হাজার কোটি টাকা) পুঁজি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, অথচ দুদক তালিকা দিয়েছে মাত্র আড়াই হাজার কোটি টাকার! এটা মশ্করা হয়ে গেল না?
পুঁজি পাচারের প্রধান চারটি পদ্ধতিও জিএফআই চিহ্নিত করেছে: ১) আমদানি বাণিজ্যে ব্যাপক ওভার-ইনভয়েসিং, ২) রফতানি বাণিজ্যে আন্ডার-ইনভয়েসিং, ৩) রফতানি আয় দেশে ফেরত না এনে বিদেশে রেখে পাচার এবং ৪) হুন্ডি প্রক্রিয়ায় ব্যাংকঋণ বিদেশে পাচার। বিশেষত, এক কোটি কুড়ি লাখ প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণে হুন্ডি পদ্ধতির ব্যাপক ব্যবহার সাম্প্রতিককালে হুন্ডি প্রক্রিয়ায় ব্যাংকঋণ পাচারকে নাটকীয় হারে বাড়িয়ে চলেছিল। দেশের বৃহৎ শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা ব্যাংকঋণকে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলায় করোনাভাইরাস মহামারি আঘাত করার পূর্বে এজন্যেই ব্যাংকঋণ-পাচার মহাসংকটে পরিণত হয়েছিল। (২০২০ সালের মার্চ থেকে হুন্ডি পদ্ধতি ঝিমিয়ে পড়ায় বৈধপথে দেশে আসা রেমিট্যান্স প্রবাহে অভূতপূর্ব স্ফীতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।) খেলাপিঋণের সিংহভাগ যেহেতু বিদেশে পাচার হয়ে গেছে তাই এহেন খেলাপিঋণ কখনোই ব্যাংকগুলোতে ফেরত আনা যাবে না, কারণ শর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে। মানে, যাঁরা ‘রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিদেরকে’ দমন করার দায়িত্বপ্রাপ্ত তাঁরাই গোষ্ঠীপ্রীতির কারণে উল্টোপাল্টা নীতি নিয়ে খেলাপিঋণ সমস্যাকে কার্পেটের তলায় লুকিয়ে ফেলছেন। এজন্যেই দেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণ প্রকৃতপক্ষে ইতোমধ্যেই তিন লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও নানা কায়দা-কানুনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্লাসিফাইড লোনের সর্বশেষ-প্রকাশিত পরিমাণকে পঁচান্নব্বই হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে।
আমি বারবার সাবধানবাণী উচ্চারণ করছি, যদিও কৃত্রিমভাবে হ্রাসকৃত খেলাপিঋণের পরিমাণ একটা স্বস্তিকর চিত্র তুলে ধরছে কিন্তু এই অন্যায্য সুবিধেগুলো দেশের ‘রাঘববোয়াল ঋণখেলাপি’দের জন্যে ব্যাংক থেকে ফন্দি-ফিকির করে নূতন ঋণ বের করে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করছে। সবারই মনে রাখতে হবে খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের অধিকাংশই ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’, তাঁদেরকে ঋণ ফেরত দেওয়ার পথে ফিরিয়ে আনা যাবে না। এহেন ঋণগ্রহীতারা ব্যাংকঋণের উল্লেখযোগ্য অর্থ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন, বিদেশে তাঁরা ঘর-বাড়ি-ব্যবসাপাতি কিনে অভিবাসন নিয়ে ফেলেছেন। তাঁদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যারা বিদেশে বসবাস করছেন, তাঁরা নিজেরাও বিদেশে যাওয়া-দেশে আসা চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য বা চাকরি বজায় রেখে পুঁজি-পাচার করে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে খেলাপিঋণ আদায়ের জন্যে কিংবা দুর্নীতি দমনের জন্য সরকার সত্যিসত্যিই জোর ধাওয়া দিলে তাঁরা রাতারাতি দেশ থেকে ভেগে যাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য এবং হাইকোর্টের রুল বিলম্বে হলেও সমস্যাটিকে জনগণের মনোযোগের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও ‘বেগম পাড়ার সাহেবদেরকে’ পাকড়াও করার কথা বলেছেন। আশা করি এবার সরকার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করবে।
মনে রাখতে হবে, পুঁজি-পাচারকারীরা এদেশে প্রবল-প্রতাপান্বিত। অতএব, পুরো ব্যাপারটিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারা মরিয়া প্রয়াস চালাবে। গত চার দশক ধরে ক্রমবর্ধমান পুঁজি-পাচার সম্পর্কে এদেশে ক্ষমতাসীন সকল সরকারের শীর্ষ-নেতৃত্বের জ্ঞান ঠিকই ছিল এবং আছে, কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে কোন সরকারই এই অপরাধটি মোকাবেলায় কোন সদিচ্ছা দেখায়নি। সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এদেশের কায়েমী স্বার্থ বাধা দেবেই। এ-ব্যাপারে আমার একটি দুঃখজনক অভিজ্ঞতা পাঠকদেরকে জানাচ্ছি। দেশের শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে আমি ১৯৯০-৯১ মেয়াদে ‘ওষষবমধষ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঞৎধফব রহ ইধহমষধফবংয’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রকল্প সম্পন্ন করেছিলাম। বিআইডিএস এর তদানীন্তন গবেষণা পরিচালক প্রয়াত ড. আবদুল গফুর এবং ড. নওশাদ ফয়েজ নামের আরেকজন গবেষক ঐ প্রকল্পে আমার সাথে সহ-গবেষক ছিলেন। গবেষণা প্রকল্পটির স্পনসর ছিল সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘এন্টি-স্মাগলিং সেল’ এবং অর্থায়নকারী সংস্থা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। দীর্ঘ দু’বছরের গবেষণার পর দুই কিস্তিতে আমাদের গবেষণা প্রতিবেদনটি বিআইডিএস কর্তৃক মিমিওগ্রাফ আকারে প্রকাশিত হওয়ার পর সেটা দেশে-বিদেশে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ঐ সময় হংকং থেকে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত অর্থনীতি-সংক্রান্ত সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ফার ইস্টার্ন ইকনমিক রিভিউ’ ১৯৯৩ সালের আগস্ট মাসে পত্রিকাটির ‘লিড স্টোরি’র মর্যাদা দিয়েছিল আমাদের প্রতিবেদনটিকে। বিশ্বব্যাপী এহেন খ্যাতি অর্জনের ফলে প্রতিবেদনটি পুস্তক আকারে প্রকাশনার জন্য দেশের নেতৃস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থা ‘ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড’ ড. গফুরকে রাজি করানোর মরিয়া প্রয়াস চালায়, কিন্তু ড. গফুর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাইলে অনুমতি দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছিল, সরকার যেহেতু আমাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করবে তাই পুস্তক হিসাবে প্রকাশনা ঐ উদ্দেশ্য ব্যাহত করবে। আসল উদ্দেশ্য ছিল গবেষণার ফাইন্ডিংসগুলো ধামাচাপা দেওয়া। বছরখানেক অপেক্ষার পর একবুক হতাশা নিয়ে ঐ ফাইন্ডিংসগুলো আমার নিজের প্রকাশিত বই বাংলাদেশের রাষ্ট্র, সমাজ ও দুর্নীতির অর্থনীতিতে পপুলার জার্নালিস্ট স্টাইলে আলাদা আলাদা অধ্যায় হিসাবে প্রকাশ করেছিলাম আমি। খেলাপিঋণ-সংক্রান্ত আমার ও মহিউদ্দিন সিদ্দিকীর আলোড়ন-সৃষ্টিকারী বই অ চৎড়ভরষব ড়ভ ইধহশ খড়ধহ উবভধঁষঃ রহ ঃযব চৎরাধঃব ঝবপঃড়ৎ রহ ইধহমষধফবংয এর প্রকাশনাও দীর্ঘ নয় বছর বিলম্বিত করে দিয়েছিল কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী, যা সব বাধা ডিঙিয়ে ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই বলতে চাই, দুদক যদি সত্যিকারভাবে পুঁজি-পাচার মোকাবেলা করতে চায় তাহলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশের দূতাবাস/হাই কমিশনকে পত্র দিয়ে পুঁজি পাচারকারীদের তথ্য সংগ্রহের যে প্রয়াস দুদক শুরু করেছে সে পন্থাটা বদলাতে হবে। বাংলাদেশের কয়েক’শ ‘রবার ব্যারন’ পুঁজি লুন্ঠন ও পুঁজি পাচারের প্রধান হোতা হলেও বাংলাদেশের হাজার হাজার দুর্নীতিবাজ সিভিল আমলা, প্রকৌশলী, সামরিক অফিসার, ব্যাংকার, রাজনীতিবিদ এবং ‘ব্যাংকঋণের সন্তান গার্মেন্টস মালিক ব্যবসায়ী-শিল্পপতি’ প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপের অন্যান্য দেশ, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতে কয়েক লক্ষ কোটি টাকার সমপরিমাণ পুঁজি পাচার করে এসব দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব/ গ্রীন কার্ড/ পার্মানেন্ট রেসিডেন্টশীপ বাগিয়েছে। টরন্টোর ‘বেগম পাড়া’ কিংবা মালয়েশিয়ার ‘সেকেন্ড হোম’ বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারের প্রতীকী গন্তব্য হিসেবে ইদানীং বহুল-প্রচারিত হলেও উপরে উল্লিখিত সকল দেশেই ব্যাপকভাবে ঘাঁটি গেড়েছে এদেশের ‘পুঁজি পাচারকারী সাহেবরা’। দুদকের নিজস্ব তদন্ত টিম এবং/অথবা গবেষণা টিম সরাসরি এসব দেশে পাঠিয়ে এই পুঁজি পাচারকারীদের ‘সুলুক সন্ধান’ খুব ব্যয়বহুল হবে কি? বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী-শিল্পপতি শ্রীলংকা, নেপাল, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত, কেনিয়া, উগান্ডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, তানজানিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে শিল্প-কারখানা ও ব্যবসাপাতি স্থাপন করেছেন। তাঁরা এদেশ থেকে কিভাবে পুঁজি বিদেশে নিয়ে গেলেন, বৈধভাবে তো এদেশ থেকে বিদেশে পুুঁজি নিয়ে বিনিয়োগ করা যায় না? সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী/উপদেষ্টা এবং সংসদ-সদস্য সহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃস্থানীয় রাজনীতিবিদের পরিবার বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন, তাঁরা ওখানে সম্পত্তি ক্রয়ের পুঁজি যোগাড় করলেন কিভাবে?
‘পুঁজি পাচারকারী সাহেবদের’ দেশের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সদিচ্ছা বা সামর্থ্য সরকারের আছে কিনা অথবা পাচারকৃত পুঁজি দেশে আদৌ ফেরত আনা যাবে কিনা সেটা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও যথাযথ অগ্রাধিকার সহকারে এই সাহেবদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে সরকারিভাবে প্রকাশ করলে নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হবে:
১) যেসব চাকরিরত সিভিল আমলা, প্রকৌশলী, সামরিক অফিসার এবং অন্যান্য ধরনের সরকারী কর্মকর্তার নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে অবিলম্বে তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করা যাবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদেরকে চাকরিচ্যুতি, জেল-জরিমানা এবং সম্পত্তি-ক্রোকের মত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা যাবে।
২) যেসব ব্যাংকঋণ গ্রহীতার নাম তালিকায় থাকবে তাদেরকে অবিলম্বে সকল ব্যাংকের ব্ল্যাকলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যাংকঋণ থেকে স্থায়ীভাবে ডিসকোয়ালিফাই করতে হবে। তারা ঋণখেলাপি হলে তাদের ঋণ-পুনঃতফশিলীকরণের সুযোগ বন্ধ করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালত কিংবা উচ্চতর আদালতে ঋণখেলাপের মামলা চলমান থাকলে একটি ‘ঋণখেলাপি বিচার ট্রাইব্যুনাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ঐ মামলার দ্রুত-নিষ্পত্তির মাধ্যমে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিবিধান করতে হবে।
৩) ‘রাইট-অফ’ করা খেলাপিঋণ গ্রহীতাদের নাম ঋণ-পাচারকারীর তালিকায় থাকলে উক্ত ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে অবিলম্বে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
৪) ব্যাংক-মালিকের বা ব্যাংক-পরিচালকের নাম তালিকায় থাকলে তাদেরকে ঐ মালিকানা বা পরিচালনা-বোর্ড থেকে অবিলম্বে অপসারণ করে ট্রাইব্যুনালের বিচারে সোপর্দ করা যাবে।
৫) যেসব রাজনীতিবিদের নাম পুঁজি-পাচারকারীর তালিকায় থাকবে তাদেরকে মন্ত্রিসভা এবং দলীয়-নেতৃত্ব থেকে অপসারণ করা যাবে। সংসদ-সদস্যদের নাম তালিকায় থাকলে তাঁদের সদস্যপদ স্থগিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হবে।
৬) অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদক অবিলম্বে মামলা দায়ের করতে পারবে।
লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়