হুন্ডি ব্যবসাকে দমন না করলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনকে থামানো যাবে না : অর্থনীতি মহাবিপদে পড়বে
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে আইএমএফ এর নিয়ম অনুযায়ী ২১.৭১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে । বাংলাদেশ সরকার দাবি করেছিল যে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল, কিন্তু আইএমএফ সরকারের ঐ দাবি সমর্থন করেনি। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ঐ ঘোষিত রিজার্ভ থেকে রফতানি উন্নয়ন ফান্ডের (এক্সপোর্ট ডেভেলাপমেন্ট ফান্ড) মাধ্যমে প্রদত্ত সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। একইসাথে, বাংলাদেশ নিজেদের রিজার্ভ থেকে শ্রীলংকাকে যে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে তা–ও বাদ দিতে হবে। আরো বাদ দিতে হবে রিজার্ভ থেকে পায়রা বন্দরের বামনাবাদ চ্যানেল খননের জন্য এবং বাংলাদেশ বিমানকে বিমান কেনার জন্য যে ঋণ দেওয়া হয়েছে সে অর্থও। এটা খুবই দুঃখজনক যে দীর্ঘ প্রায় দু’বছর বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব আইএমএফ এর এসব আপত্তির ধার ধারেনি। এখন যখন বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে ৪.৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে তখন বাধ্য হয়ে ঐ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার শর্ত পূরণের উদ্দেশ্যে গত জুলাই মাসে রিজার্ভ হিসাব করার সর্বশেষ পদ্ধতি বিপিএম–৬ মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুরানো বিপিএম–৫ পদ্ধতি অনুসরণে যে ‘ইনফ্লেটেড বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ’ দেখানোর খামখেয়ালিপনায় পেয়ে বসেছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে, তার ফলে গত দু’বছরে বেশ কয়েকটি অবিমৃষ্যকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সবচেয়ে ক্ষতিকর সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে এক্সপোর্ট ডেভেলাপমেন্ট ফান্ড গঠন করে ব্যবসায়ীদেরকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত। ইতোমধ্যেই এই ঋণগুলোর সিংহভাগই ‘ফোর্সড লোনে’ পরিণত হয়েছে। এর মানে, এই ঋণগুলো আর কখনোই বৈদেশিক মুদ্রায় বাংলাদেশ ব্যাংকে ফেরত আসবে না। এর বেশিরভাগই স্রেফ বিদেশে পাচার করে দিয়েছে ঋণগ্রহীতা রফতানিকারকরা। আরো দুঃখজনক হলো, এসব ঋণের বেশিরভাগ ‘খেলাপি ঋণে’ পরিণত হয়ে গেছে। এর মানে হলো, বৈদেশিক মুদ্রায় প্রদত্ত রিজার্ভের এই বিরাট অংশটি পুরোপুরি লুন্ঠিত হয়ে গেছে। রিজার্ভের প্রকৃত পরিমাণ যে অনেক কম তা উপলব্ধি করতে পারলে হয়তো এই অপ্রয়োজনীয় কর্মসূচিটি নেয়া হতো না! প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ করলে পায়রা বন্দরের চ্যানেলের খননকাজ এবং বাংলাদেশ বিমানের বিমান কেনার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারের ঋণ দেওয়ার কোন যুক্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু ২০২০ এবং ২০২১ সালের পত্র–পত্রিকার খবরগুলো পড়লে বোঝা যাবে, ঐ সময় সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব বারবারই বক্তব্য রাখছিল যে বাংলাদেশ খামোকা এতবড় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখছে। যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যেহেতু মার্কিন রিজার্ভ সিস্টেমে এই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখলে সেখান থেকে অতি সামান্য সুদ পাওয়া যায় তাই ঐ রিজার্ভের অর্থ দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করলে সুদও বেশি পাওয়া যাবে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের সক্ষমতাও বাড়বে সরকারের। ২০২০ সালে যখন আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমশ বেড়ে ৩৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল তখন প্রধানমন্ত্রীর এহেন খায়েস পত্র–পত্রিকায় প্রায়ই প্রকাশিত হচ্ছিল। তখন স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এহেন ধারণা যে অযৌক্তিক তা ব্যাখ্যা করে পত্র–পত্রিকায় কলাম লিখেছি, কিন্তু কে শোনে ওসব কথা? ২০২০ সালের ১৬ জুলাই দৈনিক বণিক বার্তা এবং দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত আমার কলাম থেকে নিচের উদ্ধৃতিগুলো তুলে ধরছি, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের স্ফীতির আসল গুরুত্ব হলো এটি একটি দেশের অর্থনীতির গতিশীলতা ও শক্তির প্রতীক। কোন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যখন ক্রমবর্ধমান থাকে তখন ঐ অর্থনীতির নীতি–প্রণেতাদেরকে কারো ব্ল্যাকমেইলের তোয়াক্কা করতে হয় না।’
নীতিগ্রহণের এই সার্বভৌমত্বের মূল্য অপরিসীম, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যে—যে কোন দেশের অর্থনীতির দুর্বলতা এবং শক্তির ‘এসিড টেস্ট’ হলো লেনদেন ভারসাম্যের কারেন্ট একাউন্টের ঘাটতি বনাম উদ্বৃত্তের অবস্থান। বাংলাদেশের দৃশ্যমান রফতানি ও আমদানির প্রবাহের ‘ব্যালেন্স অব ট্রেডে’ এখনো প্রায় বছর পনেরো থেকে কুড়ি বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, যখন থেকে আমরা প্রধানত ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্স প্রবাহের সহায়তায় ঐ ঘাটতি মেটাতে সক্ষম হচ্ছি তখন থেকে বৈদেশিক ঋণ–অনুদানের জন্যে আমাদেরকে আর বিদেশী রাষ্ট্র কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থার দয়া–দাক্ষিণ্যের উপর অতি–নির্ভরশীল হতে হচ্ছে না—এই পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিনীত অনুরোধ, এখনই রিজার্ভে হাত দেবেন না, প্লীজ! রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেগবান করার চিন্তাকে এখনো সময়োপযোগী বলা যাচ্ছে না’। বলা বাহুল্য, আমার ঐ সময়োচিত সাবধান বাণীকে পাত্তা দেননি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। অর্থনীতি সম্পর্কে তাঁর চাইতে যে আমার জ্ঞান কম হওয়ার কোন কারণ নেই সেটা তাঁকে বোঝাতে যাবে কে? আমি তাঁর এহেন খামখেয়ালি প্রকল্প গ্রহণের ব্যাপারে আপত্তি জানানোয় তিনি ব্যঙ্গ করে আমাকে ‘অর্বাচীন অর্থনীতিবিদ’ আখ্যা দিয়েছিলেন। ২০২২ সালের মে মাসে জার্মান টিভি ডয়শে ভেলে আমাকে এ–ব্যাপারে মন্তব্য করতে বলায় আমি বলেছিলাম,‘২০১২ সালে যখন বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বাতিল করেছিল তখন বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদদের মধ্যে আমিই প্রথম তাঁকে সমর্থন জানিয়েছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য। আবার, তাঁর হাত থেকেই আমি ‘একুশে পদক’ নিয়েছি। এখন তিনি আমাকে অর্বাচীন অর্থনীতিবিদ বলছেন! তা তিনি বলতেই পারেন, কিন্তু আমি আমার অবস্থান বদলাবো না’। আমার এই সাবধান বাণীকে আমলে না নেয়ার ফলে এখন যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দ্রুত পতনের ধারা আমাদের অর্থনীতিকে টালমাটাল অবস্থায় নিয়ে গেছে তা সামাল দিতে সরকারকে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। দুই বছরে দেশের ‘গ্রস রিজার্ভ’ কমে এখন ২১.৭১ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশের ‘নীট রিজার্ভ’ এখন ১৯ বিলিয়ন ডলারেরও কম। রিজার্ভের এহেন পতনের ধারাকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলতেই হবে। গ্রস রিজার্ভকে কুড়ি বিলিয়ন ডলারের নিচে নামতে দেওয়া যাবে না, নইলে অর্থনীতি মহাবিপদে পড়বে। কঠোরভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গত দেড় বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের পতনকে থামাতে চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি, কারণ হুন্ডি ব্যবসা চাঙা হওয়ায় ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। গত আগস্টে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স আগের বছরের আগস্টের চাইতে ২১ শতাংশ কমে গেছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম পনেরো দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৭৪ কোটি ডলার, তার মানে এই ধারা বজায় থাকলে সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স ১৫০ কোটি টাকার বেশি হবে না। অথচ, গত বছরের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬০ কোটি ডলার। যখন দুই বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার হ্রাস পেয়েছে তখনো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে উচ্চকন্ঠে বলেছেন রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছুই নেই, আমাদের নাকি প্রায় ছয় মাসের আমদানি বিল পরিশোধের সক্ষমতা রয়েছে। এখন আইএমএফ বলছে, বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রকৃতপক্ষে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত। আইএমএফ তাদের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করার শর্ত দিয়েছে যে ২০২৩ সালের জুন মাসের শেষে দেশের নীট রিজার্ভকে ২৪.৪৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আমরা এই টার্গেট থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার পিছিয়ে আছি। দেশের দেড় কোটির বেশি মানুষ বিদেশে কর্মরত থাকলেও তাঁদের অধিকাংশই হুন্ডি পদ্ধতিতে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ডলারের দাম নির্ধারণ বাজারের হাতে ছেড়ে দিলেই এই সমস্যার সমাধান মিলবে না, কারণ হুন্ডি ডলারের চাহিদা কাঠামো শক্তিশালী থাকলে বাজারে ডলারের দাম যতই থাকুক হুন্ডি পদ্ধতিতে ডলারের দাম তার চাইতে ৭/৮ টাকা বেশি পাওয়া যাবেই। দেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারকারীরাই এই হুন্ডি ডলারের চাহিদাকে শক্তিশালী রাখছে, যেজন্য দেশ থেকে বিদেশে পুঁজিপাচার এখন দেশের ‘এক নম্বর সমস্যায়’ পরিণত হয়েছে।
আমি যখন আমার গবেষণায় ‘পুঁজি পাচার’কে বেছে নেই তখন এই আনুমানিক দেড় কোটির বেশি বাংলাদেশী অভিবাসীদের মধ্যে একটি অতি ক্ষুদ্র অংশকে টার্গেট করে আমার অনুসন্ধান পরিচালিত হয়। সংখ্যায় এসব পুঁজিপাচারকারী কয়েক হাজারের বেশি হবে না। বাংলাদেশী সমাজের উচ্চ–মধ্যবিত্ত, উচ্চ–বিত্তশালী ও ‘এলিট’ অংশে তাঁদের বেশিরভাগের অবস্থান। অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে তাঁরা দেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার করতে বাধ্য হচ্ছেন বলা যাবে না। এদেশে তাঁরা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ‘এলিট’ গোষ্ঠীর মধ্যে অবস্থান করা সত্ত্বেও আরো বেশি সুখ–শান্তির (কল্পনার স্বর্গীয় সুখের) আশায় দেশত্যাগে উদ্যোগী হচ্ছেন। তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠই দুর্নীতিবাজ আমলা, ব্যবসায়ী–শিল্পপতি (উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গার্মেন্টস মালিক), প্রকৌশলী ও রাজনৈতিক নেতা। তাঁদের বেশিরভাগের বৈশিষ্ট্যগত ‘কমন ফ্যাক্টর’ হলো তাঁদের সিংহভাগ ‘কালো টাকার মালিক’, ভাল মানের শহুরে সম্পত্তির মালিক কিংবা শিল্প–কারখানা–ব্যবসায়ের মালিক হওয়ায় দেশের ব্যাংকঋণ পাওয়ার ক্ষমতা রাখেন। আমার সংবাদপত্রের কলামগুলোতে আমি তাদেরকে ‘জাতির এক নম্বর দুশমন’ আখ্যায়িত করে চলেছি। তাঁরা যদি নিজেদের বাপ–দাদার সূত্রে প্রাপ্ত এদেশীয় সম্পদ–সম্পত্তি বিক্রয় করে বিদেশী নাগরিকত্বের আশায় অভিবাসন প্রক্রিয়ায় শামিল হন তাহলে তাঁদেরকে ‘জাতির দুশমন’ আখ্যায়িত করা যৌক্তিক হতো না। অথবা, নিজেদের সারা জীবনের বৈধ উপার্জনের মাধ্যমে প্রাপ্ত আয় থেকে উদ্ভূত সঞ্চয় ও বিনিয়োগের সূত্রে প্রাপ্ত অর্থ–সম্পদ বা সম্পত্তি বিক্রয় করে যদি কেউ অভিবাসনের মাধ্যমে পরবর্তীতে বিদেশে সপরিবার বসবাসের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করেন তাঁকেও গালমন্দ করা সঠিক হবে না। কিন্তু, আমার গবেষণার টার্গেট তাঁরা নন। আমি যাদেরকে ‘জাতীয় দুশমন’ অভিহিত করছি তারা দেশের ব্যাংকিং সিস্টেমকে অপব্যবহার করে ব্যাংকঋণ নিয়ে তা বছরের পর বছর ফেরত না দিয়ে বিদেশে পাচার করে চলেছে। তারা ব্যাংকগুলোর ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ হিসেবে ঋণ–লুটপাটকারীর ভূমিকা পালন করছে। তারা রাজনীতিক পরিচয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুন্ঠন করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী। তারা ৫২ বছরের স্বাধীনতা–উত্তর বাংলাদেশের ‘এক নম্বর সমস্যা’ দুর্নীতি ও পুঁজিলুন্ঠনের মাধ্যমে কালো টাকার মালিক হয়ে তাদের দুর্নীতি–লব্ধ ও লুন্ঠনকৃত অর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া কিংবা দুবাইয়ে পাচার করছে। এরাই কানাডার টরন্টোর বেগমপাড়া, অস্ট্রেলিয়ার সিডনীর ফ্রেটারনিটি এবং মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানাচ্ছে।
সরকারকে অবিলম্বে মেনে নিতে হবে যে হুন্ডি ব্যবসাকে কঠোরভাবে দমন না করলে পুঁজিপাচার কমানো যাবে না এবং ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়ানো যাবে না। এর ফলে আমদানি ব্যয় ও রফতানি আয়ের পার্থক্য (ব্যালেন্স অব ট্রেডের ঘাটতি) রফতানি আয় এবং ফর্মাল চ্যানেলে দেশে আসা রেমিট্যান্স দিয়ে মেটানো যাবে না, যে কারণে ব্যালেন্স অব পেমেন্টেসের কারেন্ট একাউন্টের ঘাটতি মেটানোর জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে হাত দিতেই হবে (মানে রিজার্ভের পতন অব্যাহত থাকবে)। এই দুষ্টচক্রের মূল হোতা পুঁজিপাচারকারীরা, হুন্ডি ব্যবসায়ীরা এরই সুযোগ নিচ্ছে । আমার বিভিন্ন কলামে আমি হুন্ডি পদ্ধতিতে রেমিট্যান্স প্রেরণকে নিরুৎসাহিত করার নানা ব্যবস্থা সুপারিশ করেছি। বল এখন সরকারের কোর্টে। যেহেতু অধিকাংশ প্রবাসীরা রেমিট্যান্স প্রেরণের জন্য হুন্ডি পদ্ধতিকেই বেছে নিচ্ছেন তাই বাংলাদেশ থেকে হুন্ডি প্রক্রিয়ায় বিদেশে পুঁজিপাচারকে বর্তমান পর্যায়ে দেশে মহা–সংকটজনক পর্যায়ে উপনীত করেছে। আমি মনে করি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ও ডলার সংকট থামাতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে দুর্নীতি, পুঁজিলুন্ঠন এবং পুঁজিপাচারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করতেই হবে। তার মানে, একদিকে হুন্ডি ব্যবসার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে আর অন্যদিকে দুর্নীতি ও পুঁজিলুন্ঠনের বিরুদ্ধে সত্যিকারভাবে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে।
লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়