ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে আ. লীগ, জড়িত ভারতীয় মিডিয়াও : প্রেস সচিব

| রবিবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:১৪ পূর্বাহ্ণ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, অধ্যাপক ইউনূসকে জঙ্গি নেতা হিসেবে উপস্থাপনের জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে ভারতীয় গণমাধ্যম জড়িত। তারা সারা পৃথিবীকে বোঝাতে চাচ্ছে, বাংলাদেশে যা হয়েছে তা আসলে গণঅভ্যুত্থান নয়। এটা বড় রকমের চক্রান্ত। গতকাল শনিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দ্রোহের গ্রাফিতি : ২৪এর গণঅভ্যুত্থান’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে শফিকুল আলম এ কথা বলেন। খবর বাসসের।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) উপপ্রধান বার্তা সম্পাদক জি এম রাজীব হোসেনের এই বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে বিশেষ অতিথি ছিলেন শফিকুল আলম। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সাংবাদিক কাজী রওনাক হোসেন এবং ‘দ্রোহের গ্রাফিতি : ২৪এর গণঅভ্যুত্থান’ বইয়ের লেখক জি এম রাজীব হোসেন।

শফিকুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগ এবং পতিত স্বৈরাচার, চোরতন্ত্রের জননী ও গুমের জননী চাচ্ছেন বাংলাদেশের ন্যারেটিভকে (বয়ান) চ্যালেঞ্জ করতে। তারা বলছেন তিন হাজার পুলিশ মারা গেছে, তাদের ওয়েবসাইটে অধ্যাপক ইউনূসকে জঙ্গিদের নেতা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, এটা খুবই পরিকল্পিত অপপ্রচার। এর সঙ্গে ভারতীয় মিডিয়াও জড়িত। এর পেছনে হাসিনার অলিগার্কেরা মিলিয়ন ডলার খরচ করছে। খবর বাসসের।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগিরা ইতিহাসকে উল্টে দিতে চায়। তিনি বলেন, তারা জুলাই বিপ্লবের উল্টা বয়ান তৈরিতে ব্যস্ত। তাই এখন আমাদের মূল কাজ হলো জুলাই বিপ্লবের প্রত্যেকটি ঘটনাকে লিপিবদ্ধ করা। শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস বদলের চেষ্টা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে গবেষণা ও লেখা প্রকাশিত হয়নি। তিনি বলেন, যে আফতাব আহমেদ বাসন্তীর ছবি তুলেছেন, তিনি রহস্যজনকভাবে মারা গেছেন। কেউ তদন্ত করেনি। রক্ষীবাহিনীর হাতে ৩০ হাজার লোক মারা গিয়েছিল। ১৫ বছর ধরে ইতিহাস মুছে নতুন ইতিহাস চাপানোর চেষ্টা হয়েছে। শোষণ করার মূল হাতিয়ার ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়া। যে নিপীড়নকারী, সে নিজেকে নিপীড়নের শিকার বলে জাহির করেছে।

নিজের পরিবারের সদস্যদের কথা উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষেও সময় তার ভাইকে দিনের পর দিন রাতে রেশনের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। মানুষজন তাদের বাসায় আসত ভাতের মাড়ের জন্য। তিনি নিজেও ভাতের মাড় খেয়েছেন। অথচ সাড়ে ১৫টা বছর বলা হয়েছে শেখ মুজিবের শাসনামল ছিল মহৎ।

শেখ হাসিনার শাসনামলের নিপীড়নের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, তারা একজন প্রধান বিচারপতিকে নির্যাতন করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। একজন প্রধান বিচারপতির যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা কতটুকু স্বাধীন ছিলসেটা বুঝতে কারোর কষ্ট হওয়ার কথা নয়।

শেখ হাসিনা ও তার লোকেরা বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, সাড়ে তিন হাজার মানুষকে গুম করা হয়েছে। জুলাইআগস্টে দুই হাজার মানুষকে খুন করা হয়েছে। শেখ হাসিনার সময়ে শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড হয়েছে, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পর কী ভয়ানক হত্যাকাণ্ড হয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে গবেষণার মাধ্যমে ১৫ বছরের ভয়াবহতাকে তুলে ধরা। আমরা প্রতিটি ক্যাম্পাসে সেমিনার করব। প্রতিটি দেয়ালে সে যে অন্যায় অবিচার করেছে, সেটা আমরা লিখে রাখব, যাতে বাংলাদেশে পতিত স্বৈরাচার এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা ফিরে আসতে না পারে। এটা আমাদের করতে হবে। তিনি বলেন, যারা ভাবছেন বিপ্লব জুলাইআগস্টের ২১ দিন, এটা ভুল। তার আগেও ১৫ বছর ধরে লড়াই হয়েছে। আরও ১৫ বছর লড়াই করতে হবে। আমরা একটু থেমে যাব, ওরা আবার মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করবে। এটা যাতে না হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাজীপুরে হামলার প্রতিবাদে নগরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, মশাল মিছিল
পরবর্তী নিবন্ধসংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আলোচনায় বসতে চায় সরকার