নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ১২ জন সিনেটর। দেশটির ইলিনয় রাজ্যের সেনেটর রিচার্ড জে. ডারবিন ও ইন্ডিয়ানার সেনেটর টড ইয়ংসহ সেনেটের ১২ জন সদস্য স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই আহ্বান জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো সিনেটরদের ওই চিঠিতে বলা হয়, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ক্রমাগত হেনস্তা এবং আরো বিস্তৃতভাবে আইন এবং বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহারের মাধ্যমে যেভাবে সরকারের সমালোচকদের টার্গেট করা হচ্ছে তা বন্ধ করার আহ্বান জানাতে আপনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কাছে এই চিঠি লেখা হচ্ছে। খবর বিবিসি বাংলার।
গত ১ জানুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজন আসামির বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে একটি ধারায় ছয় মাসের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় দেয়া হয়। একই সাথে আরেকটি ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের সাজা দেয়া হয়। শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি করেছিল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
২২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরদের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে ১৫০টির বেশি নথি–প্রমাণহীন মামলা করা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক এবং মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে চলা কার্যক্রমে অনিয়মের বিষয়টি চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে দেশের শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ছয় মাসের যে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে সেটিও রয়েছে। বর্তমানে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, এই স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, মামলার গতি এবং বারবার ফৌজদারি আইনের ধারা ব্যবহারের বিষয়গুলো ইঙ্গিত করে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচারব্যবস্থার অপব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া মি. ইউনূসের বিরুদ্ধে বারবার এবং ধারাবাহিকভাবে হয়রানির বিষয়টি প্রতিফলিত করে যে, বাংলাদেশের সুশীল সমাজের অনেক সদস্য ক্রমবর্ধমান কঠোর পরিস্থিতিতে একই অবস্থার মুখে পড়েন। এতে বলা হয়, ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে মি. ইউনূসের অগ্রণী কর্মকাণ্ড বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের জন্য অর্থনৈতিক বৃহত্তর অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতির সুযোগ করে দিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় ও বহুপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয়সহ বাংলাদেশের সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের মূল্যায়ন করে যুক্তরাষ্ট্র। অধ্যাপক ইউনূসের হয়রানি বন্ধ এবং অন্যান্য ব্যক্তিকে তাদের মুক্তমতের চর্চার মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করার সুযোগ নিশ্চিত করলে তা এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সহায়তা করবে।