ভারতের মিজোরাম রাজ্যের পূর্বাঞ্চলীয় পর্বত শ্রেণি থেকে কয়েকটি ক্ষুদ্র স্রোতধারা এসে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি এলাকায় মিলিত হয়ে কাচালং নদীর সৃষ্টি হয়েছে। বাঘাইছড়ি উপজেলাটি কাচালং নদীর মাধ্যমে দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। কাচালঙের উৎপত্তি ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায়। এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪৬ কিলোমিটার। প্রস্থ ৮০ মিটার। নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।
কাচালং উত্তর-দক্ষিণ বরাবর প্রবাহিত। রাঙামাটি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে খেদারমারায় এসে কর্ণফুলী নদীতে (কাপ্তাই হ্রদ) পড়েছে। এটি বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, রাঙামাটি সদর, কাপ্তাই দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মিলেছে কর্ণফুলীতে।
এক সময় এ নদীই ছিল বাঘাইছড়ি উপজেলার সাথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। বর্তমানে সীমিত আকারে সড়ক পথে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে লোকজন ও মালামাল যাতায়াত ও পারাপার করা হয়। বর্তমানে এই নদীর পানি দ্বারা কৃষিকাজ করা হয়। এই নদীতে অনেক মাছ পাওয়া যায়। ধরতে গেলে কাপ্তাই হ্রদের প্রাণ হলো কাচালং। বাঘাইছড়ি উপজেলার স্থানীয়দের মতে, ১৯৫৯ সালে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পরে, বাঘাইছড়ি সড়ক পথ সৃষ্টির আগে কাচালং দিয়ে বাঘাইছড়ির মানুষ নদীপথে রাঙামাটি যাওয়া-আসা করত। কাচালং নদীর মাধ্যমে মৎস্য সম্পদ ও বনজ সম্পদ আহরণ করা হয়। কিন্তু প্রতিনিয়ত পাহাড়ের মাটি এসে ভরাট ও বর্ষা মৌসুমে বন্যায় নদীর তীর ভেঙে যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, ঐতিহ্যবাহী এই নদীকে বাঁচাতে হলে নদী রক্ষা বাঁধ ও ড্রেজিং করা প্রয়োজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষায় কাচালং নদীতে বন্যা হয়। এতে কবলিত হয় বাঘাইছড়ির নিম্নাঞ্চল। ক্ষতি হয় ব্যাপক। আর ক্ষতির শিকার হয়ে ভোগান্তির মধ্যে পড়েন বাঘাইছড়ির নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন। বছর বছর বন্যায় বিলীন হয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বহু ঘরবাড়ি। সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছিল ২০০৭ এবং ২০১৮ সালে। সূত্র জানায়, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ভাঙন রোধে ২০১৭-১৮ সালে কাচালং নদীর মূল গতিপথের উভয় পাশে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণ ও বল্লি (গাছের খুঁটি) গেড়ে প্রথমে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। কিন্তু এর পরপরই ২০১৮ সালের বন্যায় তা ভেঙে বিলীন হয়ে যায়। বাঘাইছড়ির সাংবাদিক আব্দুল মাবুদ বলেন, বাঘাইছড়ির সাজেকের লালুকালু থেকে প্রচুর পরিমাণ বাঁশ আহরণ করে এই নদী দিয়ে কর্ণফুলী নদীতে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, জুম চাষের ফলে পাহাড়ের মাটি এসে নদী ভরাট হয়ে গেছে। এই নদীকে বাঁচাতে হলে শীঘ্রই ড্রেজিং করা প্রয়োজন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আল মামুন বলেন, বিগত সময়ে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার কাচালং নদীকে রক্ষার জন্য মারিশ্যা ইউনিয়নের তুলাবান, রুপকারী ইউনিয়নের কদমতলী, বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের শিজকমুখ এবং বারিবিন্দু ঘাট পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতার বিরোধিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, এ নদীকে বাঁচাতে হলে শীঘ্রই খনন করা জরুরি।
রাঙামাটি নদী রক্ষা কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মুন্না বলেন, বাঘাইছড়ির কাচালং নদী রক্ষার্থে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফুল ইসলাম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খাল পুনঃখননের একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। তিনি বলেন, আমি গণমাধ্যমের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যাতে শীঘ্রই এই নদীটি খনন করা হয়।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, কর্ণফুলী ড্রেজিং সমীক্ষা নামে একটি সার্ভের কাজ চলছে। ওই সমীক্ষায় বাঘাইছড়ির কাচালং নদীও রয়েছে। সার্ভের ড্রাফট তৈরির কাজ শেষ হলে আশা করছি কাচালং নদী পুনঃখননের জন্য কাজ শুরু করা যাবে।