অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সফরকারী প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে ঢাকায় এসেছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, যিনি কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি ও কূটনীতিতে বেশ আলোচিত কর্মকর্তা।
গতকাল শনিবার বিকালে দিল্লি থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের পরিচালক সামিয়া ইসরাত রনি। সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এই তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড লুর সঙ্গে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্র্যান্ডন লিঞ্চ। খবর বিডিনিউজের।
প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিতে এর আগে গতকাল সকালে ঢাকায় পৌঁছান যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যান। অ্যামচেমের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে নেইম্যানদের বৈঠকের খবর দিয়েছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস।
দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাতের সূচি রয়েছে তাদের। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থদপ্তর এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তারা ডোনাল্ড লুর চেয়ে বেশি সময় বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় অর্থ ও বাণিজ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে, আর্থিক যে ব্যবস্থাটি আছে, বাণিজ্যিক প্রশ্ন আছে, সব কিছু নিয়ে আলাপ–আলোচনা করা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে এক প্রশ্নে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আমি শুধু এটা বলতে পারি, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিনিধিদল, তাদের আসার মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশের সাথে তাদের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়, তার একটা বড় প্রতিফলন। যুক্তরাষ্ট্রের এই দলে বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কম্পোজিশনটা আপনারা দেখেছেন, সে কম্পোজিশন থেকে বোঝা যায়, এই আলোচনাটা বহুমাত্রিক হবে। এটা শুধু একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর সাথে সঙ্গতি রেখে আমরাও আমাদের দিক থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের টিমটাও ওই রকম থাকবে।
ডোনাল্ড লুর বিষয়ে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের আগ্রহের বিষয়ে এক প্রশ্নে ঢাকার এই কূটনীতিক বলেন, সরকার চায় যে, সব দেশের সাথে পারস্পরিকভাবে লাভজনক সম্পর্কে যেতে, এটা আমার সাধারণ মন্তব্য হবে। আর প্রথম যে কথাটা আপনি বললেন যে, বাংলাদেশের মানুষ ঐতিহাসিকভাবে আন্তর্জাতিক বিষয়ের প্রতি তাদের আগ্রহ আছে।
সফরে ঢাকার গুরুত্বে কী থাকবে–এমন প্রশ্নে সপ্তাহখানেক আগে পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব নেওয়া জসীম উদ্দিন বলেন, আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আমরা কথাবার্তা বলব। সেটা বহুমাত্রিকই হবে।
১০ সেপ্টেম্বর থেকে নয়াদিল্লি সফরে থাকা ডনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফরের বিষয়ও কয়েকদিন আগে এক বিবৃতিতে তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র। ওই বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, ঢাকায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যোগ দেবেন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এই প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থদপ্তর, ইউএসএআইডি, বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের প্রতিনিধি থাকবেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করবেন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা উন্মোচনে সহায়তা করতে পারে : বাসস জানায়, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস গতকাল বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত সঠিক অর্থনৈতিক সংস্কারের মধ্যে দিয়ে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা উন্মোচনে সাহায্য করতে পারে। রাজধানীতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত আলোচনার পর দূতাবাস এ কথা জানায়। দূতাবাস বলেছে, জ্বালানি নিরাপত্তা, ডেটা সেন্টার থেকে পরিবহন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে মার্কিন ব্যবসা–বাণিজ্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থ বিষয়ক সহকারী সচিব ব্রেন্ট নেইম্যান, পরিচালক জেরোড ম্যাসন, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (অন্তর্বর্তীকালীন) হেলেন লাফেভ, রাজনৈতিক/অর্থনৈতিক কাউন্সেলর এরিক গিলান এবং যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) মিশন পরিচালক রিড এশলিম্যান। উপস্থিত ছিলেন আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (এমচ্যাম) সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার, মেটলাইফ ইন বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলা উদ্দিন আহমেদ, কান্ট্রি ম্যানেজার মাস্টারকার্ড সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল এবং জিইর কান্ট্রি ম্যানেজার নওশাদ আলী।