বাংলাদেশে চলতি বছর ডেঙ্গুতে নারীরা বেশি মারা যাচ্ছেন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ২২৬ জন নারীর মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে নারীদের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হলেও একই সময়ে ১৬২ জন পুরুষ মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৪৭৬ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৯ হাজার ৯৫৪ জন (গতকাল পর্যন্ত)। এর মধ্যে ৩৬ হাজার ৯৬৩ জন নারী আর ৬১ হাজার ১০৭ পুরুষ। যাদের বয়স ১৮ বছরের বেশি।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে রোববার ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, দেশে ডেঙ্গুর ৩৩তম সপ্তাহে এসে ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও সংক্রমণ কিছুটা নিম্নমুখী দেখা গেছে। যার প্রভাবে রাজধানীসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। আক্রান্তের সংখ্যায় পুরুষরা এগিয়ে থাকলেও ডেঙ্গুতে পুরুষের তুলনায় নারীদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে পুরুষদের আক্রান্তের হার ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ, নারীদের আক্রান্তের হার ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ। গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গুতে ৪৬ জন নারীর বিপরীতে পুরুষ মারা গেছে ৩৩ জন। খবর বিবিসি বাংলার।
ডেঙ্গুতে নারীদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, জেনেটিক কারণে নারীদের জটিলতা বেশি দেখা দেয়। আর এ কারণে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়ার হার বেশি। এছাড়া গর্ভাবস্থায় ও ঋতুস্রাবকালে কোনো নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি থাকে।
তিনি বলেন, পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে নারীরা তাদের যত্ন নেন। কিন্তু নিজে অসুস্থ হলে গুরুত্ব কম দেন। অসুস্থ হলে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন তারা। এসব কারণে হাসপাতালেও দেরি করে আসেন। দেরি করে আসলে ঝুঁকিতে থাকেন তারা। ডেঙ্গুতে পুরুষের তুলনায় নারীরা কেন বেশি মারা যাচ্ছেন সেটি নিয়ে এখনো কোনো গবেষণা করা হয়নি। তবে এটি নিয়ে গাইনি ও অবস চিকিৎসকেরা গবেষণা করতে চাচ্ছেন।
রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, এ বছর ডেঙ্গুর উপসর্গগুলো অস্বাভাবিক। সাধারণত জ্বর, মাথাব্যথা হলে ডেঙ্গু সন্দেহ করা হয়। কিন্তু এ বছর ডায়রিয়া, পেটব্যথা, খিঁচুনিসহ আরো অনেক উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। কোনো নারী ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে বুঝতে সময় লাগছে। আবার অনেক সময় তারা হাসপাতালেও দেরি করে আসেন। এ কারণে তাদের মৃত্যুর হার বেশি।
তিনি বলেন, শারীরিক কোনো সমস্যা দেখা দিলেই ডেঙ্গু কিনা সেটি পরীক্ষা করা উচিত। অসুস্থ হলে দেরি না করে রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।