ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে নতুন অতিথি নীল গাই দম্পতি

পর্যটক-দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | শনিবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২৫ at ১০:০১ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারায় চিরহরিৎ বনে ১৯৯৯ সনে গড়ে তোলা হয় দেশের প্রথম সাফারি পার্ক। প্রতিষ্ঠার পর দেশিবিদেশি হরেক প্রজাতির বন্য প্রাণীর স্থান হলেও এই পার্কে আনা হয়নি দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ‘নীল গাই’। অবশেষে দীর্ঘ ২৫ বছর পর এই পার্কে যুক্ত হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত ‘নীল গাই’ দম্পতি। সম্প্রতি এই ‘নীল গাই’ দম্পতির আগমণে পার্কজুড়ে দর্শনার্থীদের বেশ উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। তবে নিরাপদ দূরত্বে থেকে উন্মুক্ত পরিবেশে যাতে দেশিবিদেশি পর্যটকদর্শনার্থীরা ‘নীল গাই’ দম্পতিকে দেখতে পায় সেই ব্যবস্থা করেছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।

বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. তপন কুমার দে আজাদীকে বলেন, নীল গাই নাম শুনে নীল রংয়ের কোন গরু হিসেবে ভাবলেও বাস্তবে এটি গরু নয়। বরং এটি এশিয়ার বৃহৎ প্রজাতির একটি হরিণজাতীয় প্রাণী। বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে পড়া বিরল প্রজাতির এই প্রাণী এক সময় ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বনাঞ্চলে দেখা মিলত। কিন্তু পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে ১৯৪০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে ‘নীল গাই’ আর দেখা যায়নি। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৭৮ বছর পর ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে ধরা পড়ে একটি স্ত্রী ‘নীল গাই’। ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি নওগাঁয় এবং একই বছরের পহেলা এপ্রিল পত্নীতলায় ধরা পড়ে আরও দুটি ‘নীল গাই’। ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারিতে ঠাকুরগাঁও থেকে উদ্ধার হয় আরও একটি। ধারণা করা হয়ভারতের সীমান্ত এলাকা থেকে দলছুট হয়ে খাবারের সন্ধানে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে তারা। সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে গাজীপুর সাফারি পার্কে এসব উদ্ধারকৃত নীল গাই সংরক্ষিত আছে। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গাজীপুরের সাফারি পার্কে ‘নীল গাই’র সংখ্যা দাঁড়ায় ১১টিতে।

ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মঞ্জুরুল আলম আজাদীকে বলেন, সম্প্রতি ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা পঞ্চগড় জেলার জয়ধর ভাঙ্গা এলাকায় একটি স্ত্রী ‘নীল গাই’ উদ্ধার করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। এরপর সেটিকে পার্কে আনার জন্য আমার নেতৃত্বে বনবিভাগের একটি দল নিয়ে ছুটে যাই পঞ্চগড়ে। একটি ট্রাকে তুলে সেই ‘নীল গাই’ নিয়ে যাওয়া হয় গাজীপুর সাফারি পার্কে। সেখান থেকে অপর একটি পুরুষ ‘নীল গাই’ একই ট্রাকে তুলে সোজা নিয়ে আসা হয় চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে। এরপর বন্য প্রাণী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন শেডে রেখে চিকিৎসাসেবা দিয়ে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলার পর উন্মুক্ত করা হয় নির্দিষ্ট বেষ্টনীতে। তখন থেকেই ‘নীল গাই’ দম্পতিকে দেখতে ভিড় শুরু করেন দেশিবিদেশি পর্যটকদর্শনার্থীরা।

ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী চিকিৎসক হাতেম সাজ্জাদ জুলকার নাইন আজাদীকে জানান, ভারত থেকে পঞ্চগড় সীমান্ত হয়ে দেশে ঢুকে পড়ার পর উদ্ধারকৃত স্ত্রী ‘নীল গাই’টিকে ট্রাকে তোলাসহ একাধিক স্থানে নিয়ে যাওয়ার কারণে শরীরে বেশ ধকল হয়। এমনকি গায়ে সামান্য আঁচড়ও লাগে। তাই পার্কে আনার পর পরই বন্য প্রাণী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন শেডে রেখে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পর বেশ সুস্থ হয়ে ওঠে। বর্তমানে ‘নীল গাই’ দম্পতি বেশ ফুরফুরে মেঁজাজে নির্দিষ্ট বেষ্টনীতে সময় কাটাচ্ছে।

পার্কের প্রকল্প পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের উপবনসংরক্ষক আবু নাছের মো. ইয়াছিন নেওয়াজ আজাদীকে বলেন, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ‘নীল গাই’ দম্পতির আগমণ নিঃসন্দেহে অবিশ্বাস্য ঘটনা। পার্কে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণসহ প্রজননের ক্ষেত্রে এই ‘নীল গাই’ দম্পতি জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের আশা। আগামীতে ‘নীল গাই’ দম্পতির ঘরে নতুন অতিথির আগমণ হতে পারে, সেদিকেই লক্ষ্য রেখে পার্ক কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। এতে পার্কে আগত পর্যটকদর্শনার্থীদের যেমন আনন্দ দেবে, তেমনি করে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বিরল প্রজাতির এই বন্য প্রাণীর প্রজননে বিরাট ভূমিকা রাখতে এই পার্ক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্যাটারি রিকশা নালায়, শিশু নিখোঁজ
পরবর্তী নিবন্ধছয় দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের