দুই পাশে ফুলের রাজ্য। মাঝখানে বিশালাকার পুকুর। তাতে চলছে কায়াকিং। সন্ধ্যায় চালানো হয় পানির ফোয়ারা। ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ম্যাগনোলিয়া, শিউলি, হাসনাহেনা, কামিনী, বেলি, চেরিসহ দেশি–বিদেশি ফুলের সুবাস চারপাশে। মাঠজুড়ে নানা নকশায় লাগানো হয়েছে ফুলগাছ। সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের ডিসি পার্কে দ্বিতীয়বারের মতো ফুলের উৎসবে দর্শনার্থীরা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করেছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ফুল উৎসবে দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে নেদারল্যান্ডস থেকে বীজ এনে জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ফুটানো সাড়ে পাঁচ হাজার টিউলিপ। মাসব্যাপী এ আয়োজনকে আরো আকর্ষণীয় করতে ফুলের প্রদর্শনীর পাশাপাশি কয়েকটি সেলফি জোন ও পর্যটকদের জন্য রয়েছে সাম্পান বাইচের আয়োজন। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য রক্ষার্থে বিভিন্ন সময়ের ১৫টি নৌকা প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলার চিত্রশিল্পীদের প্রায় ২০০টি চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর জন্য রয়েছে। আগত দর্শনার্থীদের নিজেদের ছবির ক্যারিকেচার আঁকার ব্যবস্থা, বিনোদন প্রেমীদের জন্য রয়েছে সানসেট ভিউ পয়েন্ট, পিজিওন কর্নার, স্যুভেনির শপ, দিঘীতে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা, লোনা পানির ঝর্ণা। শিশু–কিশোরদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, দোলনা, স্প্রিং টয়, মেরিগো রাউন্ড, দোলনা, পেন্ট পেন, ফুট ট্রাম্পোলাইনসহ নানা আয়োজন। এছাড়া প্রতিদিন পুরো ফুল উৎসবকে জাঁকজমকপূর্ণ করতে মাল্টি কালচারাল বিশেষ আয়োজন ঘুড়ি উৎসব, ফায়ার ওয়ার্কস, ভায়োলিন শো, পুতুল নাচ, জাদু প্রদর্শনী। এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি থেকে জেরিন চৌধুরী তার চার বান্ধবীসহ ডিসি পার্কে ফুল উৎসব দেখতে এসেছিলেন। পার্কে ঢুকতেই এতবড় ফুলের রাজ্য দেখে তারা সবাই অবাক। হালিশহরের খুরশিদ জাহান বলেন, এত বড় পার্ক আমি আগে কখনও দেখিনি। এখানে এসে মন খারাপ থাকলেও সেটা ভালো হয়ে যাবে। ফুল, পুকুর, গাছ, নৌকা সব মিলিয়ে অসাধারণ। আমরা ফেসবুকে দেখে এখানে এসেছি। তবে এটা এত বড় পার্ক সেটা কল্পনাও করিনি। চট্টগ্রাম নগরের খুলশী এলাকার বাসিন্দা জাহিদ হাসানের বলেন, আগেও তিনি এখানে এসেছিলেন। তবে তখন আর এখন অনেক পার্থক্য। পুরো পার্কটা তার কাছে অসাধারণ লাগছে। আনোয়ারা এলাকা থেকে বেড়াতে আসা আবদুস সালাম বলেন, কয়েকজন বন্ধু মিলে বঙ্গবন্ধু টানেল দেখতে এসেছিলেন। সময় হাতে থাকায় ডিসি পার্কে ঘুরতে আসেন। পার্কটি কল্পনার চেয়েও সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, এক সময় জায়গাটি ছিল মাদকের আখড়া। গত বছর প্রথমবারের মতো ফুল উৎসবে লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে। মানুষের উৎসাহ দেখে এ বছর বৃহৎ পরিসরে মাসব্যাপী ফুল উৎসব করতে যাচ্ছি আমরা।
পার্কটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম বলেন, ডিসি পার্কে দ্বিতীয়বারের মতো ফুল উৎসব গতকাল থেকে শুরু হয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার দর্শনার্থীদের ভিড় প্রচুর দেখা যাচ্ছে।