ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হতে পারে অনাবাসিক ভোটার

চাকসু নির্বাচন প্যানেলভেদে প্রতিশ্রুতিতে বৈচিত্র্য

শামীম হোসাইন, চবি | মঙ্গলবার , ৭ অক্টোবর, ২০২৫ at ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

দুর্গাপূজার ছুটি শেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফের সরব হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ভোটারদের মন জয় করতে প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ করছেন অনুষদ, হল, কটেজ, শাটল ট্রেন থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণে। পোস্টার, হ্যান্ডবিল, ইশতেহার আর প্রচারণায় গতি বাড়ছে ঘণ্টায় ঘণ্টায়। তবে এবারের নির্বাচনের ফল নির্ধারণে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলতে পারেন অনাবাসিক ও নারী শিক্ষার্থীরা এমনটাই বলছেন পর্যবেক্ষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন গত ২৫ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছেন। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে এবার প্রার্থী সংখ্যা প্রায় ৯০৮ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ৪১৫ জন এবং হল ও হোস্টেলে ৪৯৩ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে নারী প্রার্থী ৪৮ জন, যা মোট প্রার্থীর প্রায় ১১ শতাংশ। বাকি ৩৬৭ জন পুরুষ প্রার্থী।

ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫শ ১৮জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ জন এবং ছাত্রী ১১ হাজার ৪৩৪ জন। সংখ্যালঘু ভোটার প্রায় পাঁচ হাজার, যা মোট ভোটারের ১৮ শতাংশ। অন্যদিকে অনাবাসিক শিক্ষার্থীই সংখ্যাগরিষ্ঠ ৭৭ শতাংশ বা প্রায় ২০ হাজার।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর ২২ শতাংশ আবাসিক, বাকি ৭৮ শতাংশ থাকেন কটেজ, মেস ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায়। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী সরাসরি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। এ কারণেই তাদের ভোটকে ‘ডিসাইডিং ফ্যাক্টর’ হিসেবে দেখছেন প্রার্থীরা। এক প্রার্থী বলেন, ‘অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা অরাজনৈতিক এবং স্বাধীনভাবে ভোট দেন। তাই তাদের আস্থা পেলে জয় অনেক সহজ হয়।’

১১ হাজারের বেশি নারী ভোটারও এবার নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নারী ভোট আকর্ষণে প্রতিটি প্যানেলই পরিচিত ছাত্রীদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। অতীশ দীপঙ্কর হলের ভোটও এবার বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ, এখানকার নারী ভোটাররা বেশ সক্রিয় ও অংশগ্রহণমূলক।

১৫ অক্টোবরের ভোট সামনে রেখে নারী প্রার্থীরাও প্রচারে বেশ সরব। তারা ইশতেহার বিতরণ করছেন, শাটল ট্রেন থেকে হল সব জায়গায় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। নারী প্রার্থীরা নিরাপদ ক্যাম্পাস, স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন, মাতৃত্বকালীন ছুটি, যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল ও শাটল ট্রেনে আলাদা বগির মতো দাবি তুলে ধরছেন।

তবে এ প্রচারের মাঝেই অনলাইনে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। সমপ্রীতির শিক্ষার্থী জোটের এক নারী প্রার্থী ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

যেসব নারী প্রার্থীরা এখন আলোচনায়: ভিপি পদে কোনো নারী প্রার্থী নেই। তবে জিএস পদে লড়ছেন ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের চৌধুরী তাসনীম জাহান শ্রাবণ। এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছাবেকুন নাহার ও জান্নাতুল ফেরদৌস। সমপ্রীতির শিক্ষার্থী জোট থেকে ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক পদে নাহিমা আক্তার দ্বীপা, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক পদে তাহসিনা রহমান, সহদপ্তর সম্পাদক পদে জান্নাতুল আদন নুশরাত এবং ছাত্রীকল্যাণ সহসম্পাদক পদে জান্নাতুল ফেরদাউস রিতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ছাত্রদলসমর্থিত প্যানেলের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক প্রার্থী শ্রুতিরাজ চৌধুরী ও ছাত্রীকল্যাণ সহসম্পাদক শাফকাত শফিকও আলোচনায়। স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস, ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক সারাহ চৌধুরী ও সহসম্পাদক মারিয়া আলম সক্রিয়ভাবে প্রচার চালাচ্ছেন। ভয়েস অব সিইউ প্যানেলের দপ্তর সম্পাদক প্রার্থী মুসলেমা খানম আঁখিও আলোচিত মুখ।

প্যানেলভেদে প্রতিশ্রুতিতে বৈচিত্র্য: সমপ্রীতির শিক্ষার্থী জোট নিরাপদ ক্যাম্পাস, শতভাগ আবাসন, উন্নত চিকিৎসা, যাতায়াত ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও টিএসসি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের জিএস প্রার্থী মো. শাফায়াত বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সমস্যা ও চাহিদাই আমাদের ইশতেহারের মূল জায়গা।’ সমপ্রীতির শিক্ষার্থী জোটের জিএস প্রার্থী সাঈদ বিন হাবিব বলেন, ‘আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না শুধু, বরং আগে যেমন শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব।’

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর প্রতীকী অংশগ্রহণ: এবারের নির্বাচনে বিশেষ দৃষ্টি কেড়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানে চোখ হারানো শিক্ষার্থী মো. শুভ হোসেন। তিনি সমাজসেবা ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চাকসু ভবনের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তার ইশতেহার ব্রেইল পদ্ধতিতে পাঠ করেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আরিফুল। যা ক্যাম্পাসে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু, রয়েছে অনিশ্চয়তা
পরবর্তী নিবন্ধগরু জবাই করে মাংস নিয়ে গেল চোর