ডিম আমদানির অনুমতির প্রভাব পড়েছে পাইকারি বাজারে। পাইকারি বাজারে ডিম বিক্রিতে ধস নেমেছে। বিক্রি নেমে গেছে প্রায় অর্ধেকে। একইসাথে কমেছে ডিমের দামও। তবে খুচরা বাজারে এর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। খুচরায় এখনো চড়া দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে।
ভোক্তারা বলছেন, সরকার ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে, আবার খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ১২ টাকা। এতে আমদানিকারকরা কম দামে ডিম আমদানি করলেও ভোক্তারা সুফল পাবেন না। তখন আমদানিকারকরা খুচরা বাজারকে টার্গেট করে পাইকারদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করবেন। এতে ঘুরেফিরে সিন্ডিকেটের দখলে থাকবে ডিমের বাজার। এই পরিস্থিতিতে ডিম আমদানির সুফল ভোক্তা নাকি আমদানিকারকরা পাবেন, এটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাহাড়তলী বাজারের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাহাড়তলী বাজারে প্রতিদিন ২৫ লাখ ডিম বিক্রি হয়। তবে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়ার কারণে গতকাল ১০ লাখ ডিম কম বিক্রি হয়েছে। ডিমের দাম কমতে পারে এমন আশঙ্কায় দোকানিরা ডিম কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। গত দুদিনে প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছে ১১ টাকা ৫০ পয়সা করে। গতকাল বিক্রি হয়েছে ১১ টাকা ৩০ পয়সায়। এছাড়া টাঙ্গাইলে গতকাল প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছে ১১ টাকায়।
এদিকে গতকাল নগরীর দামপাড়ার খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়। অর্থাৎ প্রতিটি ডিমের দাম প্রায় ১৩ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১ টাকা বেশি।
চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল শুক্কুর বলেন, ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর থেকে ডিমের দাম কমতির দিকে। পাইকারি বাজারে চাহিদা কম। সামনে ডিমের দাম আরো কমতে পারে। এছাড়া এখন গরম পড়ছে বেশি। গরমের কারণে ডিম তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। তখন চাইলেও ডিম বেশিদিন রাখা যায় না।
ডিম আমদানির প্রভাবের বিষয়ে জানতে চাইলে নাহার এগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুর রহমান টুটুল আজাদীকে বলেন, ডিম আমদানির কারণে প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে প্রভাব কেমন পড়বে তা বলার সময় এখনো আসেনি। বিষয়টি হচ্ছে, যারা আমদানিকারক তারা কত টাকায় বাজারে ছাড়বে তার ওপর নির্ভর করবে। তবে আমার জানা মতে, ভারতের পাঞ্জাবে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৭ রুপিতে। টাকার হিসাবে সাড়ে ১০ টাকার মতো। এছাড়া আমাদের দেশে একটি ডিমের ওজন ৫৩ গ্রাম। সেখানে ভারতীয় ডিমের আকার ছোট। ওজন ৪০ গ্রামের মতো। এছাড়া সরকার ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আমাদের দেশে একদিনে ডিমের চাহিদা রয়েছে ৪ কোটি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এটি ভালো দিক। তবে আমদানিকারকদের আমদানি নথি যাচাই করে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে। এখন প্রতিটি ডিমের আমদানি খরচ যদি ৬ টাকা হয় আর আমদানিকারক যদি ১২ টাকায় বিক্রি করেন, তাহলে তো আর হলো না। তখন আবারও সিন্ডিকেটের বৃত্তে ঘুরপাক খাবে ডিমের বাজার।
উল্লেখ্য, দাম নিয়ন্ত্রণে গত সোমবার ৪ প্রতিষ্ঠানকে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠান চারটি হলো মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স, টাইগার ট্রেডিং ও অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেড।