এক–দুই বছর আগেও খুচরায় প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ২০–২৫ টাকা। তবে চলতি বছর আলুর দাম ৩০–৩৫ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে বর্তমানে ৬৫–৭০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে দুই মাস আগে সরকার কোল্ড স্টোরেজে প্রতি কেজির দাম নির্ধারণ করে দেয় ২৭ টাকা, পাইকারিতে ৩২ টাকা এবং খুচরায় ৩৫–৩৬ টাকা। দাম বেঁধে দেওয়ার পর থেকে সরকার একদিনের জন্যও বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর করতে পারেনি। আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত সোমবার আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে সম্মতি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
ভোক্তারা বলছেন, কৃষি মন্ত্রণালয় তো জানে দেশে কী পরিমাণ আলুর উৎপাদন হয়েছে। দাম যখন বাড়ছে তখন তারা চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারত। সঠিক সময়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমদানির অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে আলুর রেকর্ড দাম বৃদ্ধি হয়েছে। এটি তাদের অদূরদর্শিতা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার দেড় মাস আগে আলুর দাম বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে আলু বিক্রি করেন। সেই সময় যদি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো আরো কঠোর হতো, তাহলে আলুর দাম এভাবে লাগামহীন হতো না। এমনকি ওই সময়ে যদি আমদানির অনুমতি দিত, তবে সেই আমদানির আলু এতদিনে বাজার পৌঁছে দাম ২০–২৫ টাকায় নেমে আসত। এখন আলু আমদানির অনুমতি দেওয়ায় সেই আলু আসতে এক–দুই সপ্তাহ সময়ও যদি লাগে ততদিনে ব্যবসায়ীদের আরো দাম বৃদ্ধি করার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার ডিম আমদানির অনুমতি দেয়। দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা আমদানির অনুমতি নিয়ে ডিম আমদানি করেননি। এতে বাজারে ডিমের দাম না কমে উল্টো আরো বেড়ে যায়।
গতকাল চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। খুচরা বাজারে সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়।
আমির হোসেন নামে একজন ভোক্তা বলেন, আমাদের দেশের আবহাওয়া আলু উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়া এক মাস পরে নতুন আলুর মৌসুম শুরু হবে। অথচ এ সময়ে ভোক্তাদের ৬০–৬৫ টাকায় আলু কিনতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কারসাজি থামাতে যথাসময়ে কৃষি মন্ত্রণালয় কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। এর ফলে ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেয়েছেন। আমরা শুনেছি, মুন্সিগঞ্জের কোল্ড স্টোরেজে যেসব আলু রাখা হয়েছে সেগুলোর উৎপাদন খরচ পড়েছে কেজিতে মাত্র ৯ টাকা। অথচ তারা এখন বিক্রি করছে ৩৮–৪০ টাকায়। একই অবস্থা পাইকারি ও খুচরা বাজারেও। প্রশাসন মাঝখানে অভিযান চালিয়ে কিছু সময়ের জন্য সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য করে। কিন্তু পরে আবার আগের রূপে ফিরে যান ব্যবসায়ীরা।
চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম আজাদীকে বলেন, পাইকারি বাজারে আলুর দাম আজকে (গতকাল) ৫ টাকার মতো কমেছে। তবে সরকার যদি কোল্ড স্টোরেজে বেঁধে দেওয়া দাম বাস্তবায়ন করতে পারত, তাহলে পাইকারিতে আলুর দাম কখনো ৩২ টাকার বেশি হতো না। খুচরা পর্যায়ে একজন ভোক্তা তখন ৩৫–৩৬ টাকা দরে আলু কিনতে পারত।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন আজাদীকে বলেন, সরকারের তদারকির অভাবে আজকে আলুর বাজারে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন সরকার আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে সেই নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। কারণ ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়ার পরেও বাজার নিয়ন্ত্রণ আসেনি। আমরা জানি, ভারতে যখন কোনো ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ সংকট দেখা দেয়, তখন তারা আমদানি নীতি অনেক সহজ করে দেয়। বিশেষ করে আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয়। আমাদের দেশে ডিম আমদানির অনুমতি নেওয়া ব্যবসায়ীরা দেখেছেন, সরকারকে আমদানির শুল্ক পরিশোধ করার পরে ডিমের দাম পড়ছে প্রায় দেশীয় খামারিদের দামের কাছাকাছি। তাই তারা আর আমদানি করেননি। এখন আলুর আমদানির অনুমতি দিলেও পণ্য আসতে কত সময় লাগবে সেটি কেউ জানে না। ভারতে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, তাদের রেশনিং কার্ড সিস্টেম চালু আছে। তাই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ভোক্তাদের জিম্মি করতে পারে না। আমাদের দেশে সরকার সংকটকালীন ভোগ্যপণ্য আমদানি করে যদি টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করে তবে বাজার এমনিতেই কমে যাবে।
উল্লেখ্য, আজ থেকে সরকার নির্ধারিত দামে হিমাগারে সংরক্ষিত আলু বিক্রি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
১৯ হাজার ৪শ টন আলু আমদানির অনুমতি : বাংলানিউজ জানায়, আলুর অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সে মোতাবেক ১৯ হাজার ৪০০ টন আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। গতকাল কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।