গরীব মানুষের প্রোটিনের উৎস ‘ডিম’ নিয়ে কারসাজি থেমে নেই। অভিযানের পরেও এখনো লাগামহীন ডিমের বাজার। এর মধ্যে অভিযানে হয়রানির অভিযোগ তুলে দুইদিন ডিম বিক্রি বন্ধ রাখে চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতি। তখন পুরো চট্টগ্রামের বাজার ডিম শূন্য হয়ে পড়ে। পাইকারী ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বাজারে বেশিরভাগ ডিমের সরবরাহ হয় টাঙ্গাইল থেকে। সরবরাহ টাঙ্গাইল থেকে হলেও বাজারের নিয়ন্ত্রণ করে ঢাকার তেঁজগাও সমিতি। তারা সারা দেশের ব্যবসায়ীদের কত টাকা দরে ডিম বিক্রি করবেন, সেটি জানিয়ে দেন। সেই মতে বাজার নিয়ন্ত্রিত হয়। বর্তমানে পাইকারীতে ১০০ পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৬০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ছে ১১ টাকা ৬০ পয়সা। গত দুইদিন আগে চট্টগ্রামের ডিমের চাহিদা কমার কারণে প্রতি পিস দামের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সায় নেমে আসে। এদিকে খুচরা বাজারে গতকাল সেই ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৬৫ টাকা। প্রতি পিসের দাম পড়ছে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। অর্থাৎ পাইকারীর তুলনায় প্রতি পিস ডিম ২ টাকা ১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তারা বলছেন, ডিমের বাজারে এখন অরাজকতা চলছে। পাইকারী হিসেবে প্রতি ডজন ডিমের দাম পড়ছে ১৩৯ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে ডজনে ২৬ টাকা টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। মুনাফা করারও তো একটা সীমা আছে।
কাজীর দেউরি বাজারের খুচরা বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা সকালে ডিম বিক্রি করেছি ১৬০ টাকায়। বিকেলে বিক্রি করেছি ১৬৫ টাকায়। পাইকারীতে বাড়ছে তাই আমরাও বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।
কাজীর দেউরির বাজারে কথা হয় ক্রেতা আবু তালেবের সাথে। তিনি বলেন, বাসায় বাচ্চাদের জন্য নিয়মিত ডিম কিনি। আগে এক ডজন কিনলেও এখন বাধ্য হয়ে কিনি এক হালি (৪টি)। ডিম তো আমদানি করতে হয় না, তারপরেও এভাবে দাম বাড়ার কোনো কারণ দেখছি না।
চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল শুক্কুর দৈনিক আজাদীকে বলেন, ডিমের দাম এখন আবারও বাড়ছে। আসলে এখানে আমাদের ব্যবসায়ীদের দোষ আছে। যার এক গাড়ি ডিম দরকার তিনি কিনে রাখছেন তিন গাড়ি। একই কাজটি খুচরা ব্যবসায়ীরাও করছেন। যা কারণে হঠাৎ করে ডিমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগটি নিচ্ছেন উৎপাদনকারীরা। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, বাজারে প্রতিটি পণ্যই নিয়ে চলছে সিন্ডিকেট। ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক পণ্য নিয়ে খেলছেন। এর সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে ডিম। ডিম আমাদের দেশের নিম্নবিত্তশ্রেণীর মানুষের প্রোটিনের অন্যতম প্রধান উৎস। সেই ডিমের দাম প্রতি নিয়ত বাড়ছে। গরীব মানুষ আগে যারা একটি ডিম দুইজনে ভাগ করে খেতেন, তাদের সেই ভাগটি নিঃসন্দেহে বাড়বে। তাদের পক্ষে হয়তো পরিবারের প্রতি সদস্যের জন্য একটি করে ডিম কিনে খাওয়া সম্ভব না।