ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আলোচিত অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলামসহ ১৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে কর্মস্থলে অনুপস্থিতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এই ১৮ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা জানানো হয়। তাদের মধ্যে তিনজন ডিআইজি, ছয়জন অতিরিক্ত ডিআইজি, চারজন পুলিশ সুপার, চারজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং একজন সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী ‘পলায়নের শাস্তিযোগ্য অপরাধে’ অভিযুক্ত হওয়ায় তাদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হল। সাময়িক বরখাস্তকালীন তারা খোরপোষ ভাতা পাবেন। ২০২৪ সালের অগাস্টে আওয়ামী লীগের সরকারপতনের পর থেকেই পুলিশের এ কর্মকর্তারা আর কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন না। তাদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে দেশের বাইরে চলে গেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে এর আগে কয়েক ডজন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হলেও নানা কারণে আলোচিত ডিবির হারুনের বিরুদ্ধে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হল আওয়ামী লীগের সরকার পতনের এক বছর পর।
২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিএমপির ডিবি প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন হারুন অর রশীদ। গণআন্দোলনে সরকার পতনের চার দিন আগে গত ৩১ জুলাই তাকে সেখান থেকে সরিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) দায়িত্ব দেওয়া হয়। সরকার পতনের পর থেকেই তার হদিস মিলছে না। ডিবিতে দায়িত্ব পালনকালে হারুন তার কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে আসা বিভিন্নজনকে ভাত খাইয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। সেসব ছবি নিজের ফেইসবুকে শেয়ার করতেন, যা নিয়ে বেশ আলোচনায় ছিলেন এ কর্মকর্তা। সবশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কারীকে ‘নিরাপত্তা’ দেওয়ার নামে ডিবি কার্যালয়ে কয়েকদিন আটকে রাখেন হারুন। তাদের আপ্যায়ন করার একটি ছবি আবার আলোচনা তৈরি করে। এর আগেও পুলিশের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকালে আলোচনায় আসেন হারুন অর রশীদ। প্রভাব খাটিয়ে নামে–বেনামে রাজধানীতে দুই ডজন বাড়ি, অর্ধ–শতাধিক ফ্ল্যাট ও প্লটের মালিক হওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুদক। হারুন ছাড়া বরখাস্ত বাকি ১৭ কর্মকর্তা হলেন ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার সঞ্জিত কুমার রায়, অতিরিক্ত ডিআইজি রিফাত রহমান শামীম, ডিএমপির সাবেক উপ–পুলিশ কমিশনার কাজী আশরাফুল আজীম, খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসান আরাফাত, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, খাগড়াছড়ি এপিবিএনের বিশেষায়িতি ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, এপিবিএনের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি শ্যামল কুমার মুখার্জী, রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ের পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা।
এছাড়া কঙবাজার এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজন কুমার দাস, ঢাকা পুলিশ স্টাফ কলেজের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাউদ্দিন, ঢাকা পুলিশ স্টাফ কলেজের সহকারী পুলিশ সুপার মো. হাবিবুল্লাহ দালাল, বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশানার রাশেদুল ইসলাম, ঢাকা ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান, আরএমপির সাবেক উপ–পুলিশ কমিশনার মো. আবু মারুফ হোসেন ও ডিআইজি কমান্ড্যান্ট মহা. আশরাফুজ্জামানও বরখাস্ত হয়েছেন।