ডিএনএস স্যালাইন ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে

| শুক্রবার , ২৮ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

করোনা মহামারির সময় একশ্রেণির অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ী বাজারে ওষুধের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছিলো। এতে এই ব্যবসায়ীরা প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিলো। মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে এরা কোটি কোটি টাকা আয় করেছিলো অমানবিক পন্থায়। করোনাকালের মত এবার ডেঙ্গুর ভয়াবহ সময়েও লোভীঅসাধু কতিপয় ব্যবসায়ী আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ডেঙ্গুরোগীদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য যে ডিএনএস স্যালাইনের দাম মাত্র ১০০ টাকা, তা চট্টগ্রামে ওষুধের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা করে। এরকম অমানবিক ঘটনার চিত্র ফুটে উঠেছে ২৬ জুলাই প্রকাশিত দৈনিক আজাদীর প্রতিবেদন ‘১০০ টাকার স্যালাইন ৫০০ টাকায় বিক্রি’তে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হয়েছে সিন্ডিকেট। ভাইরাসজনিত এ রোগে আক্রান্ত রোগীর জন্য অতি প্রয়োজনীয় ১০০ টাকা দামে ডিএনএস স্যালাইন কোথাও কোথাও বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। এ অবস্থায় হাজারী গলিতে অভিযান চালিয়ে ১৫০ লিটার ডেক্সট্রোজ নরমাল স্যলাইন (ডিএনএস) জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব স্যালাইন পরে একটি হাসপাতালের ফার্মেসিতে ন্যায্য দামে বিক্রি করা হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এস এম সুলতানুল আরেফীনের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে ৩টি দোকানকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, বাজারে ডিএনএস স্যালাইনের সংকট রয়েছে। আমরা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলব। বাজারে স্যালাইনের সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নজরদারি অব্যাহত থাকবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, চট্টগ্রামে গত কয়েকদিনে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারিবেসরকারি হাসপাতালে অন্তত ২ হাজার ২৪১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে এখন ভর্তি আছেন ২৭৪ জন। রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিএনএস স্যালাইনের চাহিদাও বেড়েছে। তিনি বলেন, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ফার্মেসিগুলোতে ডিএনএস স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। স্যালাইনের ব্যাগে মূল্য ১০০ টাকা লেখা থাকলেও বাড়তি চাহিদার সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে ফেলেছেন। তিনি আরো বলেন, এই স্যালাইন সোমবার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি ওষুধের বাজার হাজারী গলিতে অভিযান চালানো হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটের আসার খবরে বরাবরের মতো দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। বেঙ্গল ফার্মেসি ও চট্টলা ফার্মেসি নামক দুটি দোকানে মাত্র ১৫০ লিটার ডিএনএস স্যালাইন পাওয়া যায়। পরে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ ফার্মেসিতে ন্যায্য দামে তা বিক্রি করা হয়। এরপর হাজারী গলির খাজা মার্কেটের একটি দোকান থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ওষুধ জব্দ করা হয়। তাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে তিন দোকানে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ। আবার ডেঙ্গুরোগীদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য দরকার হয় ডিএনএস স্যালাইন। সেই ওষুধ ও ডিএনএস স্যালাইন যদি নাগালের বাইরে চলে যায়, তাহলে রোগীদের পড়তে হয় বিপাকে। অভিযোগ আছে, এক শ্রেণির ওষুধ কোম্পানি ও সিন্ডিকেট বেশি মুনাফার লোভে তৈরি করছে বিভিন্ন ধরনের ভেজাল ওষুধ ও কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে ডিএনএস স্যালাইনের। শুধু দেশিয় ওষুধই ভেজাল হচ্ছে এমন নয়; এখন বিদেশি ওষুধও ভেজাল করে অভিজাত ফার্মেসিগুলোতেই দেদারছে বিক্রি করছে। প্রতিদিনই বাড়ছে এই চক্রের দৌরাত্ম্য। যার কারণে হুমকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। এসব ওষুধ সেবন করে রোগীরা আক্রান্ত হচ্ছে জটিল ও কঠিন রোগে। অনেক সময় এসব ওষুধ সেবনে মারাও যাচ্ছে রোগী। আবার কৃত্রিম সংকটে পাওয়া যাচ্ছে না ডিএনএস স্যালাইন। ফলে অসহায় হয়ে পড়ছে রোগীরা। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালালেও কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের এই মনোভাব অমানবিক। সরকারের আইনের দুর্বলতার কারণেই ওষুধের দাম যেমন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না, তেমনি সিন্ডিকেটকেও দমানো যাচ্ছে না। ডিএনএস স্যালাইন ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের সরবরাহ স্বাভাবিকভাবে চালু রাখা জরুরি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেই হবে। অভিযোগ পেলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা নস্যাৎ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে