ডিউটি অফিসারকে ওসি পরিচয়ে ফোন, বিকাশে হাতানো হলো ৪৪ হাজার টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার , ৯ অক্টোবর, ২০২৪ at ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ

সিএমপির কর্ণফুলী থানার ডিউটি অফিসার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. জাকির হোসেনকে ডিবি ওসি পরিচয়ে হাসান নামে এক ব্যক্তি ফোন করে অভিনব উপায়ে কর্ণফুলীর মো. রায়হান (২১) নামে এক যুবক থেকে বিকাশে ৪৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে ৩টার মধ্যে কর্ণফুলী থানায় এ ঘটনা ঘটে। এতে প্রতারণার মাধ্যমে এক বিকাশ চক্র রায়হানের টাকাটা হাতিয়ে নেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী থানার ওসি (তদন্ত) মো. মেহেদী হাসান।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলীতে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক কলেজছাত্রীকে (১৭) অপহরণের অভিযোগে আবদুল কাইয়ুম ফাহাদ (১৯) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার ফাহাদ প্রতারণার শিকার রায়হানের বড় ভাই। এরা কর্ণফুলীর শিকলবাহা (২ নম্বর ওয়ার্ড) খলিলুর রহমানের বাড়ির আবদুস সালাম মনুর ছেলে।

ভাইকে পুলিশে আটক করেছে এমন সংবাদ পেয়ে থানায় আসেন রায়হান। এটি সকাল ১১টার দিকের ঘটনা। তখন কর্ণফুলী থানার ডিউটি অফিসার ছিলেন এএসআই মো. জাকির হোসেন।

ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে যা বলেছেন এএসআই জাকির হোসেন। হুবহু তা হলো-‘থানায় সকাল ১১ টা ৪০ মিনিটের দিকে খুব ব্যস্ত ছিলাম। তখন হঠাৎ ডিউটি অফিসারের সরকারি ফোন নম্বরে একটা নম্বর থেকে কল আসে। লাস্ট নম্বর সম্ভবত ডাবল জিরো হবে। পরে ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে ডিবি পুলিশের ওসি হাসান পরিচয় দেন।

এরপর তিনি জানতে চান, ‘তোমার হাজতে আসামি কয়টা আছে। উত্তরে আমি জানাই একজন। তখন ডিবি ওসি জানান, ‘আসামিটা কালকের ওটা না। নারী ও শিশু অপহরণ মামলার। তখন আমি জানাই হ্যা।’

পরে কথিত ডিবি ওসি জানান, ‘তুমি আসামিকে জিজ্ঞেস করো। আসামির কেউ থানায় আছে কিনা। আমি মনে করছি তিনি সিসিটিভিতে সব দেখতেছেন। কর্ণফুলী থানার ওসি স্যার যেহেতু আগে ডিবিতে ছিলেন। আমি মনে করছি স্যার হয়তো ডিবির কাউকে বিষয়টি জানিয়েছেন।’

পরে আমি ডিউটি অফিসারের চেয়ার থেকে উঠে হাজতের আসামিকে জিজ্ঞেস করি তার কোন আত্মীয় স্বজন থানায় এসেছে কিনা। তখন আসামি জানান, রায়হান নামে এক ভাই থানার বাহিরে আছেন। তখন এ কথা শোনে ডিবি ওসি রিকুয়েস্ট করেন, ‘ভাইকে যেন ফোনটা একটু দিই। কথা মতো আমি বাহিরে গিয়ে আসামির ভাইকে খুঁজে ফোনটি ধরিয়ে দিয়ে চলে আসি।’

যেহেতু আমার একটু তাড়াহুড়ো ছিলো। তার ঠিক দেড় দুই মিনিট পর ফোনটি আবার আমাকে দিতে আসে রায়হান। তখনো কিন্তু লাইন কাটেননি ওসি হাসান। পরে ওসি আরও জানান, ‘আসামির ভাই যেন থানার ভিতরে না আসেন। আমিও সরল মনে তা বলে কাজ করতে থাকি।

এরপর, বিকেল ২ টা ৪০ মিনিটের সময় হঠাৎ রায়হান এসে আমাকে বলল, ‘আপনার নাম বলে যাকে ফোন ধরাই দিয়েছিলেন সে ৪৪ হাজার টাকা বিকাশে নিয়ে গেছে। আমি তখন বলি, কোন স্যার। তখন রায়হান বলে, ‘ওই যে আপনি যাকে উর্ধ্বতন অফিসার বলে ফোন ধরাই দিলেন।’

তখন মনে পড়লো ঘটনাটি। রায়হান জানালো, তার ভাইকে ৫ মিনিটের মধ্যে ছেড়ে দিবে, ওসি স্যারের সাথে কথা বলবে, তদন্ত স্যারের সাথে কথা বলবে। এসব কথা বলে আমার কাছ থেকে ৪৪ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। তখন সাথে সাথে থানার সেকেন্ড অফিসারকে আমি বিষয়টি জানাই। পরে ওসি তদন্ত স্যার আমাকে ডেকে সব জানতে চান। আমি তো সরল বিশ্বাসে ফোনটা দিলাম। কিন্তু ঘটনাটি ঘটলো ভিন্ন।’

এ ঘটনায় বিকাশ প্রতারণার অভিযোগ সূত্রে কর্ণফুলী থানার ওসি (তদন্ত) মেহেদী হাসান তাৎক্ষণিক অনুসন্ধানে জানতে পারেন, যে বিকাশ প্রতারক টাকা নিয়ে গেছে। সেটা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানায়। প্রতারকের আইডি কার্ডে নাম বাবুল মিয়া। ওর নাম্বারেই টাকাটা গেল। পরে একটি নম্বরে পেমেন্ট করে ১৪ হাজার টাকা ব্যবহার করেন। অন্য আরেকটি নম্বরে সেন্টমানি করেন ২৫ হাজার টাকা। বাকি টাকা ওই নম্বরে ছিলো। পেমেন্ট নম্বরের লোকেশন আবার রাজশাহী গোদাগাড়ী থানায়।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ওসি (তদন্ত) মেহেদী হাসান বলেন, ‘যতটুকু তথ্য পেলাম তাতে মনে হলো টাকাটা নেওয়ার সাথে সাথেই বিভিন্ন নম্বরে ট্রান্সজেকশন করেছে। যদিও বিকাশ কেয়ার সেন্টারে অভিযোগ দেওয়া হলো। বাকিটা ভুক্তভোগীর অভিযোগ মতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ প্রসঙ্গে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ইন্সপেক্টর সঞ্জয় গুহ বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণায় যুক্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে থাকেন। একটি কৌশলের কথা ফাঁস হয়ে গেলে আরেক কৌশল ব্যবহার করে। একেক বিকাশ নম্বর একেক জেলায়। অনেক বড় বিস্তৃত প্রতারক চক্র। জটিল’ অথচ বিকাশ কতৃপক্ষের শ্লোগান রুখবো প্রতারক, রাখবো টাকা নিরাপদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমরা সংখ্যালঘুতে বিশ্বাস করিনা, সবার পরিচয় বাংলাদেশী- মীর হেলাল
পরবর্তী নিবন্ধ‘কারাগারে ঘুমিয়ে থাকা ফজলে করিমের সেই ছবিটি ভুয়া’