চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, বদলি বাণিজ্য, কমিশন বাণিজ্য, ক্লিনিক ব্যবসার জন্য আলোচিত চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তদন্ত শুরু করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২৬ আগস্ট বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ফয়সালের বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠির প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শরীফকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আজ রবিবার (৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন কেনাকাটা ও সরবরাহ সংক্রান্ত দরপত্রের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছেন তিনি। বিডিনিউজ
মোহাম্মদ শরীফ বলেন, “চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, কমিশন বাণিজ্য নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করতে জেনারেল ও চমেক হাসপাতালকে চিঠি দিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে।”
চিঠিতে বলা হয়, ফয়সল ইকবাল চৌধুরীর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এসব তথ্য দরকার।
নগর আওয়ামী লীগ নেতা ফয়সল ইকবালের বিরুদ্ধে হাসপাতালে দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, বদলি বাণিজ্য, বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণসহ নানা অভিযোগ উঠে বিভিন্ন সময়।
তার বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়ে দুদকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মমকর্তা বলেন, “উনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেটার প্রেক্ষিতেই এই তদন্ত প্রক্রিয়া। দুদক চেয়ারম্যান বরাবরে যে লিখিত অভিযোগের পর এই তদন্ত শুরু হলো তাতে ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ আনা হয়। এতে বলা হয়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সব ডাক্তারের পদোন্নতি ও বদলি অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন।”
২০১৯-২০ সালে চমেক হাসপাতালের ৪২ কোটি টাকার টেন্ডার ফয়সাল ইকবাল একাই নিয়ন্ত্রণ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। নিজের মামার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন কাজ ফয়সাল ইকবাল পাইয়ে দেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় তিনি কাউকে ‘পরোয়া করেন না’ বলেও অভিযোগ করা হয়েছে ঐ আবেদনে।
চমেক হাসপাতালের খাবার সরবরাহ এবং আউটসোর্সিংসহ বিভিন্ন সরবরাহ কাজের টেন্ডারও তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন।
নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টেন্ডার বাগিয়ে নেন এবং অন্য কেউ টেন্ডারে অংশ নিলে তিনি নেগোশিয়েশন করেন। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
২২ বছর ধরে চমেকে ফয়সাল ইকবালের আধিপত্য চলছে এবং এর মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
দুদক চমেক ও জেনারেল হাসাপাতালে দেওয়া চিঠিতে, ২০০৮ সাল থেকে হওয়া দরপত্রের বিভিন্ন ফাইলও তলব করেছে।
কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে গত ১২ বছরে কতটি দরপত্র তারা পেয়েছে, কেউ কালো তালিকাভুক্ত কি না এসব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে বলা হয়।
পাশাপাশি হাসপাতালে আউটসোর্সিং কর্মী নিয়োগের বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়। একইভাবে জেনারেল হাসপাতালের দরপত্র বিষয়েও নাম উল্লেখ করে তথ্য তলব করা হয়।
এ বিষয়ে ফয়সল ইকবাল চৌধুরীর বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি না করা, বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের উদ্যোগে পরিত্যক্ত হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য চালু করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠে ফয়সাল ইকবালের বিরুদ্ধে।