এমন একটি চমৎকার প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হচ্ছে– এবারের ‘বিশ্ব ডায়বেটিস দিবস’। যা প্রতি বছর ১৪ই নভেম্বর বিশ্ব জুড়ে পালিত হয়। বিশ্ব ডায়বেটিস ফেডারেশন (আই.ডি.এফ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯১ সালে ১৪ই নভেম্বরকে বিশ্ব ডায়বেটিস দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। কেন এই দিনটিকে বেছে নেয়া হলো– এই দিনে বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক বেনটিং জন্ম নিয়েছিলেন এবং তিনি বিজ্ঞানী চার্লস বেষ্টের সাথে একত্রে ইনসুলিন আবিষ্কার করেছিলেন।
ডায়বেটিসের মতো ক্রনিক এবং জীবন ব্যাপী রোগ ব্যক্তি, পরিবার, দেশ এমনকি সারা পৃথিবীর জন্য গুরুতর ঝুঁকি বহন করে– এমন সত্যটি জাতিসংঘ অনুধাবন করে ২০০৬ সালে একে জাতিসংঘ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। পৃথিবীতে ২৫০ মিলিয়নের বেশি মানুষ ডায়বেটিস নিয়ে জীবন যাপন করছে। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশে তো অর্ধেক মানুষ জানেই না তাদের ডায়বেটিস আছে। যাদের আছে তারাও নিয়ন্ত্রনে রাখার সঠিক কৌশল জানে না। ডায়বেটিসের ঝুঁকি
শনাক্ত না করা গেলে বাঁ ডায়বেটিস সঠিক নিয়মে নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে ঝুঁকি বাড়ে। বিশ্বে প্রতি বৎসর ডায়বেটিসের কারণে মৃত্যু হয় ১০ লাখের ও বেশি মানুষের। আন্তর্জাতিক এক গবেষনায় উঠে এসেছে বাংলাদেশে মৃত্যুর কারণ হিসেবে সপ্তম রোগ এই ডায়বেটিস।
অবাক করার মতো ব্যাপার প্রতি দুই জনের ডায়বেটিস রোগীর মধ্যে একজন জানেই না যে তিনি ডায়বেটিসে আক্রান্ত। আর এটাই হচ্ছে ভয়ানক বিপদের কথা। এই রোগের জটিলতাগুলো রোগের প্রাথমিক ধাপ থেকেই শুরু হয়।
ঝুঁকিসমূহ হলোঃ
১/ রোগীর পায়ের অনুভূতি কমে রক্ত সঞ্চালন কমে যেতে পারে। যেইক্ষেত্রে কাঁটা ছেঁড়া হলে সহজে শুকাতে চায় না। পায়ে গ্যাংগ্রিন হয়ে পা কেটে পর্যন্ত ফেলতে হতে পারে।
২/ ওজন অতিরিক্ত থাকলে ফ্যাটি লিভার হতে পারে।
৩/ কায়িক শ্রম কম করলে বা সম্পৃক্ত চর্বির খাবার বেশি খেলে অথবা সুষম খাবার না খেলে হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ে।
৪/ ষ্ট্রোকের ঝুঁকি ডায়বেটিসের রোগীর অনেক বেশি।
৫/ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কিডনী জটিলতাও বাড়ে।
৬/ ডায়বেটিস বেশি থাকলে চোখের জটিলতাসহ রোগী অন্ধ হয়েও যেতে পারে।
৭/ এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের চর্মরোগ এবং অন্য যেকোনো ধরণের রোগ থাকলে তা বেড়ে গিয়ে জটিল আকার ধারণ করে যদি ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে না থাকে।
ডায়বেটিস কাদের হতে পারে : ১/ যাদের বংশে আছে, ২/ যাদের ওজনাধিক্য আছে, ৩/ যাদের ওজন মাত্রার চেয়ে অনেক অনেক কম অর্থাৎ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে, ৪/ কিছু কিছু ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে খেলে হতে পারে, ৫/ শারীরিক পরিশ্রম বা অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করলে হতে পারে।
ডায়বেটিস হলে করণীয় :
ডায়বেটিসের জনক ডাক্তার মোহাম্মদ ইব্রাহিম স্যার বলে গেছেন যে– ডায়বেটিসের চিকিৎসা ৩টা ‘ উ ’ এবং ২টা ‘ঊ ’
১/ D-Diet– বা খাদ্যব্যবস্থা
২/ D-Discipline বা শৃঙ্খলা
৩/ D-Drug বা ওষুধ
৪/ E-Exercise বা ব্যায়াম
৫/ E-Education বা শিক্ষা।
প্রথম চিকিৎসা যেহেতু ডায়েট বা খাদ্যব্যবস্থা, আর আমিও পুষ্টিবিদ তাই খাবার নিয়েই বলতে চাই।
১/ ডায়বেটিক রোগীকে অবশ্যই ৫ বেলা খাবার খেতেই হবে, ২/ প্রতিবেলার খাবার খেতেই হবে সময়মতো এবং পরিমাণমতো, ৩/ ময়দা না খেয়ে আটার তৈরি খাবার খেলে ডায়বেটিস ভালো নিয়ন্ত্রণে থাকে, ৪/ আঁশ জাতীয় খাবার বাড়াতে হবে, ৫/ কাঁচা এবং টাটকা বিশেষ করে মৌসুমী ফল খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে, ৬/ সপ্তাহে ৩ দিন মাছ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে, ৭/ সপ্তাহে ৫ দিন ১৫০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে হবে, ৮/ দেহের ওজন আদর্শ ওজনে রাখতে হবে।
বন্ধ করতে হবে : ১/ অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন, ২/ ফাস্টফুড বা ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার প্যাকেটজাত, বেকারি খাদ্য, কোমল পানীয় বাদ দিতে হবে, ৩/ একটানা লম্বা সময় বসে থাকা যাবে না, ৪/ ধূমপান বাদ দিতে হবে, ৫/ চিনি–গুড়–মধু বাদ দিতে হবে।
ডায়বেটিস প্রতিরোধের জন্য বড় কোনো আয়োজনের প্রয়োজন নেই। কিছু সাধারণ নিয়ম জানলেই প্রতিরোধ করা যায়, নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং ঝুঁকি মুক্ত, কর্মক্ষম জীবন যাপন করা যায়। আসুন ডায়বেটিস সম্পর্কে জানি। চিকিৎসকের পরামর্শে চলি।