ডাম্পিং স্টেশনের জন্য ৮১ শতাংশ জায়গা কেনার অনুমোদন

| রবিবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৭:১৮ পূর্বাহ্ণ

পটিয়া পৌরসভা

শফিউল আজম, পটিয়া 

অবশেষে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় পটিয়া পৌরসভায় ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনে ৮১ শতাংশ জায়গা কেনার অনুমোদন দিয়েছে। এতে নতুন করে আলোর মুখ দেখছে পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশন গড়ে তোলার। আবর্জনা ফেলার নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশনের জন্য পৌরসভায় বসবাসকারী প্রায় আড়াই লাখ মানুষের অপেক্ষা প্রায় ৩০ বছরের। জায়গা কেনার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের মাধ্যমে অবশেষে সে অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে বলে মনে করছেন পৌরবাসী।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রস্থ স্মারকের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ডাম্পিং স্টেশন বা সেনিটারি ল্যান্ডফিল তৈরির জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণের শর্তে নিম্নোক্ত তফসিলভুক্ত ৮১ শতক ভূমি ক্রয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন নির্দেশক্রমে প্রদান করা হল।

এদিকে প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছর পর ডাম্পিং স্টেশনের জন্য জায়গা ক্রয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়ায় পৌরবাসীর মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। পটিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুল্লাহ পলাশ জানান, পৌরসভা প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনেও ডাম্পিং স্টেশন বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যুগোপযোগী কোনো ব্যবস্থা না হওয়া খুবই দুঃখজনক। আশা করি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পটিয়া পৌরবাসী এবার সুফল পাবে। এদিকে পৌরসভার আওতাধীন একাধিক সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে পৌরশহরের খাল, সড়ক, মহাসড়কসহ একাধিক স্পট। নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় যেখানেসেখানে ময়লাআবর্জনা ফেলায় বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় বসবাসকারীদের দুর্গন্ধ এখন নিত্যসঙ্গী। পাশাপাশি পৌরশহরকে বেষ্টনকারী কয়েকটি খাল এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও এসব খালে বর্জ্য ফেলায় দূষিত হচ্ছে পানি। পৌর শহরে বসবাস করা অনেকে গোসলসহ গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার করছেন এই দূষিত পানি। এমনকি হাসপাতালে রোগীদের ব্যবহৃত বিষাক্ত ময়লাও ফেলা হয় উন্মুক্ত স্থানে। অপরিকল্পিতভাবে ময়লাআবর্জনা ফেলায় পৌর শহরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। ময়লায় বেওয়ারিশ কুকুর, বিড়াল এবং গবাদি পশুদের বিচরণে ছড়িয়েছিটিয়ে দুর্গন্ধে পরিণত হচ্ছে চারপাশ। দুর্গন্ধের পাশাপাশি ওই স্থান থেকে রোগজীবাণু ছড়াচ্ছে। এ নিয়ে পৌরবাসীর ক্ষোভ থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি তারা জমির অভাবে ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন করতে পারেননি।

জানা যায়, ১৯৯০ সালের ৯ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা লাভের একবছরের মাথায় পটিয়া পৌরসভা প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। প্রায় ১০.৩৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষের বসবাস। নাগরিক সুবিধার জন্য রয়েছে পাঁচটি হাটবাজার, একটি কসাইখানা, ২০.৩৮ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, কাঁচারাস্তা ০৮.২০ কিলোমিটার, ইট বিছানো রাস্তা ৬৪.২৬ কিলোমিটার, একটি রেল স্টেশন, ১৩৯০টি সড়কবাতি, ৪১০টি নলকূপ, হোল্ডিং সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার, কালভার্ট ৩০, মহাবিদ্যালয় ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় (বালক) , মাধ্যমিক বিদ্যালয় (বালিকা) , মাধ্যমিক বিদ্যালয় যৌথ ১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০, আলিয়া মাদ্রাসা ২, দাখিল মাদ্রাসা ৩, পিটিআই ১, কিন্ডারগার্টেন ১৪, ওয়ার্ড ৯টি, সড়কবাতি ১৩৯০টি, পাবলিক টয়লেট ২, ফায়ার সার্ভিস ১, সরকারি হাসপাতাল ১, বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ৪, পশু হাসপাতাল ১, মসজিদ ৬৫, মন্দির ১৫, গীর্জা ১, প্যাগোডা ১, বাস স্টেশন ১, লবন মিল ৪১, রাইচ মিল ৩, বিসিক শিল্প নগরী ১, সাবজজ আদালত ১, ডাকবাংলো ১, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১, বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ ১, খাদ্য গুদাম ১ ব্যাংক ১৫ এবং ৫ টি হাটবাজার ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটিয়া পৌরসভার মেয়র আইয়ুব বাবুল জানান, পটিয়া পৌরসভায় ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগ ৮১ শতাংশ জায়গা ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে। এ ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনে একধাপ এগিয়ে গেল। পৌরসভার ইন্দ্রপুলস্থ সুচক্রদন্ডী এলাকায় এ প্রকল্পটি স্থাপন করা হবে। প্রাথমিকভাবে এখানে বর্জ্য থেকে প্লাস্টিক ও অন্যান্য আবর্জনা বাছাই করে একটি প্লাস্টিক মেশিন ও কম্পোষ্ট সার উৎপাদনে পদক্ষেপ নেয়া হবে। ধারাবাহিকভাবে এ প্রকল্পটি আরো সম্প্রসারণ করে একটি আধুনিক ও বহুমুখী প্রকল্পে রূপান্তর করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাহাড় কাটতে গিয়ে রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু, বনবিভাগের মামলা
পরবর্তী নিবন্ধ১৩ দিন পর ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু