রেলমন্ত্রী মোঃ জিল্লুল হাকিম ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি গতকাল শনিবার কুমিল্লার লাঙ্গলকোটে ট্রেন দুর্ঘটনার স্থান পরিদর্শন করেছেন। গত ১৭ মার্চ এই স্থানে চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহের জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়।
দুর্ঘটনার সময় দুর্ঘটনাকবলিত মানুষকে সহযোগিতা করায় স্থানীয় সর্বস্তরের জনগণের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী। আর ফজলে করিম চৌধুরী বলেছেন, ট্রেনের দুর্ঘটনায় যারা জড়িত তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। পরিদর্শন শেষে বিজয় এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার বিষয়ে রেলওয়ের কর্মকর্তা–কর্মচারী, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সুধী সমাজের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রেলমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত মানুষকে উদ্ধার করে তাদেরকে চিকিৎসাসেবায় সহযোগিতা, মালামাল বুঝিয়ে দেওয়া এবং গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া, গন্তব্যে পৌঁছার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করার কাজ যারা করেছেন তারা অবশ্যই প্রশংসনীয় কাজ করেছেন।
মন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রেলকে আধুনিক ও উন্নত করা হয়েছে। রেল এখন অনেক দূর এগিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে ভাঙ্গা–বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন পৌঁছে দিয়ে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে জনগণের দোরগোড়ায় রেল সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। আমরা সেই অনুযায়ী রেলের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। একটি গোষ্ঠী রেলের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে জাতীয় সম্পদ রেলকে ধ্বংস করে ফায়দা লুটতে চায়, ট্রেনে আগুন দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাস করে, রেললাইন তুলে ফেলে জনগণের জানমালের ক্ষতি করছে। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করা কঠিন কাজ নয়। সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে, চেয়ারম্যান–মেম্বার ও স্থানীয় প্রশাসন ঐক্যবদ্ধ থাকলে এসব করার সুযোগ পাবে না। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন জনগণ আর তাদেরকে চায় না।
জিল্লুল হাকিম বলেন, হাসানপুরে ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়ে কারো কোনো প্রকারের শৈথিল্যে বা দায়িত্বে অবহেলার কারণ থাকলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সংসদীয় কমিটি, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারাসহ সকলে মিলে চেষ্টা করা হচ্ছে রেলের যাত্রীদের নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। হাসানপুরে দুর্ঘটনার বিষয়ে আজ কামাল নামের এক ব্যক্তি ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কয়েকটা ছেলের ফিসপ্লেট খোলার কথা বলেছে। রেললাইনের দুর্বল স্লিপারের কথা এসেছে, রেললাইন মেনটেইনেন্সের দুর্বলতার কথা অনেকে বলেছেন। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। এ সকল দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য আমরা সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। রেলপথ অনেক দীর্ঘ পথ। রেলের কর্মী, আরএনবি, রেল পুলিশ, রেলের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের দ্বারা সার্বিক নিরাপত্তা সম্ভব নয়। দীর্ঘ এ পথের নিরাপত্তার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে ইউএনও, ডিসিসহ সর্বস্তরের জনগণের সহযোগিতা দরকার। আমরা সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করতে পারব।
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে ফজলে করিম : রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে দেশের রেল যোগাযোগ দ্রুত এগিয়ে গেছে। দেশের যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম রেলপথের নিরাপত্তায় রেলওয়ের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনসাধারণকে এগিয়ে আসতে হবে। কুমিল্লার লাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুরে ময়মনসিংহগামী বিজয় এঙপ্রেস ট্রেনের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় যারা জড়িত তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
গতকাল কুমিল্লার লাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুরে ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে তিনি এসব কথা বলেন। তার সঙ্গে ছিলেন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিনিধিদল। ফজলে করিম বলেন, রেললাইন পাহারায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনসাধারণকে এগিয়ে আসতে হবে। রেল আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে। যারা রেলের মতো জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করে তারা জাতীয় দুশমন।
এ সময় রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম ও নুরুন নাহার, রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোঃ হুমায়ুন কবির, রেলওয়ের ডিজি সরদার সাহাদাত আলী, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা, রেলওয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান, রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।