ঈদে চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেনে টিকিটবিহীন ভ্রমণকারীদের কাছ থেকে ব্লক চেকিংয়ে ৪১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছেন রেলের চট্টগ্রাম বিভাগের টিটিইরা। রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের টিটিইরা জানান, ঈদের পাঁচ দিন আগে থেকেই শুরু হয় ব্লক চেকিং কার্যক্রম। গত মাসের ২৬ তারিখ থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত অর্থাৎ ৩০ তারিখ অব্দি ব্লক চেকিংয়ের মাধ্যমে যারা টিকিট বিহীন ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন তাদের কাছ থেকে ২৭ লাখ ৩১ ৭৬০ টাকা রাজস্ব আদায় করেন।
এছাড়া ঈদের পরে চলতি মাসের পাঁচ তারিখ পর্যন্ত টিটিইরা বিভিন্ন ট্রেনে যারা টিকিট ছাড়া ভ্রমণ করেছেন তাদের থেকে ১৪ লাখ ১৮ হাজার ২৩০ টাকা আদায় করেন। যা পূর্বের যে কোনো সময়ের চাইতে বেশি। বিনা টিকিটে যাত্রী ভ্রমণকারীদের কাছ থেকে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় করে দিয়েছেন বলে জানান চট্টগ্রাম হেডকোয়ার্টারের টিটিইরা।
এদিকে ঈদের পরে কঙবাজারগামী ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। কঙবাজারে ট্রেন চালু হবার পর থেকে এই পথে যাত্রীদের আগ্রহ সবার শীর্ষে। যাত্রীদের চাপ ও চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে ঢাকা থেকে কঙবাজার পর্যন্ত চলাচলকারী কঙবাজার এঙপ্রেস ও পর্যটক এঙপ্রেসের পাশাপাশি গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রবাল ও সৈকত নামে আরো দুই জোড়া আন্ত:নগর ট্রেন সংযুক্ত করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যার ফলে এই পথে বিপুল সংখ্যক যাত্রী চলাচলের সাথে বেড়েছে রেলওয়ের আয়। শুধু কঙবাজারের ট্রেনে ঈদ পরবর্তী পাঁচদিনের টিকিটে ভ্রমণকারীদের কাছ থেকে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৬২০ টাকা আদায় করা হয়ছে।
রেলের রাজস্ব বৃদ্ধিতে টিটিইদের ভূমিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম হেডকোয়ার্টারের এসআরআই (সিনিয়র ইন্সপেক্টর) মোশাররফ হোসেন বলেন, এই বারের ঈদে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অনেকটাই অর্জন হয়েছে। বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে প্রায় সবাইকে টিকিটের আওতায় আনতে পেরেছি। টিটিইদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই কার্যক্রম সফল হয়েছে। যার দরুণ বিগত বছরের তুলনায় ১০ লাখ টাকার বেশি আয় হয়েছে। ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মাধ্যমে বিনা টিকিটের যাত্রী শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।
বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম হেডকোয়ার্টারের জুনিয়র টিটিই টিটু দত্ত বলেন, বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধ টিটিইদের একটি চলমান প্রক্রিয়া ও প্রধান দায়িত্ব। শতভাগ বিনা টিকিটের যাত্রীদের টিকিটের আওতায় আনার লক্ষ্যে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার অধীন চট্টগ্রাম ও লাকসাম টিটিই হেডকোয়ার্টার। এই দুই হেডকোয়ার্টারে কাজ করছে প্রায় চল্লিশ জন টিটিই। রেলওয়ের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি যাত্রী সেবা ও নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করেন তারা। এই দুই টিটিই হেডকোয়ার্টার যৌথভাবে এই ঈদে ষাট লাখ টাকার বেশি রাজস্ব দিয়েছে রেলওয়েকে।
এই অর্জনের ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা তৌষিয়া আহমেদ টিটিইদের ভূয়সী প্রসংশা করে বলেন, বিনা টিকিটে যাত্রী প্রতিরোধে টিটিইরা অত্যন্ত সফলতার সাথে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে। বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়েছে যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। এই সাফল্যের জন্য প্রত্যেক টিটিইকে সাধুবাদ জানাই।
প্রতি ঈদে ট্রেনে বিপুল পরিমাণ যাত্রীদের চাপ সামলাতে ও বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ টিটিইদের মাধ্যমে ব্লক চেক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। টিটিই কর্তৃক পজ মেশিনের দ্বারা ইএফটি বা বাড়তি ভাড়ায় ভ্রমণে আগ্রহী যাত্রীদের আসনবিহীন টিকিট ইস্যু করা হয়। ফলে বিপুল সংখ্যক ঘরমুখো যাত্রীসাধারণ সহজেই ট্রেন ভ্রমণের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে পারেন। পজ মেশিনের মাধ্যমে ইস্যুকৃত আসনবিহীন এই সব টিকিট রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই যাত্রীরা সহজেই ক্রয় করতে পারেন। গন্তব্য স্টেশনের নির্ধারিত ভাড়ার সাথে বাড়তি ভাড়া যুক্ত করে আগ্রহী যাত্রীদের টিকেট দেয়ার কাজটি করেন রেলওয়ের টিটিইগণ। এর ফলে বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধের পাশাপাশি অনেক যাত্রী যেমন রেল ভ্রমণের সুযোগ পান তেমনি রেলওয়ের রাজস্বে যুক্ত হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ।