ট্রায়াল রান হচ্ছে না, একেবারেই উদ্বোধন

কালুরঘাট সেতুর সংস্কার শেষ হয়নি ট্রেনে কাল কক্সবাজার যাচ্ছে রেলের পরিদর্শন টিম

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৪ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী নবনির্মিত দোহাজারীকক্সবাজার রেললাইনে আগামী ৭ নভেম্বর পরীক্ষামূলক ট্রেন চালুর কথা ছিল। পরীক্ষামূলক ট্রায়ালের পর আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেলপথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধনের কথা রয়েছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিপত্তি বাঁধে ট্রেন চলাচলের জন্য সংস্কারকৃত কালুরঘাট সেতু।

আগামী ৭ নভেম্বর কালুরঘাট সেতু দিয়ে কক্সবাজার রুটে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালুর আগে গত ২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সংস্কারকৃত কালুরঘাট সেতুর উপর বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের উপস্থিতিতে ২২০০ এবং ৩০০০ সিরিজের ইঞ্জিন চালানোর কথা ছিল। কিন্তু বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা সেতুতে কিছু ত্রুটির কথা উল্লেখ করে এগুলো পুনরায় সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত সেতুর উপর দিয়ে ইঞ্জিন চালানোকে সমর্থন করেননি। তারা যেসব ত্রুটি খুঁজে পেয়েছেন সেগুলো শুক্রবারের মধ্যে শেষ করার তাগিদ দেন। ত্রুটিগুলো গত বৃহস্পতিবার এবং গতকাল শুক্রবার সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বারবার সময় নেয়ার পরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেতুর সংস্কার কাজ শেষ করে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ, প্রকল্প পরিচালক এবং ট্রাফিক বিভাগকে বুঝিয়ে দিতে পারেনি। এই কারণে দোহাজারীকক্সবাজার লাইনের ট্রায়ালের সময় দুইবার পেছানো হয়েছে। সর্বশেষ আগামী ৭ নভেম্বর ট্রায়ালের জন্য পুনরায় তারিখ নির্ধারণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত ওইদিনও ট্রায়াল করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন একেবারে আগামী ১১ নভেম্বর কক্সবাজার থেকে প্রধানমন্ত্রী দোহাজারীকক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালকসহ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তবে আগামীকাল রোববার ট্রেনযোগে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাবে রেলের পরিদর্শন দপ্তরের টিম। কালুরঘাট সেতুর উপর দিয়ে ইঞ্জিনের ট্রায়াল শেষ না হওয়ায় এতদিন

রেলের পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও নবনির্মিত দোহাজারীকক্সবাজার রেললাইন পরিদর্শনে যেতে পারেননি। নিয়মানুযায়ী তারা নির্মাণাধীন রেললাইন ও বিভিন্ন স্টেশন পরিদর্শন করে এতে কোনো ত্রুটি আছে কি না যাচাই করে দেখেন। সেটা গতকাল পর্যন্ত কালুরঘাট সেতুর কারণে হয়নি। আগামীকাল রোববারই তাদের কক্সবাজার যাওয়ার কথা রয়েছে।

এই ব্যাপারে রেল পরিদর্শক রুহুল কাদের আজাদ বলেন, রোববার ট্রেনযোগে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাবে রেলের পরিদর্শন দপ্তরের টিম। এসময় নির্মাণাধীন দোহাজারীকক্সবাজার রেললাইন ও বিভিন্ন স্টেশন পরিদর্শন করা হবে। এতে কোনো ত্রুটি আছে কি না যাচাই করা হবে। সকাল ৮টায় আটটি বগি ও একটি ইঞ্জিন নিয়ে ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যাবে। সকাল ৯টায় দোহাজারী স্টেশনে পৌঁছাবে। এরপর সেখান থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেবে। ট্রেনটি ওইদিন বিকেল ৫টায় কক্সবাজার পৌঁছার কথা রয়েছে। রেলের পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কক্সবাজারে অবস্থান করবেন। ৬ নভেম্বর ওই টিম কক্সবাজার রেলস্টেশন ইয়ার্ড পরিদর্শন করবে। ৭ নভেম্বর সকাল ৭টায় টিমটি চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেবে।

রেল রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা আজাদীকে বলেন, দোহাজারীকক্সবাজার রেললাইনের ৭ তারিখের ট্রায়াল রান স্থগিত করা হয়েছে। একেবারে ১১ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার থেকে এ রেলপথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন। গত বৃহস্পতিবার বুয়েটের টিম কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজে সামান্য কিছু ত্রুটির কথা বলেছিল। আমরা অবশ্য একটি গ্যাংট্রিন চালিয়ে দেখেছি। কোনো সমস্যা হয়নি। এরপরও ঊনারা (বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল) যে সমস্যাগুলো দেখিয়েছেন, আমরা সেগুলো আজকে শেষ করার চেষ্টা করেছি। আগামীকাল (আজ শনিবার) সেতুর উপর ট্রায়াল করার চেষ্টা করবো।

সেতুর কাজে নিয়োজিত রেলওয়ের প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সব ঠিকঠাক থাকলে আজ শনিবার বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের উপস্থিতিতে সেতুর উপর দিয়ে ২২০০ এবং ৩০০০ সিরিজের ইঞ্জিন চালিয়ে ট্রায়াল দেয়া হবে। এরপর আরো বেশ কয়েকবার সেতুর উপর ট্রায়াল দেয়া হবে এবং আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার থেকে বহুল প্রতীক্ষিত এই পথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর আগামী ১ ডিসেম্বর যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

এদিকে দোহাজারীকক্সবাজার রেললাইনের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আমাদের এ দিকের (দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেল লাইন এবং কক্সবাজার আইকনিক ভবনসহ) প্রায় কাজ শেষ হয়েছে। এখন কালুরঘাট সেতুর জন্য একটু আটকে আছি। আজকেও (গতকাল) সেতুর উপর ইঞ্জিন চাালিয়ে ট্রায়াল দেয়া যায়নি। সেতুর উপর পর্যায়ক্রমে বেশ কয়েকবার ২২০০ থেকে ২৫০০ সিরিজের এবং সর্বশেষ ৩০০০ সিরিজের ইঞ্জিন চালিয়ে দেখা হবে। ক্লিয়ারেন্স দেয়ার পর ট্রেন চলতে পারবে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের রেললাইন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ১০২ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক বসানো হয়েছে। কক্সবাজারে দৃষ্টিনন্দন আইকনিক স্টেশন বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজও শেষ। এদিকে দোহাজারী, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু স্টেশনের কাজ শেষ হয়েছে। আর কিছু স্টেশনের কাজ চলমান আছে। সেগুলোও এর মধ্যে চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজ্যৈষ্ঠপুরা সার্বজনীন শরণংকর বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা