চট্টগ্রামে জঙ্গি, সন্ত্রাস, মানব পাচারসহ গুরুতর অপরাধ বিচারে গঠিত পৃথক চারটি ট্রাইব্যুনালে মামলার সংখ্যা ৪০৭টি। এরমধ্যে অনেকগুলো মামলার বিচার কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। এতে অলস পড়ে থাকা দায়রার ১ হাজার ৬শ’র অধিক মামলা বিচারের জন্য দুইটি ট্রাইব্যুনালে আসে। কিন্তু বাকী দুটিতে মামলার সঙ্কট রয়েছে। মামলা না থাকায় দিনে দুয়েকটি শুনানি করেই বাকীটা সময় অলস থাকছে ট্রাইব্যুনালগুলো। অথচ জেলা ও মহানগরের আদালতগুলোতে দুই লক্ষাধিক মামলার জটের কারণে সেখানে দম ফেলার ফুসরত পর্যন্ত নেই।
আদালতের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল বাদে বিশেষ আইনে গঠিত গুরুত্বপূর্ণ চারটি ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, জননিরাপত্তা বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল, সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনাল ও মানব পাচার প্রতিরোধ দমন ট্রাইব্যুনাল। স্ব-স্ব আইনে গঠিত এ ট্রাইব্যুনালগুলোতে মামলার বিচারের জন্য পাঠানো হয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মামলার জট কমাতে আদালতে বিচারাধীন চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালগুলোতে পাঠানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। বিভিন্ন আদালতে মামলার জট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো দ্রুত বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালগুলোতে পাঠিয়ে মামলায় ভারসাম্য আনা প্রয়োজন। এতে মামলার জট কমে আসার পাশাপাশি বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার পাবেন বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, ট্রাইব্যুনালগুলোতে তেমন মামলা থাকে না। বেশিরভাগ সময়ই কোর্টগুলো অলস পড়ে থাকে। এক্ষেত্রে জেলা দায়রা ও মহানগর দায়রা জজ চাইলে মামলার জটে পড়ে থাকা বিভিন্ন আদালতের চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো বিচারের জন্য যেকোনো ট্রাইব্যুনালে পাঠাতে পারেন। এক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটে না।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অপরাধের বিচার সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালে হয়ে থাকে। বাকী ট্রাইব্যুনালগুলোতে একইভাবে বিভিন্ন মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। বিভিন্ন আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে পাঠানো মামলাগুলো তখন ট্রাইব্যুনাল মামলা হিসেবে বিবেচিত হবে না বলে জানান তিনি।
জেলা ও মহানগর দায়রা আদালতের চাঞ্চল্যকর অনেক মামলা ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনালগুলোতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান বিজ্ঞ এ আইনজীবী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলা ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারের জন্য গঠিত টাস্কফোর্স সভার সিদ্ধান্তে সেখানে পাঠানো হয়। এছাড়াও দায়রা জজের বিশেষ ক্ষমতায় বিভিন্ন আদালতের বিচারাধীন চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোও বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালগুলোতে পাঠানো হয়ে থাকে।
ট্রাইব্যুনালগুলোর অক্টোবরের তথ্যে জানা গেছে, পৃথক চারটি ট্রাইব্যুনালের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল মামলার সংখ্যা হচ্ছে ৪০৭টি। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচার আইনে ২৪টি বিচারাধীন মামলা রয়েছে। এসবের মধ্যে ১৯টি মামলা হাইকোর্টের নির্দেশে বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। বর্তমানে দ্রুত বিচার আইনে পাঁচটি মামলা চলমান রয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে ট্রাইব্যুনাল মামলা বাদে দায়রা আদালতের দুইশো’র অধিক চাঞ্চল্যকর মামলা এ ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য পাঠানো হয়। এতে এখানে বর্তমানে ২৬৭টি মামলা রয়েছে।
চলতি বছর মার্চে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে ২৩৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া সন্ত্রাস বিরোধী আইনে গঠিত সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালে ১১০টির মতো মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অন্যদিকে জননিরাপত্তা বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে ৪০টি মামলা থাকলেও সবগুলোই হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন আদালত থেকে বিচারের জন্য পাঠানো ১৪শ’র ওপর মামলা ট্রাইব্যুনালটিতে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দায়রা মামলার অধিকাংশ শীঘ্রই যুগ্ম দায়রা জজের অধীনে চলে যাচ্ছে। এতে করে এ ট্রাইব্যুনালে মামলার সংখ্যা সামনে কমে যাবে।
জানা গেছে, এসব ট্রাইব্যুনালে তুলনামূলক মামলা না থাকায় দিনের অধিকাংশ সময় সংশ্লিষ্টরা অলস বসে থাকছেন। সেই তুলনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সংঘটিত অপরাধ বিচারের জন্য গঠিত সাতটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার কিছুটা ভারসাম্য পরিসংখ্যানে দেখা যায়।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা দায়রা ও মহানগর দায়রা জজের অধীনে একেকটি আদালতে দৈনিক অন্তত ১শ’ মামলার ধার্য্য তারিখ থাকে। একইভাবে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও একই পরিমাণে মামলার ধার্য্য তারিখ থাকে।
মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট আবিদ হোসেন আজাদীকে জানান, শুধু সিএমএম কোর্টে ১শ’ মামলার ধার্র্য্য তারিখ থাকে। এতে আদালতের বিচারক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাই সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দিনের বেশিরভাগ সময়ই ব্যস্ততায় কাটাচ্ছেন।
চট্টগ্রামে দুই লক্ষাধিক মামলার মধ্যে ১৫/২০ বছর বা তারও অধিক সময় অনিষ্পন্নকৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বহু চাঞ্চল্যকর মামলা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি আইন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন আদালতে আইন পেশায় জড়িতরা বলছেন, ট্রাইব্যুনালের মামলায় আসামি গ্রেপ্তার, সাক্ষী হাজির করাসহ সবকিছুই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টরা গুরুত্ব বেশি দিয়ে থাকেন। এসব কারণে ট্রাইব্যুনালে মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।