শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ ডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা সোয়া ১টার দিকে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ ডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিহতদের পরিবারকে লাশ পরিবহন এবং দাফন ও সৎকারের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার করে অর্থ সহায়তা করা হয়েছে। কোনো লাশ দেখা গেলে যাতে দ্রুত উদ্ধার করা যায় সেজন্য আগামীকালও (আজ) শীতলক্ষ্যা ও মেঘনা-ধলেশ্বরীর মোহনায় কোস্ট গার্ড, নৌ-পুলিশ ও ফায়ার ব্রিগেডের টহল রাখা হয়েছে। খবর বাসসের। নিহতদের মধ্যে যাদের নাম, পরিচয় জানা গেছে তারা হলেন, মুন্সিগঞ্জে কোর্টগাও এলাকার দোলা বেগম (৩৪), মুন্সীগঞ্জ সদরের রুনা আক্তার (২৪), মুন্সীগঞ্জের মোল্লাকান্দির সোলেমান বেপারী (৬০), তার স্ত্রী বেবী বেগম (৬০), মুন্সীগঞ্জের মালপাড়ার সুনিতা সাহা (৪০), মুন্সীগঞ্জের উত্তর চর মসুরার পখিনা (৪৫), একই এলাকার বিথী (১৮), তার এক বছর বয়সী মেয়ে আরিফা, মুন্সীগঞ্জ সদরের প্রতিমা শর্মা (৫৩), মুন্সীগঞ্জের মোল্লাকান্দি চর কিশোরগঞ্জের মো. শামসুদ্দিন (৯০), তার স্ত্রী রেহেনা বেগম (৬৫), বরিশালের উটরা উজিরপুরের হাফিজুর রহমান (২৪), তার স্ত্রী তাহমিনা (২০), তার এক বছর বয়সী শিশুপুত্র আবদুল্লাহ, মুন্সীগঞ্জের দক্ষিণ কেওয়ারের নারায়ন দাস (৬৫), তার স্ত্রী পার্বতী দাস (৪৫), নারায়ণগঞ্জের বন্দরের কল্যান্দী এলাকার আজমির (২), মুন্সীগঞ্জ সদরের শাহ আলম মৃধা (৫৫), একই এলাকার মহারানী (৩৭), ঢাকার শনির আখড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন (৪৫), তার স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৩০), মুন্সীগঞ্জ সদরের ছাউদা আক্তার লতা (১৮), শরিয়তপুরের নড়িয়ার আবদুল খালেক (৭০), ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার মোছা. জিবু (১৩), মুন্সীগঞ্জের খাদিজা বেগম (৫০) এবং নারায়ণগঞ্জের বন্দরের সেলসারদীর মো. নয়ন (১৯)।
নিখোঁজ রয়েছেন, নিহত সুনিতা সাহার দুই ছেলে বিকাশ সাহা (২২) ও অনিক সাহা (১২), মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান এলাকার জাকির (৪৫), নিহত আনোয়ার ও মাকসুদা দম্পতির ৭ মাস বয়সী মেয়ে মানসুরা, মুন্সীগঞ্জের ইসলামপুরের মো. তানভীর হোসেন, মুন্সীগঞ্জ সদরের মালপাড়ার রিজভী (২০), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত মুন্সীগঞ্জের সদরের মো. ইউসুফ কাজী (৫৪), ঢাকার মীরপুরের মো. সোহাগ হাওলাদার (২৩), বিকাশ (২২), মানসুরা (৭ মাস) ও সাদিয়া (১১)।
রোববার সন্ধ্যা ৫টা ৫৬ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এমএল সাবিত আল হাসান লঞ্চটি। ছেড়ে যাওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাছে পৌঁছা মাত্র পেছন থেকে এটিকে ধাক্কা দেয় এসকে-৩ নামে একটি কার্গো। কার্গোর ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যায়। ওই সময় লঞ্চ থেকে নদীতে লাফিয়ে পড়ে নদীর দু’তীরে উঠতে সক্ষম হন ২৯ জন। তাদের মধ্যে এক নারীকে অচেতন অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ দেড়শ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রথম দিকে তার নাম পরিচয় জানা না গেলেও পরে তার স্বজনরা হাসপাতালে এলে তার নাম দোলা বেগম (৩৪) বলে জানা যায়।
এদিকে রোববার রাতে দোলা বেগম ছাড়াও আরও ৪ নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। রোববার রাত সোয়া ১১টায় ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারীদের সঙ্গে যোগ দেয় নৌ বাহিনী, কোস্টগার্ড-এর ডুবুরী দল। সঙ্গে যুক্ত হয় বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’। তবে রোববার রাতে লঞ্চটির অবস্থান সনাক্ত করা গেলেও উদ্ধার সম্ভব হয়নি। অপর দিকে লঞ্চ ডুবির ঘটনার পর পরই কাল বৈশাখী ঝড়ের কারণে উদ্ধার কাজ বিঘ্নিত হয়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিখোঁজদের স্বজনরা নদীর তীরে ভিড় করতে শুরু করে।
গতকাল সোমবার সকালে পুনরায় উদ্ধার কাজ শুরু হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় লঞ্চটি নদীর তলদেশ থেকে টেনে তোলা হয়। লঞ্চের ভেতর থেকেই পাওয়া যায় ২১টি লাশ। সবগুলো লাশই ছিল লঞ্চের নিচতলায়।
ফায়ার সার্ভিস নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, সোমবার দুপুরে লঞ্চটি উদ্ধারের পর এর ভেতর থেকে ২১ জনের লাশ পাওয়া যায়।