ইমরান আহমেদ গত পাঁচ বছর ধরে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করছেন। সর্বসাকুল্যে বেতন পাচ্ছেন ২২ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া ও গ্যাস–বিদ্যুৎ বিল পরিশোধেই বেতনের অর্ধেক টাকা শেষ। বাকি টাকা দিয়ে কোনোমতে টেনেটুনে সংসার চালায় সাধারণ মানুষ। শুধু ইমরান আহমেদই নয়, নগরীর বেশিরভাগ বেসরকারি চাকরিজীবীর অবস্থা অনেকটা এরকম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে যারা মাসে ২০–২৫ হাজার আয় করেন, এমন লোককেও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া নিম্নবিত্ত লোক আলু ভর্তা, ডাল, ডিম খাবে, সেখানেও খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। বর্তমানে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। মোটা মসুর ডালের কেজি ১১০ টাকা এবং ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়। তাই গরীব মানুষ একটি ডিম পরিবারের চারজনে ভাগ করে খাচ্ছেন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবজির পরিমাণও কমছে। খরচ বাড়তে থাকায় অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
খুচরা বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৬৫–৭০ টাকায়, রসুন ১৮০ টাকা, আদা ২০০ টাকা এবং সয়াবিন তেল এক লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৭৪ টাকা।
এছাড়া বাজারে মোটা সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়, আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৯০ টাকায়। অপরদিকে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকায়। এছাড়া পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা এবং রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা। অপরদিকে বাজারে বর্তমানে ৫০–৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম আগের চেয়ে কমেছে। তবে আমাদের দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানির খরচ বেড়ে গেছে। কোনো ব্যবসায়ী তো আর লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবেন না। অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিমত, পাইকারদের থেকে একটা নির্দিষ্ট মুনাফায় খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনে। বর্তমানে দোকান ভাড়া, গ্যাস–বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে। আমাদের অতি মুনাফা করার সুযোগ নেই। এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার শুধুমাত্র রমজান এলেই বাজার মনিটরিং করে। মনিটরিংয়ের অভাবে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ইচ্ছে মতো বাড়ায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
সাধারণ মানুষের অভিমত, দেশের চাকরি বাজারে এখনো বেশিরভাগ মানুষের বেতনসীমা ১৫ থেকে ২৫ হাজারের ঘরে। আজ থেকে ৫ বছর আগে সেই টাকায় মোটামুটি সংসারের ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব ছিল। এখন এই সময়ের ব্যবধানে প্রত্যেক পণ্যের দামই দ্বিগুণ কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে। নিত্যপণ্যের সাথে বাসা ভাড়া, সন্তানের পড়াশুনোর খরচ, যাতায়াত ও চিকিৎসার খরচ মেটাতে মাসের প্রথম সপ্তাহে ৯০ শতাংশ টাকা শেষ। বাকি সময়টা আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধারদেনা করে করে চলতে হচ্ছে মধ্যবিত্তশ্রেণীর।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের দেশের বাজার ব্যবস্থাপনার প্রতি পদে পদে রয়েছে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। এসব সিন্ডিকেট সরকারকেও জিম্মি করে ফেলে। যেমন–খাতুনগঞ্জে প্রশাসন অভিযান চালাতে গেলে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান। এছাড়া অনেক সময় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। এখন তাই প্রশাসন কি থেমে থাকবে? আমার মতে, এ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর হওয়া দরকার। যারা ভোক্তাদের জিম্মি করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়ান।