বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে চলমান পরিস্থিতিতে টেকনাফ স্থল বন্দরে ধীর গতিতে চলছে আমদানি–রপ্তানি। এতে কমেছে রাজস্ব আয়। এমন পরিস্থিতিতে স্থলবন্দরে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রবেশের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ। বহিরাগতরা যাতে ইচ্ছেমতো স্থলবন্দরে ঢুকতে না পারে সেজন্য নেওয়া হয়েছে কঠোর পদক্ষেপ। এবার বন্দরে ঢুকার জন্য চালু করা হয়েছে ডিজিটাল পরিচয়পত্র। যাতে নিরাপত্তার কাজে কোন বিঘ্নতা না ঘটে।
মিয়ানমারে জান্তা সরকারের সাথে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় সেদেশের যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে এপারে। প্রতিদিন নাফ নদী দিয়ে ভেসে আসছে লাশ। ভারী গোলাবারুদের শব্দে কেঁপে উঠে টেকনাফ সীমান্ত এলাকা। এই অবস্থায় সেদেশের ব্যবসায়ীরা আগের ন্যায় চাইলেও বন্দরে পণ্য পাঠাতে পারছেন না। যার ফলে কমে গেছে বন্দরের আমদানি–রপ্তানি। এদিকে ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশের পট পরিবর্তনের পর এপার থেকেও মিয়ানমারে পণ্য যাচ্ছে ধীরগতিতে। এতে কমে গেছে রাজস্ব আয়। এমন পরিস্থিতিতে বন্দরে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ। গত ২৫ আগস্ট থেকে বন্দরে চালু করা হয়েছে ডিজিটাল পরিচয়পত্র। বন্দরে আমদানি–রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী, সিএন্ডএফ এজেন্ট, শ্রমিক নেতা, শ্রমিক ও দর্শনার্থীদের জন্য এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে বন্দরে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বজায় থাকে।
ব্যবসায়ীরা জানান, টেকনাফ স্থল বন্দর দিয়ে মাছ রুই, কাতলা, শুটকি মাছ, বিভিন্ন প্রকার কাঠ, বরই আচার, পেঁয়াজ, শুকনা বরই, টক তেঁতুল ও প্লাস্টিকসহ নানা পণ্য আমদানি হয়। আর রপ্তানি হয় সিমেন্ট, গেঞ্জি, গেঞ্জির কাপড়, দেশীয় কাপড়, প্লাস্টিক পাইপ, মানুষের চুল, অ্যালুমিনিয়াম প্রোডাক্টস, হাঙর মাছ ও চামড়া, অঙ পেনিস, পাইস্যা মাছ, প্লাস্টিক স্পিল্ডারসহ আরও অনেক কিছু। কিন্তু বিগত ৪–৫ মাস ধরে সব পণ্য আমদানি–রপ্তানি করা যাচ্ছে না। কমে গেছে পণ্যের পরিমাণ।
শ্রমিক নেতা নূর মোহাম্মদ বলেন, আগের মতো বন্দরে ট্রাক আসা–যাওয়া করে না। আসে না তেমন মালামাল। এতে অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। তারমধ্যে ডিজিটাল পরিচয়পত্র চালু শ্রমিকদের জন্য স্বস্তির খবর। এখন আর বহিরাগতরা এসে এখানে ঝামেলা করতে পারবে না। আমদানি–রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী সিআইপি ওমর ফারুক বলেন, দুই দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা তেমন একটা ভাল নেই। নেই আগের মতো আমদানি–রপ্তানি।
তিনি আরও বলেন, স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যবসায়ীরা ডিজিটাল পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করার জন্য কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিয়ে আসছিল। পরিচয়পত্র চালু করার পর থেকে বন্দরের নিয়মশৃঙ্খলা ফিরে আসবে। এতে করে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি স্থল বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
এ বিষয়ে স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেড টেকনাফের মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মেজর (অব.) সৈয়দ আনসার মোহাম্মদ কাউসার বলেন, আগে যেকেউ বন্দরে প্রবেশ করতো। এতে নিরাপত্তাকর্মীদের হিমশিম খেতে হতো। এছাড়া বিঘ্নিত হতো বন্দরের নিরাপত্তা। ডিজিটাল পরিচয়পত্র চালুর পর থেকে ব্যবসায়ীদের জন্য বন্দরের কাজের সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। শ্রমিকেরা প্রতিদিন প্রতিনিধির (মাঝি) মাধ্যমে পরিচয়পত্র নিয়ে বন্দরে প্রবেশ করবে। বের হওয়ার সময় প্রধান ফটকে জমা দিয়ে বের হবে। এতে বন্দরে শৃঙ্খলা ফিরবে।
আমদানি–রপ্তানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিয়ানমারে যুদ্ধ ও দেশের পট পরিবর্তনের পর আমদানি–রপ্তানি ধীর গতিতে চলছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি তা স্বাভাবিক রাখার।