অ্যান্টিগায় ইতিহাস গড়লেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বের পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে টি–টোয়েন্টিতে ৫০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করলেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। একই সঙ্গে তার নাম উঠে গেল বিশ ওভারের ক্রিকেট ইতিহাসের আরেক পাতায়, যেখানে পা পড়েনি আর কারো। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) রোববার অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডা ফ্যালকনসের হয়ে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস প্যাট্রিয়টসের বিপক্ষে ম্যাচে ৫০০ উইকেট পূর্ণ করেন সাকিব। ব্যাট হাতে তার রান আছে সাড়ে সাত হাজারের বেশি। টি–টোয়েন্টিতে ৫০০ উইকেট ও সাত হাজার রানের ‘ডাবল’ ছোঁয়া প্রথম ক্রিকেটার তিনিই। বিশ ওভারের ক্রিকেটে এই দুটো অর্জনের সমন্বয়ে একমাত্র ক্রিকেটার এখন তিনি। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডা ফ্যালকনসের হয়ে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস প্যাট্রিয়টসের বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েন সাকিব। এর আগে ৪৯৮ উইকেট নিয়ে আসরে নামলেও শুরুটা ভালো হয়নি। প্রথম চার ম্যাচে সব মিলিয়ে চার ওভারে নিয়েছিলেন মাত্র একটি উইকেট। আগের ম্যাচে দুই ওভারে ১৬ রান দিয়েও ছিলেন উইকেটশূন্য। তবে প্যাট্রিয়টসের বিপক্ষে ফিরলেন স্বরূপে, দুই ওভারে ১১ রান দিয়ে নিলেন ৩ উইকেট। আক্রমণে এসে প্রথমেই সুযোগ তৈরি করেছিলেন তিনি। তৃতীয় বলেই রিজওয়ানকে লং অনে ক্যাচে পরিণত করেছিলেন ফিল্ডার জেডেন সিলস, তবে সীমানায় পা ছুঁয়ে যাওয়ায় তা পরিণত হয় ছক্কায়। ওভারের শেষ বলে অবশ্য আর কোনো সুযোগ দেননি রিজওয়ান, সাকিবের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়েই ফিরে যান। এরপর নিজের পরের ওভারে কাইল মেয়ার্স ও নাভিন বিদাইসিকে ফেরান এই বাঁহাতি স্পিনার। টি–টোয়েন্টিতে ৬৬০ উইকেটে সর্বোচ্চ সবার ওপরে রশিদ খান। এরপর ডোয়াইন ব্রাভো (৬৩১), সুনিল নারাইন (৫৯০) ও ইমরান তাহির (৫৫৪)। এবার তাদের কাতারেই নাম লিখিয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী সাকিব, ৪৫৭ ম্যাচে ৪১৯ ইনিংস বোলিং করে ছুঁলেন ৫০০ উইকেট। একই সঙ্গে ব্যাট হাতে তার রান এখন ৭ হাজারেরও বেশি। ইনিংস শেষে ব্যাট হাতেও আলো ছড়ান সাকিব। চারে নেমে ১৮ বলে ২৫ রানের কার্যকর ইনিংস খেলেন দুই ছক্কা ও এক চারে। দলের জয় নিশ্চিত করে জেতেন ম্যাচসেরার পুরস্কারও। প্যাট্রিয়টস ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৩৩ রান তুললেও জবাবে অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডা ফ্যালকনস জয় তুলে নেয় ২ বল হাতে রেখে। ৬ ম্যাচে ৩ জয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত শীর্ষে আছে দলটি। এদিকে নিজের এই কীর্তি নিয়ে সাকিব বলেন, ‘এই অর্জনের পেছনে অনেক কঠোর পরিশ্রম রয়েছে। এত লম্বা ক্যারিয়ারে যা অর্জন করতে পেরেছি, তাতে আমি খুশি।’ তবে আগের ম্যাচগুলোতে বল হাতে না পাওয়ার আক্ষেপও ঝরল তার কণ্ঠে, ‘গত কয়েক ম্যাচে আমি বেশি বোলিং করতে পারিনি। তাই কিছুটা নার্ভাস ছিলাম, নেতিবাচকতাও কাজ করছিল। কারণ সাধারণত আমি আরও বেশি ওভার করি। তবে দলের প্রয়োজনে যখন সুযোগ আসবে, আমি অবদান রাখার চেষ্টা করব।’ দিনশেষে ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে নিয়েছেন তিনি, যা টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তার ৪৪তম। এতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেলকে ছুঁয়ে ফেলেছেন সাকিব। বিশ্ব ক্রিকেটে তার চেয়ে বেশি ম্যাচসেরার স্বীকৃতি আছে মাত্র চারজনের। দলের জয় নিশ্চিত করার পর আত্মবিশ্বাসের কথাও শোনান এই অলরাউন্ডার, ‘দলের জন্য অবদান রাখতে পারা সবসময়ই দারুণ অনুভূতি। বিশেষ করে যখন সেটা জয়ে পরিণত হয়। এটি আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, আর আমি চাইব সেটা ধরে রাখতে। ক্রিকেট প্রতিদিন বদলাচ্ছে, আগের চেয়ে অনেক দ্রুতগতির। তাই মানসিকতা ও খেলার উন্নতিতে কাজ করে যেতে হবে।’ সাকিবের সঙ্গে ক্যারিবিয়ান সফরে আছেন তার পরিবারের সদস্যরাও। ব্যস্ত সূচির মাঝেও প্রিয়জনকে পাশে পাওয়া তার জন্য বাড়তি শক্তি, ‘পরিবার সবসময়ই আমার সঙ্গে থেকেছে। তবে তিন সন্তানের পড়াশোনার কারণে এখন আর সব জায়গায় সম্ভব হয় না। গ্রীষ্মকালীন ছুটি থাকায় এবার তারা এসেছে। পরিবার পাশে থাকলে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যায়, বিশেষ করে বয়স বাড়তে শুরু করলে।’