রাঙ্গুনিয়ার পাহাড় ও টিলার ভাঁজে ভাঁজে বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষ হচ্ছে। প্রায় বার মাসেই ফলন হয় এই লেবুর। উৎপাদিত লেবু স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিনই ট্রাকে ট্রাকে ঢাকা–চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় পাইকারি বাজারে বিক্রির জন্য নেয়া হয়। রাঙ্গুনিয়ার শতাধিক চাষি বারোমাসি লেবু চাষ করে এখন লাখপতি হয়েছেন। তবে সরকারি প্রণোদনা এবং বাজারজাতকরণে সহায়তা পেলে রাঙ্গুনিয়ায় লেবু চাষে আরও উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে বলে জানান চাষিরা।
উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের মীরেরখীল গ্রামের লেবু চাষি আজিম উদ্দিন। ২০১৬ সালের দিকে ১ একর জমিতে ৫০টি লেবু চারা রোপণ করে কৃষি প্রজেক্ট শুরু করেছিলেন তিনি। এখন তার অন্তত ১০ একর জমিতে রয়েছে ৮ হাজারের অধিক লেবু গাছ। এসব গাছে এসেছে ফলন এবং প্রায় প্রতিদিনই বিক্রি করেন ৩–৫ হাজার টাকার লেবু। এছাড়া গাছের কলম বিক্রি করেও বছরে উপার্জন করেন লক্ষাধিক টাকা। একসময়ের অভাব অনটনের সংসারে তার হাত ধরে এসেছে সচ্ছলতা। তার এমন সাফল্য দেখে ওই এলাকার অনেকেই লেবু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। শুধু আজিম উদ্দিনই নন, উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের মীরেরখীল, নারিশ্চা, বড়খোলাপাড়াসহ এতদঅঞ্চলের পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে আবাদ হয়েছে বাণিজ্যিক লেবু বাগান। সরফভাটা–বোয়ালখালী সড়ক পথে যাওয়ার পথে চোখে পড়বে লেবু চাষিদের ব্যস্ততা। কেউ লেবু বাগানে সেচ দিচ্ছেন, কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন কেউবা আবার বাগান থেকে উৎপাদিত লেবু তুলে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। মো. বাবুল নামে অন্য এক লেবু চাষি জানান, তার পাহাড়ি কৃষি প্রজেক্টে রয়েছে ২০০০ লেবু গাছ। এই বাগান থেকে উৎপাদিত লেবু বাজারে বিক্রি করে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। বাগানের আয় থেকে তার বর্তমানে মাচ চাষ, কৃষি প্রজেক্টসহ নানাভাবে উপার্জনের মাধ্যম সৃষ্টি হয়েছে।
কথা হয় মো. নাছের নামে এক উদ্যোক্তার সাথে। তিনি জানান, স্থানীয় বড়খোলাপাড়া লেবু বাজার থেকে লেবু সংগ্রহ করে ট্রাকে করে ঢাকা–চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে বিক্রি করে থাকেন তিনি। তার নিজেরও লেবু বাগান রয়েছে। বাজারে বাইরের পাইকারি ক্রেতারাও এসে লেবু কিনে নিয়ে যান বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, শুধু সরফভাটা পাহাড়ি এলাকায় নয়, উপজেলার পারুয়া, রাজানগর, ইসলামপুর, দক্ষিণ রাজানগর, পদুয়া, কোদালা, লালানগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকায় লেবু আবাদ হয়। লেবু আবাদ বাড়াতে সরকারিভাবে প্রণোদনা এবং প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, আমরা লেবু চাষিদের নিয়মিত পরামর্শসহ বিভিন্নভাবে সহযেগিতা করে যাচ্ছি। সারাবছরই লেবুর চাহিদা থাকায় রাঙ্গুনিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে অনেক চাষিরা লেবু চাষ আগ্রহী হচ্ছেন। রাঙ্গুনিয়ায় লেবু জাতীয় ফসলের আবাদ বাড়াতেও নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আগ্রহীদের সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।