স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, টিকা বেশি এলে ৪০ বছরের নিচের বয়সীদের টিকা দেওয়ার বিষয়টি চিন্তা করা হবে। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক এক সভার পর তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ সরকার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কিনে বিনামূল্যে গণটিকাদান শুরু করেছে এক মাস হল। শুরুতে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের টিকার জন্য নিবন্ধন করতে দেওয়া হয়। পরে সেই বয়সসীমা কমিয়ে ৪০ বছর করা হয়। এখন শুধু ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা টিকা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। খবর বিডিনিউজের।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতে ৬০ বছর বা এর বেশি বয়সীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। আমাদের দেশে এটা অনেক কমিয়ে ৪০ বছরে নিয়ে এসেছি। ৪০ বছরে নিয়ে আসার কারণে আমাদের ৪ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। আমাদের হাতে যদি ভ্যাকসিন বেশি আসে, তাহলে বয়সের বিষয়টি চিন্তা করতে পারব। শিডিউলও পরিবর্তন করতে পারব। আমাদের সবসময় চেষ্টা থাকবে, নিশ্চিত হয়ে যেন আমরা কাজ করি। সেকেন্ড ডোজ যেন আমাদের হাতে থাকে। সেটাকে মাথায় রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অঙফোর্ডের কোভিড-১৯ টিকা কোভিশিল্ড একজনকে দুটি ডোজ নিতে হচ্ছে আট সপ্তাহের ব্যবধানে।
বাংলাদেশ সেরাম থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করেছে, যা প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করে আসার কথা। জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজ এলেও ফেব্রুয়ারিতে টিকা কম এসেছে। দ্বিতীয় চালানে এসেছে ২০ লাখ ডোজ টিকা। অবশ্য ভারত সরকারের উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ আগেই এসেছে। সরকার যে পরিকল্পনা করেছে, তাতে ১৩ কোটির বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। মাসে ৩৫ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল। ২ মার্চ পর্যন্ত ৩৩ লাখ ৪১ হাজার ৫০৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। আর টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৩ জন। বৈঠকে আগামী জুন-জুলাই পর্যন্ত টিকা কীভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয় বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান। পরবর্তীতে ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।
জাহিদ মালেক বলেন, আমরা আশা করি, জুন-জুলাই পর্যন্ত আমাদের যা অর্ডার আছে, আমরা কোভেঙ থেকে যা পাব, সেটা মিলিয়ে আমাদের হাতে ৪ কোটি ডোজ হতে থাকবে। এই চার কোটি ডোজ হাতে চলে আসবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাসে। সেই অনুযায়ী আমরা ভ্যাকসিন কার্যক্রম করব। যদি এর মধ্যে কোনো রকমের পরিবর্তন লাগে, তাহলে সেই বিষয়টিও আমরা করব। সেরাম থেকে টিকা সরকার নিচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগ কোভ্যাঙ থেকে সেই টিকা বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে, যা জুন নাগাদ আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন আমরা নিজেরা কিনব, কোভেঙও দেবে। টিকা কেনার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থা সাড়ে ৩ হাজার মিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত হবে আমরা কতটুকু নেব, আমাদের কতটুকু প্রয়োজন আছে। সেটার উপর সিদ্ধান্ত হবে। ইতোমধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার যেটা বিশ্ব ব্যাংকের ছিল, সেটা তো অনুমোদন হয়ে গেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি টিকা আনতে চায়, তাহলে কীভাবে তা করা হবে, তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী এর আগে বলেছিলেন, সরকারের কেনা টিকার কিছু অংশ বেসরকারি খাতকে দেওয়া হবে, তবে সেই পরিকল্পনা দৃশ্যত বাতিল হয়েছে। বেসরকারিভাবে টিকা এলে তা কি টাকা দিয়ে কিনতে হবে- গতকাল এই প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাওয়া ভ্যাকসিন বাংলাদেশ ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমোদন সাপেক্ষে বেসরকারিভাবে কেউ আনকে চায় নিজ খরচে আনতে হবে। যে নেবে তাকেও নিজ খরচেই নিতে হবে। সরকারিভাবে যেটা দেওয়া হচ্ছে, ভবিষ্যতেও সেটা বিনামূল্যেই দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
টিকাদানে সন্তুষ্টি : গত এক মাসের গণ টিকাদান কাজ নিয়ে সন্তোষের কথা জানিয়েছেন জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, একটি মাস আমরা ভ্যাকসিন দিয়েছি। এই সফলতার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাব। ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামে দেশবাসী সকলেই সন্তুষ্ট। বিদেশ থেকেও আমরা এই ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামের সফলতার বিষয়ে অনেক সুনামের কথা পেয়েছি। আমরা এই সুনাম ধরে রাখতে চাই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা যত মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়েছি প্রত্যেকেই সুস্থ আছে। কোনো জায়গায় কোনো অঘটন ঘটেনি। এটা বিরাট অর্জন। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার বিষয়টি স্মরণ করে তিনি বলেন, শিক্ষক আছেন, কিছু সংখ্যক ছাত্র আছেন, অন্যান্য কর্মচারী যারা আছেন, তাদেরকেও ভ্যাকসিন দিতে হবে। সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। দেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদেরও টিকা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। যেসব পাঁচ তারকা হোটেল এবং যেসব হোটেল কোয়ারেন্টিন সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেখানে কর্মরতরাও টিকা পাবেন। স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদেরও টিকা দেওয়া হচ্ছে, বলেন জাহিদ মালেক।