টিকা নেবার পরও লোকে সংক্রমিত হচ্ছে কেন?

| বৃহস্পতিবার , ১৩ জানুয়ারি, ২০২২ at ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তার পরও দেখা যাচ্ছে যে টিকা-নেয়া লোকেরাও আবার ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং এরকম আরো অনেক দেশে ইদানীং রেকর্ড পরিমাণ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে। এর একটা কারণ ডেল্টা এবং ওমিক্রনের মত অতিসংক্রামক করোনাভাইরাসের ধরন।
অনেকের মনে হতে পারে যে টিকায় হয়তো কোন কাজ হচ্ছে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা ব্যাপারটা বাখ্যা করে বলছেন, কেন কোভিড-১৯ এর টিকা নেয়া অত্যন্ত জরুরি। ব্রাজিলের টিকাদান সোসাইটির পরিচালক সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ রেনাটো কেফুরি বলছেন, প্রথম যে করোনাভাইরাস রোধী টিকাগুলো বাজারে এসেছিল, যেমন ফাইজার বা এ্যাস্ট্রাজেনেকা ইত্যাদি এগুলোর লক্ষ্য ছিল কোভিড-১৯ এ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি কমানো, যে পর্যায়ে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও মারা যাবার সম্ভাবনা থাকে। আসলে এই টিকাগুলো কোভিডের অধিকতর বিপজ্জনক ধরনগুলোর বিরুদ্ধে অনেক ভালোভাবে সুরক্ষা দিতে পারে- কোভিড যত গুরুতর হবে টিকার কার্যকারিতাও ততই বেশি হবে। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষেই এই টিকাদান কর্মসূচির লক্ষ্য কখনোই সংক্রমণ পুরোপুরি প্রতিরোধের জন্য ছিল না। আসল লক্ষ্য ছিল করোনাভাইরাস শরীরে ঢুকে পড়লেও তার প্রভাব যেন কম ক্ষতিকর হয়, তা নিশ্চিত করা।
পৃথিবীর বহু দেশেই অনেক দশক ধরে ফ্লুর টিকা দেয়া হচ্ছে। এর পেছনে যুক্তিটাও হুবহু এক। ফ্লুর টিকা প্রতি বছরই দেয়া হয়। এর লক্ষ্য কিন্তু ইনফ্লয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ পুরোপুরি প্রতিরোধ করা নয়। বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে এই ভাইরাসের কারণে যাদের প্রায়ই সবচেয়ে গুরুতর জটিলতা দেখা দেয়- যেমন শিশু, গর্ভবতী নারী এবং বয়স্ক মানুষেরা তাদের আক্রান্ত হওয়া ঠেকানো।
কমনওয়েলথে ফান্ডের এক জরিপ অনুযায়ী শুধু যুক্তরাষ্টেই করোনাভাইরাসের টিকার কারণে নভেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ১ কোটি ৩ লক্ষ মানুষের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ঠেকানো গিয়েছে এবং মোট ১১ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল মিলে এরকম আরেকটি হিসেব করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া শুরু হবার পর থেকে ইউরোপের ৩৩টি দেশে ৬০ বছরের বেশি লোকদের ক্ষেত্রে ৪৭০,০০০ জনের প্রাণ রক্ষা সম্ভব হয়েছে। এই বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই মহামারি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারি শুধু একভাবে সেটা হলো শিশুরাসহ দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীকে উচ্চহারে টিকা দেয়া এবং মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, ও মানুষের ভিড় ঠেকানোর মত নিয়মগুলো মেনে চলা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসর্দি-জ্বরের মত ওমিক্রনেও আক্রান্ত হবে সবাই
পরবর্তী নিবন্ধবুস্টার টিকা নিলে ৬৫ বছর বয়সীদের হাসপাতালে যেতে হচ্ছে না : গবেষণা