মজুদ কমে আসায় এবং সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা না কাটায় আজ সোমবার থেকে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিঅ্যান্ডএইচ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ কথা জানানো হয়।
দেশের সব জেলার সিভিল সার্জন, সিটি করপোরেশনগুলোর প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং সব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাদের পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, আগামী ২৬ এপ্রিল হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রমের প্রথম ডোজ টিকা প্রদান সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। এ বিষয়ে আপনার আওতাধীন সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রসমূহে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করা হলো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়ের নির্দেশক্রমে পত্রটি প্রেরণ করা হলো। খবর বিডিনিউজের।
জানুয়ারির শেষ ভাগে উদ্বোধনের পর ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে গণ টিকাদান শুরু করেছিল সরকার। যারা প্রথম ডোজ পেয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয় ৮ এপ্রিল।
বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা, যার দুটি ডোজ নিতে হবে সবাইকে। মজুদ কমে আসায় টিকার প্রথম ডোজের জন্য এসএমএস পাঠানো গত শুক্রবারই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া চলবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিঅ্যান্ডএইচ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক। তিনি বলেন, প্রথম ডোজ টিকাদান আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। প্রথম ডোজ টিকাদান আবার কবে চালু হবে তা নির্ভর করছে টিকার প্রাপ্যতার ওপর।
অধিদপ্তরে জানিয়েছে, এখন যে টিকা মজুদ আছে তা দিয়ে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকা কার্যক্রম চালানো যাবে। এর মধ্যে নতুন চালান না এলে টিকাদান কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। যারা প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন, তারা সবাই দ্বিতীয় ডোজ পাবেন কিনা এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা সময় এলে বলা যাবে। অনেকে এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে গেছেন, তাদের জন্য টিকাটা দেরিতে হবে। অনেকে হয়ত নেবেন পরে বিভিন্ন কারণে, এমনও হয়। এজন্য এটা এখনই বলা যাবে না। তবে আমরা চেষ্টা করে যাব সবাই যেন পায়।
জরুরি ভিত্তিতে ২০ লাখ ডোজ আনার চেষ্টা : বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইনডিয়ার করোনাভাইরাসের টিকার পরিবেশক বেঙ্মিকো ফার্মসিউটিক্যালস জরুরি ভিত্তিতে ২০ লাখ ডোজ এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। তবে সেই টিকা ঠিক কবে হাতে পাওয়া যাবে তা নিয়ে কথা না হলেও মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই তা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি গতকাল বিকালে বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ টিকার বিষয়ে শুক্রবার বেঙ্মিকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসানের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। পাপন সাহেব পরশুদিন আমাকে বলেছেন, আপনার মিনিমাম কত হলে চলবে? আমি বললাম, ২০ লাখ ডোজ যদি হয় তাহলে শর্টটা কাভার দিয়ে দিতে পারব, আমার আর কোনো সমস্যা থাকে না। তিনি বললেন, ঠিক আছে এটা আপনি পেয়ে যাবেন চিন্তা কইরেন না। তবে এঙাক্ট কোনো ডেট নিয়ে কথা হয়নি।
এর আগে দুপুরে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনার শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি সাংবাদিকদের বলেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কোভেঙ থেকে ফাইজারের এক লাখ ডোজ টিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটাই আমরা আশা করছি যে, আমাদের ঘাটতির যেটুকু সম্ভাবনা ২০ লাখ ডোজ আমাদেরকে বেঙ্মিকোর ঊর্ধ্বতন মহল জানিয়েছে যে তারা এই টিকাটা এর মধ্যে এনে দেবে।
তিনি বলেন, চীনের সিনোফার্ম বাংলাদেশকে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে কর্মরত চীনের কর্মীদের ব্যবহারের জন্য টিকা আনারও অনুমতি চেয়েছে। এই দুটির ব্যাপারে ডিরেক্টর জেনারেল ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তাদের অনুমোদন দিয়েছে। আমরা টিকাটা গ্রহণ করব বলে তাদের জানিয়েছি। তারা আমাদের যেদিন দেবে, সেদিন আমরা তা গ্রহণ করব।
তবে ফাইজারের টিকা ও চীনের টিকা সিনোভ্যাক কত ডোজ করে, কীভাবে প্রয়োগ করা হবে এবং সেগুলো অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে দেওয়া যাবে কিনা সে বিষয়টি আপাতত স্পষ্ট করা যায়নি।
সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকারের কেনা এবং উপহার হিসেবে ভারতের পাঠানো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার মোট ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা হাতে পেয়েছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৭ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮০ জনকে এই টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ২১ লাখ ৫৫ হাজার ২৯৬ জন দ্বিতীয় ডোজও পেয়েছেন। সব মিলে শনিবার পর্যন্ত দেওয়া ৭৯ লাখ ৫৪ হাজার ১৭৬ ডোজ টিকা ধরলে মজুদ আছে ২২ লাখ ৪৫ হাজার ৮২৪ ডোজ। এখন যে টিকা মজুদ আছে তা দিয়ে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকা কার্যক্রম চালানো যাবে বলে অধিদপ্তরে জানিয়েছে। সে হিসেবে আরও ২০ লাখ টিকা পাওয়া গেলে যারা প্রথম ডোজ পেয়েছেন, তারা সবাই দ্বিতীয় ডোজ পাবেন। এর মধ্যে বাড়তি সরবরাহ না এলে টিকাদান কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।
টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব ভারতের : বাংলানিউজ জানায়, করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এখনই টিকা দিতে পারছে না ভারত। তবে যৌথ উদ্যোগে টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
ভারত এখনই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বাংলাদেশে দিতে পারছে না। সে কারণে ভারত বায়োটেক উদ্ভাবিত কোভ্যাঙিনের যৌথ উৎপাদনে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। গত শনিবার ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি নোট ভারবাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নোট ভারবালে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। ভারতে এখন কোভ্যাঙিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। এ টিকার ৭৮ শতাংশ কার্যকর বলে জানিয়েছে ভারত বায়োটেক।