করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে অক্সফোর্ডের টিকা সবচেয়ে কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য যারা করোনার টিকা নিয়ে কাজ করছে তাদেরগুলোও যদি সফলতার মুখ দেখে, তবে আগামী বছরের মাঝামাঝি জনসাধারণের জন্য তা পাওয়া যাবে। যদি টিকার ট্রায়াল ও অন্যান্য গবেষণার কাজ বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে আরও সময় লাগতে পারে। আর টিকা বাজারে এলে প্রথমে করোনার সম্মুখযোদ্ধারা পাবে। তবে এই টিকা দেশের সব মানুষকে বিনামূল্যে দেওয়া উচিত বলে মনে করি। কারণ টিকার জন্য দাম নির্ধারণ করলে বেশিরভাগ মানুষ সেটি গ্রহণ করতে পারবে না। এতে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি শুধু টিকার দিকে তাকিয়ে না থেকে সচেতনও থাকতে হবে।
কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. লায়লা খালেদা। গত বুধবার রাতে আজাদীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বর্তমানে করোনার প্রকোপে শিল্প কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় অনেক কাঁচামালের অপ্রতুলতা দেখা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে টিকা তৈরির অত্যাবশ্যকীয় উপকরণগুলোর দামের ঊর্ধ্বগতির উপর টিকার দাম নির্ধারিত হবে। পাশাপাশি সংরক্ষণ ও পরিবহন খরচের বিষয়টি ধরলে টিকার বর্তমান বাজার মূল্য সাধারণ সময় অপেক্ষা বেশি হবে। তবে সরকার যদি এক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদান করে, তাহলে নিম্নবিত্তের নাগালেও টিকা থাকবে। আর সুবিধাবঞ্চিত ও ভূমিহীনদের কথা বিবেচনায় নিয়ে তাদের জন্য বিনামূল্যে টিকার ব্যবস্থা করা গেলে বাংলাদেশের সবাই হাতের নাগালে করোনার টিকা পাবে।
টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি টিকা উৎপাদন ও বাজারজাত হওয়ার আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এফডিএর অনুমোদন লাগে। আর এসব টিকা সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিরাপদ প্রমাণিত হলেই সর্ব সাধারণের প্রয়োগের অনুমতি পেয়ে থাকে। গবেষণার মাধ্যমে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম রেখে টিকা উৎপাদনের চেষ্টা করা হয়। মারাত্মক কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাবে না। তবে হয়ত মৃদু মাথা ব্যথা, গা ব্যথা হতে পারে।
টিকার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার সব সময় করোনার বিরুদ্ধে প্রস্তুত ছিল। তার প্রমাণ করোনাকালীন দেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন। পাশাপাশি সংক্রমণ রোধেও সরকারের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। একইভাবে বর্তমানেও করোনার টিকা ক্রয় করার জন্য সরকার বিভিন্ন দেশের সাথে সম্ভাব্য সকল পন্থায় চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে; যার ফলস্বরূপ চীন ও ভারত থেকে টিকা ট্রায়ালের প্রস্তাব পায়। আমি মনে করি সরকারের প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি নেই।
ড. লায়লা খালেদা বলেন, মহামারির শুরুতেই সরকার প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের মানুষকে সতর্ক ও সচেতনতায় উদ্যোগী হয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ যথেষ্ট সতর্ক। নিয়মিত হাত ধোয়া, হ্যান্ডস্যানিটাইজারের ব্যবহার, মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ইত্যাদি সতর্কতা মেনে চললে করোনার টিকা আসার পূর্ব পর্যন্ত আমরা সুস্থ থাকব আশা করি।
তিনি বলেন, টিকা ছাড়া করোনা সমূলে উৎপাটন সম্ভব নয়। তাই সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ, যেখান থেকেই টিকা আনা হোক না কেন, তার কার্যকারিতা যেন ভালোভাবে যাচাই করে আনা হয়।