‘ওয়ান সিটি টু টাউন‘ স্বপ্নের দ্বার উন্মোচনে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ চট্টগ্রাম। দু’একদিনের মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে আনোয়ারা কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল সংযোগ সড়কের কাজ। বর্তমানে সড়কের দু’পাশে গাছ কাটা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সেই সাথে চলছে সীমানা নির্ধারণের সার্ভেও।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, টেন্ডার ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন মূল কাজ শুরুর প্রস্তুতি চলছে। ১৬৫ ফুট প্রশস্ত ৬ লেনের সড়ক নির্মাণে পূর্বের অধিগ্রহণে কাজ শুরু হবে। যে কারণে মূল কাজ শুরু করতে তেমন কোনো জটিলতা নেই।
সওজ সূত্র জানায়, শিকলবাহা-আনোয়ারা সংযোগ সড়কটি প্রকল্প বাস্তবায়নে পিএবি সড়কের দুই পাশে প্রায় দেড় হাজার গাছ কাটার কাজ চলছে। মূল সড়কের দুই পাশে রাস্তা প্রশস্ত করার প্রয়োজনে প্রায় ২৫ বছর আগে লাগানো এসব গাছ কাটা পড়ছে। পাশাপাশি সড়কের দুই পাশে চলছে সীমানা নির্ধারণের কাজ। ৬ লেনের মূল সড়কের জন্য পূর্বের অধিগ্রহণেই বাকি কাজ সম্পন্ন করা হবে। রাস্তার বাক সোজা করতে কয়েকটি স্থানে ‘পকেট ল্যান্ড‘ অধিগ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য ৭ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হতে পারে। আগে অধিগ্রহণ করা ভূমিতে যেসব দখলদার অবৈধ স্থাপনা করে রেখেছেন সেগুলো সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হচ্ছে। বর্তমানে শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত অধিগ্রহণের ভূমিতে তৈরি স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ছয় লেনের এই টানেল সংযোগ সড়কের সাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক নেটওয়ার্ক সংযুক্ত হবে। চারশ’ কোটি টাকার এই প্রকল্পে সড়ক উন্নয়নে ব্যয় হবে ২৯৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সাথে কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে ৫০ কিলোমিটার। আর চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে ১৫ কিলোমিটার।
ছয় লেনের এই প্রকল্পে দুই লেন হবে ধীরগতির যানবাহনের জন্য। বাকি চার লেনে চলবে দ্রুতগতির যানবাহন। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)।
সমীক্ষা অনুযায়ী, কর্ণফুলী টানেল চালু হলে প্রথম বছরেই চলাচল করবে ৬৩ লাখ যানবাহন। সড়কটি সরাসরি কোনো বিভাগীয় সদরকে সংযুক্ত না করলেও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায এটি বিশেষ প্রাধান্য পাচ্ছে। একটি জাতীয় মহাসড়ক, একটি আঞ্চলিক সড়ক ও কর্ণফুলী টানেল হয়ে এটি চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে। পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাধ্যমে মাতারবাড়ি পাওয়ার হাব, মহেশখালী গভীর সমুদ্র বন্দর ও টেকনাফ স্থল বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে। কর্ণফুলী টানেল হয়ে যে সড়ক কক্সবাজার যাবে তা কোনো একসময় মিয়ানমার হয়ে প্রসারিত হবে চীনের কুনমিং সিটি পর্যন্ত। মহাপরিকল্পনার আওতায় চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বিদ্যুৎ হাব। মহেশখালীর মাতারবাড়িতে হয়েছে এলএনজি টার্মিনাল। তাই চট্টগ্রাম হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বার খুলে দেওয়ার যে স্বপ্ন সরকার দেখছে সেটির অন্যতম সংযোগ হয়ে উঠবে সাড়ে ১১ কিলোমিটারের বিকল্প সড়কটি।
এদিকে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক ঘিরে অনেকাংশে বদলে যেতে পারে এ অঞ্চলের ব্যস্ততম চাতরী বাজার, ফাজিলখার হাটসহ কয়েকটি বাজারের চেহারা। ইতিমধ্যে অনেকেই মূল সড়কের আশপাশ থেকে দূরে গিয়ে ব্যবসায়িক ঠিকানার খোঁজ শুরু করেছেন। দুই শতাধিক দোকানের চাতরী চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যেই বেশি আতংক কাজ করছে। এই বাজারের পাশেই কর্ণফুলী টানেলের মূল সড়ক, চায়না ইকোনমিক জোন, কেইপিজেড ও টানেলের বিকল্প সড়ক হওয়াতে অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কয়েকটি মার্কেট ও বেশ কিছু দোকানপাট।