‘ভাই বাস কয়টায় ছাড়বে? তিনটা টিকেট হবে?’ গতকাল দুপুর ১২ টায় নগরের শাহ আমানত ব্রিজ এলাকার একটি বাস কাউন্টারের সামনে দাঁড়াতে কানে বাজে এসব প্রশ্ন। কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী লোকজনের ভীড় ছিল কাউন্টারটিতে। এদের কেউ টিকেট খুঁজছেন, কেউ টিকেট পেয়ে বাস কখন ছাড়বে জানতে চাচ্ছেন কাউন্টারে দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে।
চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করা অধিকাংশ বাস কোম্পানির টিকেট কাউন্টার রয়েছে শাহ আমানত ব্রিজ এলাকায়। প্রায় প্রতিটি কাউন্টারে ভিড় দেখা গেছে গতকাল। আগের দিন বৃহস্পতিবারও টিকেটের চাহিদা বেশি ছিল বলে একাধিক বাস কাউন্টারে কর্মরতরা জানিয়েছেন। হঠাৎ বাসের এ চাহিদা বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে গিয়ে গেছে, টানা চারদিনের ছুটি পেয়ে ইট–কংক্রিটের শহরের কালো ও বিষাক্ত ধোঁয়া এড়িয়ে গ্রামের শীতল বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে ছুটছেন লোকজন। কেউবা ছুটি উপভোগ করতে পরিবার নিয়ে ছুটছেন সমুদ্রের শহর কক্সবাজার। পাহাড়ি জনপদ তিন পার্বত্য এলাকায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় কক্সবাজার ছুটছেন ভ্রমণপিপাসুরা। তাই কক্সবাজার রুটে যাত্রীর চাপ বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী গত বৃহস্পতিবার ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি। গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার রয়েছে সাপ্তাহিক ছুটি। আগামীকাল রোববার শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত চারদিন ছুটি রয়েছে। এছাড়া শারদীয় দুর্গাপূজা, ফাতেহা–ই–ইয়াজদাহম, লক্ষ্মীপূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে স্কুল–কলেজে টানা ৯ দিন ছুটি রয়েছে। মাঝে শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে টানা ১১ দিন।
ঘরমুখো লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্ত্রী–সন্তানকে আগেই গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কর্মস্থলে ছুটি পেয়ে তাই তারাও ছুটছেন গ্রামে। ফলে শহরও কিছুটা ফাঁকা হয়ে এসেছে।
গতকাল শাহ আমানত ব্রিজ এলাকা ছাড়াও কদমতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল, কদমতলী বাস টার্মিনাল, স্টেশন রোড বিআরটিসি বাসস্টেশন রোড, গরীবুল্লাহ শাহ (রহ.) মাজার গেট, অলংকার মোড়, একে খান ও সিটি গেট এলাকার বাস কাউন্টারগুলোতে ঘরমুখো মানুষের ভিড় ছিল। টিকেট পাওয়া গেলেও বাড়তি দাম নেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে। তবুও দুর্ভোগ মাড়িয়ে সবাই ফিরছেন গ্রামে। গতকাল ভীড় ছিল রেল স্টেশনেও। ট্রেনের অগ্রিম টিকিট যারা কেটেছেন তাদের যাত্রা কিছুটা আনন্দদায়ক হয়েছে।
গতকাল শাহ আমানত ব্রিজ এলাকায় কথা হয় আজিম নামে এক স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে। তিনি আজাদীকে জানান, স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি চকরিয়া যাচ্ছেন। অনেক চেষ্টা করেও টিকেট যোগাড় করতে পারেননি। তাই সিএনজি করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু সিএনজি চালক অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছেন। এ শিক্ষক বলেন, লম্বা ছুটি পেলেই বাড়ি চলে যাই। কয়েকদিন থেকে আসি। শহরের যান্ত্রিক জীবন ছেড়ে গ্রামে বেড়াতে ভালো লাগে।
এদিকে গতকাল দুপুরে অনেক যাত্রীকে দেখা গেছে টিকেট না পেয়ে মিনি ট্রাকে করে রওয়ানা দিয়েছেন। এদের একজন সজীব। তিনি আজাদীকে জানান, তার বাড়ি আমিরাবাদ। চকবাজারে একটি মেসে থাকেন। পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি করেন। কলেজ বন্ধ। টিউশনির ছাত্র বাবা–মায়ের সঙ্গে কক্সবাজার গেছেন। তাই নিজেও ছুটছেন নিজ বাড়ি আমিরাবাদ। বাস না পেয়ে অন্যদের দেখে মিনি ট্রাকে উঠে পড়েছেন।
নগরের বহদ্দারহাটে কথা হয় শ্রাবণী দাশের সঙ্গে। তার গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনিয়া। তিনি আজাদীকে জানান, বহদ্দারহাটে স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকেন। পূজার প্রথম দুইদিন শহরে কাটিয়েছেন। শেষ সময়গুলো বাবা–মায়ের সঙ্গে উপভোগ করতে চান। তাই গ্রামে যাচ্ছেন। তার সাথে ছিলেন স্বামী ও দুই মেয়ে।
এদিকে ছুটিতে কক্সবাজার ভ্রমণপিপাসুদের কথা বিবেচনা করে ঢাকা–কক্সবাজার রুটে বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করে রেল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত চারদিন এ রুটে নিয়মিত দুই জোড়া আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি আরও একটি যাত্রীবাহী বিশেষ ট্রেন চলছে। রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগ এবং পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, টানা চারদিনের ছুটিতে কক্সবাজার ভ্রমণে যাত্রীদের ট্রেনের টিকিটের চাহিদা রয়েছে লাখের উপরে। টিকিট অনলাইনে ওপেন করার সাথে সাথে মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। ঢাকা থেকে ছেড়ে এলেও চট্টগ্রামের প্রচুর যাত্রী অনলাইনে কক্সবাজারের টিকেট কেটেছেন।