টানা ছুটিতে লাখো পর্যটকের সমাগম

কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু আজ

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৬ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

সমুদ্রের কাছে এলেই মন ভাল হয়ে যায়, তাই সুযোগ পেলেই ছুটে আসি এখানে। পূজার ছুটিতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে অসাধারণ সময় কাটছে। টানা ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র শহর কক্সবাজার ভ্রমণে এসে এভাবে প্রতিক্রিয়া জানালেন ঢাকা থেকে আসা পর্যটক সাহাদাত হোসেন (৩৫)। শুধু তিনি নন, এবারের পূজার ছুটিতে কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন লাখো পর্যটক। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার থেকে পর্যটন মৌসুমের প্রথমবারের মত শুরু হচ্ছে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ চলাচল। তবে আপাতত একটি জাহাজই কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান।
বাবা-মায়ের সঙ্গে সৈকত ভ্রমণে আসেন স্কুল ছাত্র মো. রুবায়েত। তার প্রতিক্রিয়া আরও অসাধারণ। রুবায়েত বলেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে সমুদ্রে গোসল করেছি, পরে সুইমিংপুলেও। কি মজা হয়েছে তা বলে বোঝাতে পারবো না। কাল যাব সেন্টমার্টিন সেখানে আরও মজা হবে। সমুদ্রের তুলনা শুধুই সমুদ্র। আর কক্সবাজারের মত এত বিশাল সাগর তো দেশের কোনো জায়গায় নেই। তাই তো এখানে না এসে আর কোথায় যাব। এবার ভাবীসহ চলে এসেছি, খুব মজা হচ্ছে। বললেন চাঁদপুর থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মাকসুদা বেগম (৪৫)।
সবেমাত্র এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এর মধ্যে দুর্গাপূজা, ঈদে মিলাদুন্নবী ও প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে সারা দেশে ১ থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ পড়েছে। এছাড়া সাপ্তাহিক ছুটি বাদ দিয়ে এ সময়ে দুদিন সরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমাও বন্ধ থাকছে। এই সুযোগে দূর-দুরান্তের মানুষ বেড়ানোর জন্যে ছুটে আসছেন কক্সবাজারে। পর্যটন বসায়ীরা বলছেন, ঈদের ছুটির পর সম্প্রতি তেমন পর্যটক সমাগম হয়নি। কারণ বিলম্বিত বর্ষা, প্রচণ্ড গরম, ঘনঘন বৈরি আবহাওয়ায় সমুদ্র উত্তাল থাকায় পর্যটকরা কক্সবাজারমুখী হয়নি। তবে এই দশ দিনে পর্যটন শহর কক্সবাজারে লাখো পর্যটক সমাগম হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল বুধবার বিকালে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে দেখা যায়, লাখো পর্যটকের কোলাহল। বিশেষ করে বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জন উৎসবকে কেন্দ্র করে এখানে পর্যটক সমাগম ছিল চোখে পড়ার মত।
জানা গেছে, কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে ৫ শতাধিক। এখানে রাত যাপনের সুযোগ রয়েছে এক লাখ ৭০ হাজারের মতো।
হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ৯৫ শতাংশ হোটেলের কক্ষ ভাড়া হয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটক সমাগম থাকবে। আমরা আশা করছি, এই সময়ের মধ্যে অন্তত সবমিলে দশলাখ পর্যটকের সমাগম হবে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান। তিনি বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শুধু নিরাপদ ভ্রমণ নয়, পর্যটকেরা যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়, সেই বিষয়ে সার্বিক প্রস্তুতিও ট্যুরিস্ট পুলিশের আছে। সাদা পোষাকেসহ পর্যটন স্পটগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন, ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ, সিসিটিভি ক্যামেরা কার্যকরসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সক্রিয়ভাবে কাজ করবে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পাশাপাশি কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে যে জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে সেখানে সার্বক্ষণিক ট্যুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান দৈনিক আজাদীকে বলেন, কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা যেন ভালো স্মৃতি নিয়ে গন্তব্যে ফিরতে পারে সেই চেষ্টা আমাদের থাকবে। এজন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক টিম বীচে মোতায়েন থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ সংবাদ সম্মেলন করবেন প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধসংস্কার কাজ বন্ধ, বৃষ্টিতে ভোগান্তি