সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ভাঙনের মুখে পড়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩দিন ধরে সামুদ্রিক উচ্চ জোয়ার সৈকত পেরিয়ে মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন পয়েন্টে আঘাত করে এবং কিছু স্থানে সড়ক ওপচে পড়ে। এর ফলে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ঝাউবাগানসহ বিস্তীর্ণ সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা সাগরে বিলীন হয়ে যায়। সামুদ্রিক উচ্চ জোয়ারের তীব্র ধাক্কা এখন সরাসরি মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন পয়েন্টে আঘাত হানতে শুরু করায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সমুদ্র তীরবর্তী এ সড়কটি। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের তীর ধরে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভের উদ্বোধন হয় ২০১৭ সালের ৬ মে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তবে ১৯৯১-৯২ সালে সড়ক প্রকল্পটি গ্রহণের পর তখন থেকেই নির্মাণ কাজ শুরু হয় মেরিন ড্রাইভের। কিন্তু মেরিন ড্রাইভের স্টার্টিং পয়েন্ট কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে বেইলি হ্যাচারি মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৩শ মিটার সড়ক বিগত ১৯৯৯-২০০০ সালে সামুদ্রিক ভাঙনে বিলীন হয়ে গেলে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে সড়ক যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০০৫-০৬ সালে কলাতলী গ্রামের সংকীর্ণ সড়কটিকে সামান্য প্রশস্ত করে মেরিন ড্রাইভের সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হয়। মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ সূত্রমতে, প্রাকৃতিক নানা চ্যালেঞ্জের মুখে সমুদ্র তীরবর্তী ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি নির্মাণে ২৫ বছর সময় লেগেছে। এসময় মেরিন ড্রাইভের অ্যালাইনমেন্ট কয়েকবার পরিবর্তন করতে হয়েছে। এরপরও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে মাঝেমধ্যেই ঝুঁকির মুখে পড়ে মেরিন ড্রাইভ। এর আগেও সাগরের ভাঙন ঠেকাতে সৈকতে জিও টেক্সটাইল ব্যাগ দিয়ে বালির বাঁধ ও সিমেন্ট-কংকরের তৈরি টেট্রাপড স্থাপন করা হয়। কিন্তু সাগরে অস্বাভাবিক জোয়ার তৈরি হলে তীব্র জোয়ারের ধাক্কায় টেট্রাপড মাটিতে দেবে যায় এবং জিও ব্যাগ ছিঁড়ে যায়। পরে সেখানে নতুন জিও ব্যাগ-বাঁধ ও টেট্রাপড প্রতিস্থাপন করা হয়।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাগরের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বৃদ্ধি পায়, যা গত ২৪ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। জোয়ারের পানিতে বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয় এবং সমুদ্র তীরবর্তী বহু বসতি ও ঝাউবাগান বিলীন হয়ে যায়। জোয়ারের তোড় সরাসরি আঘাত করে কঙবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে। এরমধ্যে হিমছড়ি, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফসহ মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন ধরে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এ সড়কের হিমছড়ি সৈকত পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অন্তত ৩০০ মিটার এলাকায় বেশ কয়েকটি বড় ভাঙন তৈরি হয়েছে। হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান ও পুলিশ ফাঁড়ির সামনে জিওব্যাগ ছিঁড়ে সড়কের মাটি সরে গেছে। সৈকত সংলগ্ন জেলা পরিষদের দুতলা গেস্ট হাউসটিও ভাঙনের মুখে হেলে পড়েছে। হিমছড়ির ব্যবসায়ী মো. আলম (৪০) জানান, এবারের ঘূর্ণিঝড়ে জোয়ারের তীব্রতা ছিল বেশ অস্বাভাবিক। জোয়ারের পানি সড়ক উপচে রাস্তার ওপারে চলে এসেছে।
হিমছড়ি বাজার সংলগ্ন জেলা পরিষদের গেস্ট হাউসের সঙ্গে লাগোয়া ছোট চায়ের দোকানদার হাফিজুর রহমান জানান, হিমছড়ি সৈকত বছর-দুয়েক ধরে ভাঙনের মুখে রয়েছে। এবার ভাঙন সড়ক পর্যন্ত চলে এসেছে। কঙবাজার সৈকতের পর হিমছড়ি সৈকত, জাতীয় উদ্যান ও পাহাড়ি ঝর্ণা পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান। স্থানীয় বাসিন্দা আবু আহমদ জানান, চার বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সৈকতে নেমেছিলেন। তখনও সড়ক থেকে সৈকত অনেক দূরে ছিল। এখন সাগর একেবারে কাছে চলে এসেছে।
উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, সমুদ্রের জোয়ার মেরিন ড্রাইভে ধাক্কা খেয়ে সড়কটির বিভিন্ন পয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি রক্ষায় স্থায়ী সুরক্ষা দরকার।
কঙবাজার পানি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, সড়কটি সড়ক বিভাগের হলেও এটি এখনো আমাদের হস্তান্তর করা হয়নি। যে কারণে ওই সড়কে আমরা কিছু করতে পারিনা। সড়কটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানেই আছে এবং এরাই এটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। যোগ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী।