ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে অভ্যন্তরীণ নৌ রুট

আবহাওয়া সংকেত উপেক্ষা, চলছে অননুমোদিত লাইটার জাহাজ, এক সপ্তাহে ডুবল ৪টি

হাসান আকবর | মঙ্গলবার , ৩ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:১২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ রুট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। একের পর এক জাহাজ সাগরে ডুবে যাওয়ার ঘটনায় এই রুট নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নিয়ম না মেনে, আবহাওয়া বিভাগের সতর্কতা সংকেত উপেক্ষা করে উত্তাল সাগরে জাহাজ চালানোর ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে অন্তত চারটি লাইটারেজ জাহাজডুবি এবং কয়েক কোটি টাকার পণ্য সাগরে ভেসে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। চ্যানেলে ডুবে থাকা জাহাজগুলো নতুন দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কোটি কোটি টন পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। আমদানিকৃত পণ্যের একটি বড় অংশ লাইটারেজ জাহাজে পরিবহন করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানকারী মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য নিয়ে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, যশোর বা সংশ্লিষ্ট রুটগুলোতে চলাচল করতে লাইটারেজ জাহাজগুলোকে সাগর পাড়ি দিতে হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেওয়ার সক্ষমতা অধিকাংশ লাইটারেজ জাহাজের নেই। সাগর উত্তাল হলে ভালো মানের জাহাজের চলাচল যেখানে নিষেধ করা হয়, সেখানে অপেক্ষাকৃত দুর্বল কাঠামোর অনেক জাহাজ ভাড়া নিয়ে যাত্রা করে।

সতর্কতা সংকেত জারি করা হলে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর এবং লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল উত্তাল সাগরে জাহাজ না চালানোর ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়। সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রেও দেওয়া হয় বিশেষ নির্দেশনা। কিন্তু এসব না মেনে অনেক জাহাজ যাত্রা করে। এসব জাহাজই মূলত দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সাগরে ডুবে গিয়ে পুরো নৌ রুটকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপের পাশাপাশি মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কঙবাজারকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেতের মাঝে এসব জাহাজের চলাচলে বিধিনিষেধ থাকলেও তা না মেনে কোটি কোটি টাকার পণ্য নিয়ে জাহাজগুলো যাত্রা করছে। ইতোমধ্যে চারটি জাহাজ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি ভাসানচরের কাছে ডুবেছে কয়লাবোঝাই একটি জাহাজ। কুতুবদিয়ার অদূরে গভীর সাগরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ভাসতে থাকা অপর একটি জাহাজকে কোস্ট গার্ড উদ্ধার করেছে। উদ্ধার করেছে জাহাজটির ১৪ নাবিককে। গত শনিবার রাতে ভাসানচর লাইট হাউজের কাছে অপর একটি কয়লাবাহী জাহাজ থেকে উদ্ধার করা হয় ১৩ নাবিককে। উত্তাল সাগরে জাহাজটিতে পানি ঢোকে। জাহাজটির ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছে তা জানা যায়নি।

এদিকে গতকাল সকালে চর গজারিয়ার কাছে এমভি আল নাহিয়ান নামে একটি জাহাজ ডুবে যায়। পাথর বোঝাই জাহাজটি নৌ চ্যানেলের মাঝখানে ডুবে যাওয়ায় নৌ চলাচলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ সবুর খান গতকাল এই সতর্কতা জারি করে ডুবে যাওয়া জাহাজটির ডান এবং বাম পাশ দিয়ে সতর্কতার সাথে চলাচল করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। জাহাজটি ভাটার সময় কিছু অংশ দেখা গেলেও জোয়ারে পুরোপুরি ডুবে থাকছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

আবহাওয়া বিভাগের সতর্কতা সংকেত অনুসরণ না করে অননুমোদিত অনেক লাইটারেজ জাহাজ চলাচল করছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, এতে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ রুট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। শুধু রাতে নয়, দিনেও জাহাজ চলাচল হুমকির মুখে পড়ছে। সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার অনুমোদন না থাকা জাহাজের চলাচল বন্ধ করতে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও জাহাজগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের নিয়ন্ত্রণে এবং সিরিয়ালে যেসব জাহাজ চলাচল করে সেগুলোর কাগজপত্র এবং সক্ষমতা যাছাই বাছাই করে বরাদ্দ দিই। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে পণ্য নিয়ে চর গজারিয়ার কাছে ডুবে যাওয়া এমভি আল নাহিয়ান আমাদের সিরিয়ালে চলাচলকারী জাহাজ নয়। এটি ডব্লিউটিসিতে চলাচল করে না। তাই জাহাজটির ব্যাপারে আমাদের দায়দায়িত্ব নেই। সমুদ্রে চলাচলে এটির অনুমোদন আছে কিনা জানি না।

জাহাজটির মালিক ক্যাপ্টেন আজাদের সঙ্গে কথা বলতে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। জাহাজটি সাগরে পুরোপুরি ডুবে গেছে বলে রাতে শেষ খবরে জানা গেছে। তবে এটিকে উদ্ধার করা না হলে চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশের নৌ রুট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে বিআইডব্লিউটিএর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প
পরবর্তী নিবন্ধশেষে মারা গেলেন ছুরিকাঘাতকারীই