চট্টগ্রামসহ সারা দেশে জ্বালানি তেল সংশ্লিষ্ট ২৭টি অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে দেশের জ্বালানি তেল লাইটারিংয়ের দুটি অয়েল ট্যাংকারে বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর জ্বালানি তেল সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার জুমে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক থেকে জ্বালানি আমদানি, মজুত, সংরক্ষণের মতো বড় স্থাপনাগুলোর ব্যাপারে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, যশোরসহ দেশের বড় বড় তেল সংরক্ষণাগারগুলোতে ইতোমধ্যে বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী এবং পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে স্থাপনাগুলো। ৩০ সেপ্টেম্বর বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে জ্বালানি তেল লাইটারিংয়ের দুটি জাহাজের একটি এমটি বাংলার জ্যোতিতে। বিএসসির মালিকানাধীন এই জাহাজটির ক্ষয়ক্ষতির ধকল সামলে ওঠার আগেই পাঁচ দিনের মাথায় সংস্থার অপর জাহাজটিতেও বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দুটি ঘটনায় প্রাণ হারান চারজন। দুর্ঘটনার পর ভাগ্যক্রমে প্রায় ১৭০ কোটি টাকার ক্রুড অয়েল রক্ষা পেলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় জ্বালানি তেল লাইটারিং কার্যক্রম। এই কাজের জাহাজ দুটি সচল হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
৫ দিনের ব্যবধানে দুটি জাহাজে দুর্ঘটনার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না সরকারের নীতিনির্ধারক মহল এবং জ্বালানি তেল সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা। বিষয়টিতে নাশকতা থাকতে পারে বলে মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি বিষয়টি পুরোপুরি সামনে নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। কিন্তু তার আগেই সরকার দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার ব্যাপারটি গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা জ্বালানি তেল সংশ্লিষ্ট সবগুলো স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের সার্বিক গতির পুরোটাই জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল। আমদানিকৃত জ্বালানি তেল সংরক্ষণ এবং সরবরাহ নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করে মোটরযান, বিমান চলাচল, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচসহ বিভিন্ন কার্যক্রম। জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা গেলে দেশের সার্বিক কর্মকাণ্ড মুখ থুবড়ে পড়তে বেশি সময় লাগে না। এই অবস্থায় কোনো মহল দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে সরকার।
গতকাল বিকালে জ্বালানি তেল সেক্টরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জুম মিটিং করেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান। মিটিংয়ে বিপিসির পরিচালকবৃন্দ ছাড়াও ইস্টার্ন রিফাইনারি, পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, যমুনা অয়েল কোম্পানি, চট্টগ্রামস্থ প্রধান ডিপো, নারায়ণগঞ্জের গুদনাইল ডিপো, যশোর ডিপোসহ বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা তেল সংরক্ষণাগারগুলোর প্রধানদের নিয়ে এই বৈঠক হয়। বৈঠকে সবগুলো স্থাপনায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
বিপিসির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজাদীকে জানান, উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে জ্বালানি তেল সেক্টরের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এতে প্রতিটি স্থাপনাকে ক্লোজড মনিটরিংয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। সিসিটিভির সংখ্যা বাড়ানো, সার্বক্ষণিক পাহারা জোরদার, সেনাবাহিনী ও পুলিশি টহল জোরদার, আনসার সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের জ্বালানি তেল খাতের প্রতিটি স্থাপনাকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে।