জোয়ার ও টানা বৃষ্টিতে নগরীর কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতা

পানি ঢুকেছে অনেক বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটে আজও হতে পারে বৃষ্টি, পাহাড় ধস নিয়ে সতর্কতা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১০ জুলাই, ২০২৫ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

টানা বৃষ্টি। সাথে ছিল জোয়ার। দু’য়ের প্রভাবে গতকাল নগরের বেশ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। নিচু এলাকার অনেক বাসাবাড়ি ও দোকানপাটেও পানি ঢুকে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। এছাড়া অনেক এলাকায় সড়কে হাঁটু পানি থাকায় ভেগান্তি হয়েছে পথচারীদের। বিশেষ করে সকালে কর্মস্থলমুখী লোকজনের ভোগান্তি ছিল বেশি। এদিকে আজও বৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করে আবহাওয়া অফিস।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দিবাগত মধ্য রাত থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। রাতভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েক দফা দফা থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বৃষ্টির সময় ছিল জোয়ার। ফলে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। অবশ্য বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই পানি নেমে যায়। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় নগরে ৭০ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পতেঙ্গা পর্যবেক্ষণাগার। একই সময়ে আমবাগান পর্যবেক্ষণাগারে রেকর্ড হয় ১১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ২৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে বান্দরবান পর্যবেক্ষণাগারে। এর আগে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৬০ দশমিক ২ মিলিমিটার এবং বেলা ১২টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৫৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় পতেঙ্গা পর্যবেক্ষণাগারে।

এদিকে গতকাল সকাল ৬টা ১১ মিনিটে কর্ণফুলী নদীতে প্রথম জোয়ার শুরু হয়। ভাটা শুরু হয় ১২টা ৩ মিনিটে। যখন ভাটা শুরু হয় তখন জোয়ারের উচ্চতা সর্বোচ্চ থাকে। অর্থাৎ ভারী বৃষ্টিপাতের সময় জেয়ার ছিল।

এদিকে জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে জিইসি মোড়, তিন পোলের মাথা, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, হালিশহর, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, গোয়াল পাড়া, ইপিজেড, পাঁচলাইশ ও মেহেদীবাগ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে কর্মস্থলে যাওয়া লোকজনের পাশাপাশি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীর দুর্ভোগে পড়েন।

চকবাজার কে বি আমান আলী সড়কের বাসিন্দা মুনির বলেন, সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে দেখি রাস্তায় পানি জমে আছে। ভিজে ভিজে পানির ভিতর হেঁটে গন্তব্যে পৌছি। এদিকে বৃষ্টির কারণে সকালে অফিসগামী যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। যানবাহন কম থাকায় অনেককে সড়কে অপেক্ষা করতে দেখা যায় লোকজনকে। এ সময় রিকশা ও সিএনজি চালকরা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভাড়া দাবি করেন বলেও অভিযোগ করেন পথচারীরা।

আজও বৃষ্টি হতে পারে, পাহাড় ধস নিয়ে সতর্কতা : পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. ইসমাঈল ভূঁইয়া গতকাল সন্ধ্যায় জানান, আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে অতি ভারী বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এসময়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণপূর্ব ও অস্থায়ীভাবে দক্ষিণপশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে যা অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বা আরও অধিক বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। ভারী অথবা অতি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি এলাকাসমূহের কোথাও কোথাও পাহাড় ধসের আশংকা রয়েছে এবং নগরের কোথাও কোথাও অস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে।

গতকাল সকাল ১০টায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য দেয়া ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়, দক্ষিণপশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় চট্টগ্রাম, ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা, বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা ও ঢাকা মহানগরে অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মর্লিক জানান, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয়। উত্তর বঙ্গোপসাগর প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসৈকতে ভেসে এলো চবির আরেক শিক্ষার্থীর মরদেহ, নিখোঁজ ১
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীতে ভাড়া বাসায় ঝুলছিল গৃহবধূর লাশ