বঙ্গবন্ধু টানেলের জন্য অধিগ্রহণকৃত ভূমির ক্ষতিপূরণের টাকার তথ্য জানতে গিয়ে হয়রানির শিকার ও অবরুদ্ধ হয়েছেন-এমন অভিযোগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ (ভূমি অধিগ্রহণ) শাখার এলএওসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন এক ব্যক্তি। গত ১০ নভেম্বর এ ঘটনা ঘটে উল্লেখ করে গতকাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে মামলাটি করেন মো. হেমায়েত হোসেন নামে এক ব্যক্তি। মামলার আসামিরা হলেন এলএও (ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা) এহসান মুরাদ, ভূমি সার্ভেয়ার মোহাম্মদ আব্দুল মুমিন, সার্ভেয়ার মোহাম্মদ ইমান হোসেন গাজী, মুক্তার হোসেন, আবু কাউসার সোহেল ও অফিস সহকারী বেলায়েত হোসেন বুলু।
বাদীর আইনজীবী এরফানুল হক আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আদালত আমার মক্কেলের বক্তব্য রেকর্ড করে সহকারী পুলিশ সুপার বা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার নিচে নয় এমন কাউকে দিয়ে অভিযোগটি তদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতেও নির্দেশনায় বলা হয়।
মামলার আরজিতে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ পতেঙ্গা মৌজাধীন অধিগ্রহণকৃত ভূমি নিয়ে মো. সাহাব উদ্দিন, মো. সালাউদ্দিন, মো. শাহজাহান, মো. মহিউদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন, আলাউদ্দিন, মোছাম্মৎ মনোয়ারা বেগম, নুর নাহার বেগম ও মোছাম্মৎ শামসুন নাহারের সাথে বাদী মো. হেমায়েত হোসেনসহ অপর একজনের মধ্যে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী তপশীলোক্ত উক্ত ভূমি সম্পর্কিত মামলা পরিচালনার খরচও তারা যোগান দেন। ৬ বছরে খরচ হয় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। স্বাভাবিকভাবেই চুক্তির শর্ত মোতাবেক অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তির ক্ষতিপূরণের টাকার একটি অংশ বাদী বা বাদীর পক্ষের লোকজনের পাওয়ার কথা। এই অবস্থায় তাদের বাদ দিয়ে যাদের সাথে চুক্তিনামা হয়েছে তারা উল্টে যান এবং প্রতারণার আশ্রয় নেন। এক দালালের মাধ্যমে আসামিদের সহযোগিতায় ক্ষতিপূরণের পুরো টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা করেন। বিষয়টি জানতে পেরে এলএও এহসান মুরাদের কার্যালয়ে
লিখিতভাবে আবেদন করলে তা গৃহীতও হয়। পরে দাখিলকৃত আবেদনটির বিষয়ে জানতে এবং ভূমির ক্ষতিপূরণের টাকার হালনাগাদ অবস্থা জানতে ১০ নভেম্বর এলএ শাখায় গেলে আসামিরা তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন এবং তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
আরজিতে আরো বলা হয়, সার্ভেয়াররা বাদীকে টেনেহিঁচড়ে এলএওর রুমে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর বাদীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ভূমিদস্যু, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা বলে গালি দেয়া হয়। সেই সাথে ক্ষতিপূরণের কোনো টাকা বাদীসহ তার পক্ষের কেউ পাবে না বলেও জানানো হয়। বাড়াবাড়ির চেষ্টা করলে কঠিন মামলা দেওয়াসহ হয়রানির শিকার হতে হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। একপর্যায়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় তার বেশ কয়েকটি ছবিও তোলা হয় এবং ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।
আরজিতে বলা হয়, এলএও এহসান মুরাদ জানান, এল এ অফিসে পার্সেন্টেজ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে চাইলে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার সাথে বসতে হবে। এসবে সম্মত না হলে বাদীকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়।
বিডিনিউজ জানায়, অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও ভূমি অধিগ্রহণ শাখার নির্বাহী কর্মকর্তা এহসান মুরাদ বলেন, টানেলের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে চার বছর আগে। এতদিন পর কেউ কেন ক্ষতিপূরণ আদায়ে আবেদন করল, তা বোধগম্য নয়। যারা অভিযোগ করেছে, তাদের বিষয়টি স্পষ্টভাবে মনে পড়ছে না। কেউ যদি মামলা করে সেটা আদালতের বিচারাধীন বিষয়। এ বিষয়ে মন্তব্য করব না।