জেলা-উপজেলায় টহল জোরদার

লকডাউনের ৭ম দিন

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ৮ জুলাই, ২০২১ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

করোনার বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে প্রতিপালনে জেলা-উপজেলায় মামলা ও জরিমানা অব্যাহত রয়েছে। যদিও গতকাল বুধবার কঠোর লকডাউনে বেড়েছে মানুষের যাতায়াত ও যান চলাচল। এতে করে বিভিন্ন দোকানদার, পথচারী ও চালকদের গুণতে হয়েছে মামলা ও জরিমানা। তবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশকে সাথে নিয়ে প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা পৌরশহর ছাড়াও উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় টহল জোরদার রেখেছে।
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, লকডাউনের সপ্তম দিনের সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের চলাচল বেড়ে গেছে। বেড়েছে লোক সমাগমও। মাঠে রয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত, পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা। তারা উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছেন। যেখানে প্রশাসনের কর্মকর্তারা সক্রিয় সেখানেই লকডাউন কার্যকর। তারা সরে যেতেই ফের জটলা পাকিয়ে আসে জনতা। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়ও বেড়েছে মানুষের আনাগোনা। বিভিন্ন দোকানপাটে গভীর রাত পর্যন্ত চলেছে বেচাকেনা। চায়ের দোকানে বসে আড্ডা মারতেও দেখা গেছে। যেখানে স্বাস্থ্যবিধি ছিল সম্পূর্ণ উপেক্ষিত। লকডাউনের সপ্তম দিনে গতকাল বুধবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। গোডাউন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের তল্লাশি দল বসে আছে সড়কের একপাশে। স্বাভাবিকভাবেই চলছে গাড়িসহ সাধারণ মানুষ। এসময় এক পুলিশ কর্মকর্তা বললেন , ভাই পরিস্থিতি বড় জটিল। কঠিন জীবন জীবিকার সমন্বয় করেই আইন প্রয়োগ করতে হবে। শান্তিরহাট এলাকার ব্যবসায়ী মো. সেলিম জানান, চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান থেকে গোচরা চৌমুহনি আসতে বেশ কয়েকবার গাড়ি বদলাতে হয়েছে। যেখানে প্রশাসনের তল্লাশি চলেছে তার আগে গাড়ি থেকে নেমে যেতে হয়। হেঁটে পেরিয়ে কিছুদূর এসে আবার গাড়ি নিতে হয়েছে। অনেকে তো দূর থেকে তল্লাশি কিভাবে করছে সেটা দেখতেই ভিড় করেছেন। এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব চৌধুরী বলেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারা বাইরে বের হচ্ছেন তাদের সচেতনতার পাশাপাশি আর্থিক জরিমানা ও মামলা করা হচ্ছে। এদিকে লকডাউন উপেক্ষাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় উপজেলায় বেড়ে চলেছে করোনা সংক্রমণ। বুধবার রাঙ্গুনিয়ায় ৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি মাসের এই ৭ দিনে ৫৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে রাঙ্গুনিয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২৩ জনে। সুস্থ হয়েছেন ৪৯০ আর মারা গেছেন ১৪ জন। এ পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়ার ২ হাজার ৮৪০টি নমুনা পরীক্ষায় এই ফলাফল পাওয়া গেছে।
চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, করোনার বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে প্রতিপালনে কক্সবাজারের চকরিয়ায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে উপজেলা প্রশাসন। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশকে সাথে নিয়ে প্রশাসনের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পৌরশহর ছাড়াও উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় এই তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এদিকে শ্রমজীবী মানুষ ইজিবাইক, রিক্সা নিয়ে কাজের সন্ধানে বের হয়ে পড়ায় গতকাল বুধবার সকাল থেকে পৌরসভাসহ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় যান ও জন চলাচল রোধ করতে নতুন করে মাঠে নামানো হয়েছে ১৫০ জন আনসার সদস্যকেও। তারা নির্দিষ্ট স্থানে সড়কে অবস্থান করে ইজিবাইক (টমটম), রিক্সার চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। অপরদিকে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া যেসব মানুষ অযথা ঘর থেকে বের হচ্ছেন তাদেরকেও মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের। বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মুখে মাস্ক না থাকা, অযথা বের হওয়াসহ নানা কারণে জরিমানা গুণতে হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, ভ্রাম্যমাণ আদালতে বুধবার সারাদিন ১৭টি মামলায় ২৫ জনের কাছ থেকে নগদ ৪২,২০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। উপজেলাজুড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, কঠোর বিধিনিষেধ প্রতিপালনে চকরিয়ায় নিযুক্ত আরেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. দিদারুল আলম, চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তানভীর হোসেন। এ ব্যাপারে চকরিয়ার ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘করোনার বিস্তার রোধকল্পে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে প্রতিপালনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এর পরও যেসব অসাধু ব্যবসায়ী দোকান খুলছে সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে। এছাড়াও যত্রতত্র অযথা ঘুরাফেরা, মাস্ক না পরাসহ বিভিন্ন কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দোষ স্বীকার করাসহ আর্থিকভাবে জরিমানা করা হচ্ছে।
হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, করোনা মহামারীর নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের ৭ম দিনে উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে গতকাল বুধবার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৮ টি মামলা ও ২ হাজার ৫ শ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তাছাড়া জনসচেতনতার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশন ভূমি শরীফ উল্লাহ জানান, সরকার ঘোষিত লকডাউনের ৭ম দিনে উপজেলার বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে ৮ টি মামলায় ২৫০০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। জনসচেতনতার লক্ষ্যে ব্যাপক মাইকিং করা হয়। হাটহাজারী পৌরসভা, ইছাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ইছাপুর বাজারে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে দোকান খোলা রাখায় এক দোকানীকে ১০০০/- টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় হাটহাজারী মডেল থানার পুলিশ সদস্যরা সহযোগিতা করেন।
এদিকে লোহাগাড়ায় লকডাউনের সপ্তম দিন ৩৩ মামলায় ১৩ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল বুধবার দিনব্যাপী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আহসান হাবীব জিতু এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী। সাথে ছিলেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকের হোসাইন মাহমুদ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১০ পদাতিক ডিভিশনের আলিকদম ২৭ বীরের ক্যাপ্টেন মো. মুক্তাদির আহমেদ আসিফ, ক্যাপ্টেন নাদিম, ইউএনও কার্যালয়ের সমির চক্রবর্তী ও ভূমি অফিসের নয়ন দাশ। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহসান হাবীব জিতু জানান, লকডাউন অমান্য করে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে অযথা ঘুরাঘুরি, বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া ও মাস্ক না পরায় সংক্রমণ প্রতিরোধ আইন ২০১৮ এর ২৪ ধারায় ৩৩ জনকে ১৩ হাজার ৩০০টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপিকআপের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাইভেট কারে আগুন
পরবর্তী নিবন্ধকরোনা মহামারীতে দুস্থ মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রত্যয়