পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে জেলহত্যার ঘটনা। ১৯৭৫ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সেন্ট্রাল জেলে কারারুদ্ধ অবস্থায় মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতা ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ চার সহযোগীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই দিনটি জেলহত্যা দিবস নামে পরিচিত।
জেলহত্যার বর্বর নৃশংসতার শিকার জাতীয় চার নেতা হচ্ছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, মনসুর আলী ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে পাকিস্তানিদের হাতে শেখ মুজিবুর রহমানের বন্দি দশায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী এবং মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ছিলেন ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী। এঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে এঁদের ছিল বিশেষ অবদান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সামরিক বাহিনির একাংশের হাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হবার পর ক্ষমতায় আসেন খোন্দকার মোশতাক আহমদ।
৩ নভেম্বর রাতের অন্ধকারে সামরিক বাহিনির একটি দল জেলখানায় ঢুকে কারাবন্দী এই চারজন নেতাকে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। বাংলার ইতিহাসে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড একটি কালো অধ্যায় হয়ে রয়েছে। এর আগে ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল। ঐ দিন রাজশাহী জেলে পুলিশ নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করলে হানিফ শেখ, আনোয়ার হোসেন, সুখেন ভট্টাচার্য, দেলোয়ার হোসেন, সুধীন ধর, কম্পোরাম সিং ও বিজন সেন – এই সাতজন কমিউনিস্ট নেতা ও কর্মী শহীদ হন।